২৮ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ১:৪১

হাওরে কান্না জনপ্রতিনিধিরা পাশে নেই

আশ্বাসে সীমাবদ্ধ ত্রাণ কার্যক্রম

অতিবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে পাঁচ জেলার ফসলহারা কৃষকদের চোখে এখন শুধুই কান্না। অতিকষ্টে জন্মানো তাদের ধান তলিয়ে গেছে পানিতে। কেউ কেউ অকাল বন্যার শুরু থেকে আধা-পাকা ধান কেটেও নেন। সোনার ফসল ঘরে তোলার জন্য সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা অব্যাহত আছে এখনও। তবে এমন দুর্দিনে শীর্ষ দু’দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জনপ্রতিনিধিদের দৃশ্যত পাশে পাচ্ছেন না সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও নাটোরের এ মানুষগুলো। দুর্গতদের অভিযোগ- আওয়ামী লীগ-বিএনপির জনপ্রতিনিধি তথা বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা শুধু সাহায্যের আশ্বাসই দিচ্ছেন, বাস্তবে তারা দলের পক্ষ থেকে কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগের কোনো সাহায্য পাচ্ছেন না। সরকারি বরাদ্দ বিতরণের সময় শুধু ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন ফটো সেশনের জন্য। সরেজমিন পরিদর্শনকালে দুর্গত মানুষজন আরও জানান, তাদের জন্য বরাদ্দ সরকারি ত্রাণ শুরু থেকে খুবই অপ্রতুল। ভোরে ন্যায্যমূলের চাল বিক্রির দোকানে দাঁড়িয়ে থেকেও মিলছে না চাল-আটা। তবুও একটু সাহায্যের আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন তারা। তাদের ভাষায়, ক্ষতির বিপরীতে সরকারি সাহায্য যতটুকু দরকার, তা না দিলে তাদের আগামী দিনগুলো অবর্ণনীয় কষ্টে কাটবে, থাকতে হবে না খেয়ে। এপ্রিলের শুরু থেকে অতিবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢল শুরু হয়। পানিতে তলিয়ে যায় লাখ লাখ হেক্টর জমির ফসল। চলমান এ অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সময় দুর্গত মানুষের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও সংবাদ সম্মেলন করে বড় দু’দল। উদ্বিগ্ন নাগরিকদের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করেও হাওরের বিপর্যয়কে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণার দাবি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, বাঁধ নির্মাণে জড়িত দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেয়ারও দাবি জানান উদ্বিগ্ন নাগরিকরা। এদিকে কিশোরগঞ্জের স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেকেই ত্রাণমন্ত্রীর কাছে হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি করেন। যদিও মন্ত্রী এ পরিস্থিতি হয়নি উল্লেখ করে ব্যাপারটি পাশ কাটিয়ে যান। বিপর্যস্ত এসব এলাকার বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত থাকছে যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে-
কিশোরগঞ্জ : অতিবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে নজিরবিহীন বোরো ফসলহানির ঘটনা নিয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। তবে তাদের এ তৎপরতা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। বাস্তবে সাহায্যে এগিয়ে আসছেন না তারা। বিএনপি বলছে, এটি ‘মনুষ্য সৃষ্ট’ বিপর্যয়। বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতিই এর প্রধান কারণ। ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় সরকারি সাহায্যও এত অপ্রতুল যে, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এ জেলায় ৫৭ হাজার ৮৮৭ হেক্টর বোরো ফসল পানিতে ডুবে বিনষ্ট হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে কথা হলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান দাবি করেন, তারা বুধবার থেকে হাওর উপজেলা ইটনা থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সাংগঠনিকভাবে তাদের ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছেন। আপনারা কী দিলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরাও কিছু দিয়েছি।
জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল ইসলাম দাবি করেন, বৃহস্পতিবার ইটনা থেকে তাদের আনুষ্ঠানিক ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়েছে। তারা কয়েকশ’ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের মধ্যে চাল-ডাল বিতরণ করেন। জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম এবং নিকলীসহ তাড়াইল, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর ও ভৈরব উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল পানিতে তলিয়ে যায়।
নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ জানান, প্রকৃতপক্ষে নিকলীতে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর বোরো আবাদের ৯০ ভাগই পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়েছে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত মাত্র ২ হাজার ৮০০ ভিজিএফ কার্ড ও ২০ টন খয়রাতি চালের বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা খুবই অপ্রতুল। কুর্শ্বা গ্রামের চাষী ইছামউদ্দিন জানান, তিনি পাশের অচির হাওরে ২ একর জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন। তার পুরো ক্ষেতের ফসলই পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়েছে। মহাজনী সুদ নিয়ে তিনি বোরো চাষ করেছিলেন। এখন পরিবার নিয়ে তিনি পথে বসেছেন। একই কথা বলেন পাচরুখী গ্রামের চাষী আলী হোসেন। তারা জানালেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো সাহায্য পাননি। এমনকি তাদের খোঁজ-খবর পর্যন্তও কেউ নিতে আসেননি। তাদের বাড়িঘরের আশপাশেরও কেউ এমন সাহায্য পাননি বলেও জানিয়েছেন তারা।
