২ আগস্ট ২০২৩, বুধবার, ৫:২৮

চট্টগ্রাম ১০ উপনির্বাচন

প্রতি ভোটে কমিশনের খরচ ৮৭৪ টাকা

চট্টগ্রাম ১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৫৭ হাজার ১৫৩ জন। এই নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের খরচ হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতি ভোটের বিপরীতে খরচ হয়েছে ৮৭৪ টাকার কিছু বেশি। রোববার ইভিএম পদ্ধতিতে উপনির্বাচনে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে ৫২ হাজার ৯২৩ ভোট পেয়ে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে মাত্র ৩ মাস মেয়াদের জন্য এ আসনে উপনির্বাচন করতে হলো।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন অফিস সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-১০ আসনে ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৩ জন। সংসদ-সদস্য ডা. আফছারুল আমীনের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ৩০ জুলাই উপনির্বাচনের আয়োজন করা হয়। এতে নির্বাচন কমিশনের প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। এসব খরচের মধ্যে অর্ধেকের বেশি টাকা খরচ হয়েছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে। অন্যান্য খরচের মধ্যে রয়েছে-প্রশিক্ষণ ব্যয়, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ভাতা, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের ভাতা, জ্বালানি ও পরিবহণ ভাড়া, ভোটের ব্যবহৃত খুচরা উপকরণ ব্যয়, সিসি ক্যামেরা ও ইভিএম মেশিন স্থাপন ব্যয় এবং কারিগরি টিমের ভাতা। এই আসনে ১৫৬টি কেন্দ্রের ১ হাজার ২৫১টি বুথে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়। ভোটগ্রহণের জন্য ৪ হাজার ১০৬ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। এদের মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসার ১৬৪ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ১ হাজার ৩১৪ জন ও পোলিং অফিসার ছিলেন ২ হাজার ৬২৮ জন। ভাতা হিসাবে একজন প্রিসাইডিং অফিসারকে ৪ হাজার টাকা, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে ৩ হাজার ও পোলিং অফিসারকে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এই হিসাবে কর্মকর্তাদের পেছনে ব্যয় হয়েছে ৬৩ লাখ ৬ হাজার টাকা। প্রতি কেন্দ্রে ১২ জন করে ১ হাজার ৮৭২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। তাদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে ৯৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। খাওয়া-দাওয়াসহ তাদের পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। উপনির্বাচনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ১ হাজার ৭০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মধ্যে ১ হাজার ২৬১ জন ছিলেন পুলিশের নির্ধারিত পোশাকে, ১২২ জন ছিলেন সাদা পোশাকে। বাকিরা ছিলেন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়। তাদের জন্য সিএমপি থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। এছাড়া নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন র‌্যাব, বিজিবি ও এপিবিএন সদস্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনানুগ নির্দেশনা প্রদানের জন্য দায়িত্ব পালন করেন ৮ জন নির্বাহী ও ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। সিএমপির ডিসি সদর মোহাম্মদ আবদুল ওয়ারীশ বলেন, ‘উপনির্বাচনে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুলিশের প্রায় ১ হাজার ৭০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। সবাইকে পদ-পদবির ভিত্তিতে অর্ধেক টাকা ভাতা হিসাবে দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা পরে দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের কাছে ভাতার জন্য এক কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। এখনো সব টাকা পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম ১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য কমিশনের কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনের খরচটা শুরু হয় ঢাকা থেকে। সেখান থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন খাতের খরচগুলো পাঠানো হয়। প্রশিক্ষণ এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের খরচ শুধু আমাদের মাধ্যমে হয়। মোট খরচের অর্ধেকেরও বেশি হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে। তবে সব মিলিয়ে ঠিক কত টাকা খরচ হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি তিনি। নির্বাচন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর (পুলিশ-আনসার) পেছনে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ের সুনির্দিষ্ট হিসাব পাওয়া গেছে। এছাড়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি, র‌্যাব, এপিবিএন’র ভাতা এবং নির্বাচনি সরঞ্জাম ইভিএম, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, পরিবহণ খাতে আরও প্রায় ২ কোটি টাকার মতো খরচ হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

ভোটগ্রহণের জন্য সরকারি এই খরচের বাইরেও এই আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়। এই অঙ্ক ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা হবে বলে দলটির বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/702358