৩ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:৪১

ঢাকার বাইরে রোগী বাড়ছে

ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার কিছুটা বাড়লেও রাজধানীতে পরিস্থিতি ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে এ পরিস্থিতি আশ্বস্ত হওয়ার মতো নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, সংক্রমণের উচ্চহার যদি এক জায়গায় থাকে তাকে রোগত্ত্বাতিকভাবে স্থিতিশীল বলা যাবে না। রোগী বেশি হলে মনে করতে হবে, সংক্রমণ চলমান আছে।

আগস্ট থেকে নভেম্বর এই চার মাসেই ডেঙ্গুর ঝুঁকি রয়েছে বলে জানান তাঁরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ঢাকায় দিনে গড়ে এক হাজার ১০০-এর বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ঢাকার বাইরের হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার ৩০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে ১২ জন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছে।

হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ৭১১ জন। তাদের মধ্যে এক হাজার ৫৮১ জনই ঢাকার বাইরের। আর ঢাকায় এক হাজার ১৩০ জন।

ঢাকায় আক্রান্তের হার মোটামুটি স্থিতিশীল
গতকাল দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার মোটামুটি স্থিতিশীল, তবে ঢাকার বাইরে আক্রান্তের হার বাড়ছে।
রাজধানীতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ৪৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
এই হাসপাতালে রোগীদের জন্য শয্যা রয়েছে ৬০০টি।

তিনি বলেন, ‘কয়েকটি এলাকায় এখনো ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে অন্যতম যাত্রাবাড়ী, মুগদা, উত্তরা, জুরাইন ও মিরপুর। সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী যাত্রাবাড়ী এলাকায়।

বিভাগীয় পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, আক্রান্তের দিক থেকে ঢাকার পরেই চট্টগ্রামের অবস্থান।’

মারা যাওয়া ১২ জনই ঢাকার
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই ঢাকার। এ নিয়ে চলতি বছরে মৃত্যু হয়েছে ২৭৩ জনের। নতুন ভর্তি দুই হাজার ৭১১ জনকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫৭ হাজার ১২৭।
এর আগে সর্বোচ্চ ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল ২০২২ সালে। হাসপাতালে সর্বোচ্চ এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ভর্তি হয়েছিল ২০১৯ সালে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ হাজার ৩২৫ জন রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় চার হাজার ৮৬৯ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় চার হাজার ৪৫৬ জন।

এখনো আশঙ্কার দিনগুলো রয়ে গেছে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এডিস মশার ঘনত্ব, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত—এই কয়েকটি বিষয়কে সিমুলেশন মডেলের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে থাকি। সেখানে আমরা এখনো কোনো স্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখছি না। আমাদের কাছে মনে হয় এখনো আশঙ্কার দিনগুলো রয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার প্রকৃত রোগী কত সেটি কিন্তু কেউ জানি না। হাসপাতালে যারা ভর্তি হয় আমরা তাদের সংখ্যা বলতে পারি। আমাদের ধারণা, ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির যে সক্ষমতা সেটি বাড়েনি। তাই স্থিতিশীল মনে হতে পারে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্যবিদ বে-নজির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, রোগীর সংখ্যা যদি বেশি হয় এবং তা যদি স্থিতিশীলও হয় সেটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা। অর্থাৎ, বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হওয়া মানে ডেঙ্গুতে অনেক লোক আক্রান্তের ধারা এখনো চলমান। অনেক মানুষ যদি প্রতিদিন আক্রান্ত হয় তাহলে আশ্বস্ত হওয়ার সুযোগ নেই।’

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘যদি সংক্রমণের উচ্চহার এক জায়গায় থাকে সেটাকে রোগত্ত্বাতিকভাবে স্থিতিশীল বলা যাবে না। বর্তমানে ঢাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়। যদি কমে গিয়ে স্থিতিশীল থাকে সেটা স্থিতিশীল।’

তিনি বলেন, ‘আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর—এ চার মাসেই ঝুঁকি রয়েছে। যখন আমরা দেখব পর পর দুই সপ্তাহ ধরে কমে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে বলা যাবে সংক্রমণ কমেছে। তবে সে অবস্থা এখনো আসেনি।’

ডেঙ্গুর টিকার কার্যকারিতা কম, ব্যবস্থা হলে আনব
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘ডেঙ্গু টিকার কার্যকরিতা কম, টিকার যদি ব্যবস্থা হয়, আমরা সেটা অবশ্যই আনব এবং আমাদের জনগণকে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’ বুধবার রাজধানীর শাহবাগের মিন্টু রোডের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব কনভেনশন সেন্টারে ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস-২০২৩’ উপলক্ষে আলোচনাসভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গুতে নারীদের মৃত্যু বেশি। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে কর্মক্ষমদের অর্থাৎ ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের।

হাসপাতালে বেডের ঘাটতি নেই
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, হাসপাতালে বেডের কোনো ঘাটতি নেই। বেডের সংখ্যা আরো বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে তাগিদ দিচ্ছি, তারা যেন বেশি করে স্প্রে করে। যে ওষুধটা ব্যবহার করা হয়, সেটা যেন কার্যকর হয়।’
তিনি আরো বলেন, এখন ডেঙ্গু বাড়তি, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে এখানে ডেঙ্গু বাড়তি থাকবে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সবাই মিলেই কাজ করতে হবে।


https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/08/03/1304790