২৮ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার, ৬:৩৭

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে

বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে। গত জুন শেষে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আগের মাস শেষে যা ১১ দশমিক ১০ শতাংশ ছিল। আর গত বছরের জুন শেষে ছিল ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বেসরকারি খাতে অভ্যন্তরীণ ঋণে শুধু প্রবৃদ্ধি কমলেও বিদেশি ঋণ সরাসরি কমে যাচ্ছে। মূলত বিনিয়োগ চাহিদা, ঋণযোগ্য তহবিল কমাসহ বিভিন্ন কারণে এমন হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। আগের বছরের জুন শেষে যা ছিল ১৩ লাখ ৫১ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। ঋণস্থিতির হিসাব হয় সুদসহ। ফলে নিট ঋণ যে এত বেড়েছে তা নয়। বেসরকারি খাতে পরিস্থিতি এ রকম হলেও সরকারের ঋণ বাড়ছে দ্রুত। ২০২২-২৩ অর্থবছর ব্যাংক থেকে সরকার প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। আগের অর্থবছর নিয়েছিল ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ ঋণে প্রবৃদ্ধি থাকলেও কমে যাচ্ছে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ। গত মে শেষে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমে ১ হাজার ৪০৮ কোটি ডলারে নেমেছে। গত বছরের জুন শেষে যা ছিল ১ হাজার ৭৭৬ কোটি ডলার। এর মানে ১১ মাসে কমেছে ৩৬৭ কোটি ডলার বা ২৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এর আগে প্রায় প্রতি বছর ঋণ একটু করে বাড়ছিল। বিশেষ করে করোনার মধ্যে ব্যাপক বেড়ে যায়। ২০২০ সাল শেষে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ ছিল ৯১৩ কোটি ডলার। এক বছরে ৬৩৩ কোটি ডলার বা ৬৯ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে ২০২১ সাল শেষে হয় ১ হাজার ৫৪৬ কোটি ডলার। বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণের বাইরে গত মার্চ পর্যন্ত মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি ঋণ রয়েছে আরও ৮১০ কোটি ডলার। মূলত সুদ অনেক বেড়ে যাওয়া এবং নতুন ঋণ পাওয়া দুরূহ হওয়ায় বিদেশি ঋণ কমছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ডলারের ওপর চাপ কমাতে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। আবার রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ছে। সরকারের বিদেশি ঋণ বেড়ে গত মার্চ পর্যন্ত ৭৩ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এরপরও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ না কমার প্রধান কারণ স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমে যাওয়া। বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিদেশি ঋণে উৎসাহিত করলেও সুবিধামতো মিলছে না। বাজার সামলাতে গত অর্থবছর রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের অর্থবছর বিক্রি করা হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে বাজার থেকে প্রচুর উঠে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। ফলে ঋণযোগ্য তহবিল কমছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্ধতিগত কারণে বাজার থেকে টাকা উঠে যাওয়া এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আমানত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে খুব কম। এর মধ্যে বেনামি ঋণসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে রেখেছেন। এতে করে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটিসহ আটটি ব্যাংক অনেক দিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে পারছে না। জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে পারছে না কোনো কোনো ব্যাংক। এসব কারণে বেশির ভাগ পণ্যের দর বাড়লেও ঋণ সেভাবে বাড়ছে না।

https://samakal.com/economics/article/2307186068