নেত্রকোনা : জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় লাখ খানেক পরিবার। তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার ইতিমধ্যে খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ এবং মদনে চাল ও আটা খোলা বাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম চালু করেছে। আগে প্রতি উপজেলায় তিনজন করে বিক্রি করতেন, এখন বাড়ানো হয়েছে তিনজন। সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নেত্রকোনা সফরের পর সাহায্যের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। কিছু ভিজিএফ ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তুলনায় তা একেবারই অপ্রতুল।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে চাল ও আটা বিক্রির জন্য নতুন ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। তারা বৃহস্পতিবার থেকে বিক্রি শুরু করেছেন।
ওএমএসে চাল নিতে আসা মোহনগঞ্জের মাঘান গ্রামের জুলেখা আক্তার খাতুন বলেন, ‘সারাটা দিন বইসা থাইক্যাও চাউল পাই নাই। ডিলাররা পরিচিত লোকজন দেখেই চাউল দেয়। আমরার গরিবরার কোন দাম নাই। আমাদের কথা কেউ শোনে না।’ খালিয়াজুরী গ্রামের সচ্ছল গৃহস্থ শফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘আমার এমনিতে ৮০০ থেকে ১০০০ মণ ধান হয়। এবারের বন্যায় আমার সব নিয়া গেছে। সারা দিন দাঁড়াইয়া থাইক্যা ৫ কেজি চাউল আনছি। কি আর করণ যাইব।’
খালিয়াজুরী উপজেলায় ওএমএস কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, চাল ও আটার ক্রেতার সংখ্যা বেশি অথচ চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম।
খালিয়াজুরী সদর ইউপি চেয়ারম্যান সানোয়ারুজ্জামান যোসেফ বলেন, উপজেলা সদরে তিনজন ডিলারের মাধ্যমে ওএমএসের চাল দেয়া হচ্ছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য। তবে সাহায্যের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের তৎপরতা চোখে পড়েনি।
হবিগঞ্জ : ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের খবর নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা মাঝেমধ্যে বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করছেন। তবে মাঠে নেই বিএনপি নেতাকর্মীরা। যদিও দৃশ্যত কোনো সাহায্যে এগিয়ে আসছেন না কোনো দলের নেতাকর্মীই। সাহায্যের আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থাকছেন তারা। তবে অপ্রতুল হলেও সরকারিভাবে বিতরণ করা হচ্ছে ত্রাণ। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির বলেন, সরকারের তরফ থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। দলীয়ভাবেও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।
বিএনপির এক নেতা জানান, জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মো. ফয়ছল অসুস্থ থাকায় তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। আর সাধারণ সম্পাদক জিকে গউছ দীর্ঘদিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে ওমরাহ পালনে সৌদি আরবে আছেন। এ অবস্থায় আর কেউ দলের হাল ধরেননি। আর সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে বাস্তবে দলের কার্যক্রমও তেমন একটা হয় না।
সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বানিয়াচং উপজেলার উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নে ৩ টন ১৮০ কেজি, সুবিদপুরে ৪ টন ৬১০ কেজি এবং সুজাতপুরে ৬ টন চাল কৃষকদের মাঝে জনপ্রতি ২০ কেজি করে বিতরণ করা হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ থেকে এ চাল বিতরণ করা হয়।
এদিন চাল পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন সুজাতপুর ইউনিয়নের ইকরাম গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন ও খায়রুল মিয়া। আলাউদ্দিন জানান, তার বেশিরভাগ জমির ধান এখন পানির নিচে। বিএনপির কোনো নেতা তাদের এখনও খবর নেননি। খায়রুল জানান, তার সবটুকু জমির ফসল নষ্ট হয়েছে পানিতে। তবে তারা সরকারি যে বরাদ্দ পাচ্ছেন তা খুবই অপ্রতুল। বেসরকারি সাহায্য তো পাচ্ছেনই না।
সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর : লোক দেখানো কিছু কর্মকাণ্ড ছাড়া কোথাও ফসলহারা কৃষকের পাশে দেখা যায়নি জনপ্রতিনিধিদের। সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমিন্ত্রী এমএ মান্নান তার দাফতরিক কাজের ব্যস্ততা এবং বিদেশে কর্মসূচি থাকায় বর্তমানে এলাকায় তেমন একটা সময় দিতে পারছেন না। সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ৫ দিনের সফরে বর্তমানে শ্রীলংকা রয়েছেন। এলাকাবাসীর কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাওরে দুর্যোগের আগে ও পরে তিনি এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। তবে দুর্যোগের এ সময়ে বিদেশ সফরে সন্তুষ্ট নন দুর্দশাগ্রস্ত কৃষকরা। সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক দুর্যোগকালীন মুহূর্তে তার নিজ সংসদীয় আসনেই আছেন। তিনি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাহায্য-সহায়তা দিতে তৎপর রয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
স্থায়ীভাবে ঢাকায় অবস্থানের কারণে কৃষকদের দুর্দিনে সার্বক্ষণিক সময় দিতে পারছেন না সুনামগঞ্জ-২ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ড. জয়াসেন গুপ্তা। বৃহস্পতিবার তিনি জানান, ৫ দিন পর ঢাকা থেকে তিনি তার নিজ এলাকায় এসেছেন। এলাকার প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ভিজিএফ সহায়তা পেয়েছেন কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি এই মাত্র দিরাই এসেছি। সবকিছু জেনে আগামীকাল আপনাকে অবহিত করতে পারব।’
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ শুরু থেকে কৃষকদের পাশে রয়েছেন। ২৮ মার্চ থেকে হাওরে বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়ার পর থেকে তিনি সুনামগঞ্জে অবস্থান করছেন। পীর মিসবাহ বলেন, বরাদ্দ সাহায্য এ অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তুলনায় অপ্রতুল।
সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুন্নাহার বেগম শাহানা সুনামগঞ্জবাসীর দুর্যোগে সাহায্যে সাধ্যমতো তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সম্পাদকের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় সাংগঠনিকভাবে হাওরের মানুষের দুর্দিনে পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি তাদের। জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ইনামুল কবির ইমন বলেন, আমি দুর্গত মানুষের পাশে থাকতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি। তবে পেশাগত কারণে ইমন ঢাকায় অবস্থান করায় সার্বক্ষণিক এলাকায় সময় দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় নেতাকর্মীদের।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতিউর রহমান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় অবস্থান করলেও দলীয় নেতাকর্মীদের কৃষকদের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছি। নিজেদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শেরেনূর আলী যুগান্তরকে বলেন, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে দলের এমন পরিণতি। সুনামগঞ্জের এরকম মহাদুর্যোগে কৃষকের পাশে তাদের দাঁড়ানো উচিত ছিল।
এদিকে জগন্নাথপুর গ্রামের ৯০ বছর বয়সী গুলেস্তা বিবি বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলা সদরের ন্যায্য মূল্যের চাল বিক্রির দোকানে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৫ কেজি চালের জন্য। বহু ধাক্কা সামলিয়ে বেলা ৩টায় চাল পান। বৃষ্টি উপেক্ষা করে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন শত শত নারী-পুরুষ। বৃদ্ধা সুমতি বিবি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বহুত দুরথাকি কষ্ট কইরা আইয়া চাউল পাইলাম না। ডিলার বেটায় কয় চাউল নাই।’ উপজেলা সদরের ১৫ টাকা কেজি চালের ডিলার কানু রায় বলেন, আমাদের প্রতিদিন এক টন চাল ও এক টন আটা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মধ্যরাত থেকে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রতিদিন হাজারের ওপর দুস্থ নারী-পুরুষ লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু সবাইকে চাল দেয়া সম্ভব হয় না।
নাটোর : অতিবর্ষণ ও ঢলের পানিতে চলনবিলসহ বিভিন্ন নিন্ম এলাকায় হাজার হাজার বিঘা ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাহায্যের কথা বললেও দৃশ্যত সাহায্য করছে না আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়ার বিশাল এলাকা। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ঢাকা থেকে এ ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছেন। বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ বলেছেন, তিনি ক্ষতিগ্রস্ত সবক’টি ইউনিয়নের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে তদের তথ্য সংগ্রহ করছেন। নাটোর-নলডাঙ্গা এলাকার হালতির বিলে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিন্মাঞ্চলের শত শত বিঘা জমি পানিমগ্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল জানান, গত ৪ দিন ধরে তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি জানার চেষ্টা করেছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু জানান, তিনি তার নির্বাচনী এলাকার দুটি উপজেলার সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে থেকে সার্বিক সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন। গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক মো. আবদুল কুদ্দুস জানান, ৩ দিন ধরে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পরিদর্শন করছেন।

 

http://www.jugantor.com/first-page/2017/04/28/120719/