২৭ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৬:১৫

শিশু হাসপাতালে ২৬ দিনে ৩০০ রোগী

খালি নেই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের শয্যা। রোগীর চাপ বাড়ায় বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সাধারণ ওয়ার্ডে চলছে ডেঙ্গু চিকিৎসা। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্স। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে আসছেন স্বজনরা। হাসপাতালটিতে বর্তমানে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৮৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে। গত ৭ মাসে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৯৯ জন। এরমধ্যে ৭ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত রোগীদের বয়স ৬ মাস থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত। তবে ৫ থেকে ১০ বছরের আক্রান্ত শিশুরা বেশি এসেছে।

গতকাল সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে ছোটাছুটি করছেন স্বজনরা।

হাসপাতালজুড়ে শিশুদের চিৎকার। শিশুদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য দিকবিদিক ছুটছেন স্বজনরা। ওয়ার্ডে ভর্তি শিশুদের মলিন মুখ ও স্বজনদের ক্লান্তির ছাপ। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা। ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড ছাড়াও অন্যান্য ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে শূন্য, মার্চে ১ জন, এপ্রিলে ১১ জন, মে মাসে ১৫ জন, জুনে ৬৩ জন, জুলাই মাসে ৩০০ জন। এরমধ্যে ১ বছরের কম বয়সী রোগী ভর্তি ছিল ৫৪ জন, ১ থেকে ৫ বছরের ১২৯ জন, ৫ থেকে ১০ বছরের ১৩৮ জন, ১০ বছরের উপরে ৭৮ জন। তারমধ্যে ১৪৯ জন ছেলে ও ২৫০ জন মেয়ে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৪৫ নম্বর বেডে ভর্তি ৯ বছরের শিশু আরচিতা চক্রবর্তী। তার মা প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তী বলেন, রোববার থেকে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। ছেলের শুক্রবার থেকে জ্বর ছিল। এখানে ডাক্তার দেখাতে এসে টেস্ট করিয়ে ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। তখন ডাক্তার ভর্তি করাতে বলেন। পুরান ঢাকায় আমাদের বাসা। ৬ তলার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকি। কিন্তু সেই বাসায় খুব একটা মশা টের পাই না।

এদিকে একই ওয়ার্ডের ১০ নম্বর বেডে ভর্তি ৯ বছরের শিশু আল আমিন। পাশেই বসে আছেন তার মা আলেয়া বেগম। তিনি বলেন, আগারগাঁওয়ের তালতলা আমাদের বাসা। শুক্রবার রাত থেকে ছেলের অনেক জ্বর। রোববার হাসপাতালে নিয়ে আসি এবং ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। অনেক বেশি জ্বর ছিল ওর। চোখ-মুখ কালো হয়ে যাচ্ছিলো। খাবারে অরুচি ছিল। এখন মোটামুটি সুস্থ হয়েছে।
ঢাকার টেকনিক্যাল থেকে ৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রুবিনা আক্তার। তার স্বামী ও সে একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। বাসায় রেখে যান ছেলেকে। তারা টিনশেডের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। রুবিনা বলেন, আমরা সারাদিন বাসায় থাকি না। শুক্রবার থেকে ছেলের অনেক জ্বর। এরপর পরীক্ষা করানো হলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। দিনে-রাতে চারপাশে মশা। মশারি ছাড়া ঘুমানো যায় না। চারপাশে পানি জমে থাকে। ছেলের অসুস্থতা নিয়ে খুব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অল্প বেতনের চাকরি করি আমরা।

তার অসুস্থতার পর থেকে পরীক্ষা করাতে করাতে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম মানবজমিনকে বলেন, চলতি বছরের গত দুই মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে ৩০০ জনই শুধু জুলাই মাসে ভর্তি হয়েছে। আমাদের এখানে বিছানার খুবই সংকট। অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। ৮৯ জন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেয়া খুবই কঠিন। তারপরও আমাদের চিকিৎসক-নার্সসহ সবাই কিন্তু বেশ তৎপর রয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য আমাদের স্পেশাল ডেডিকেটেড চিকিৎসক বাড়ানো হয়েছে। সবধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত সিরিয়াস রোগীদের জন্য দু-একটি স্পেশাল শয্যা সবসময় খালি রাখতে বলা হয়েছে। কোনো সিরিয়াস ডেঙ্গু রোগী আসলে যেন তাদের ফিরে যেতে না হয়।

আগামী দিনগুলোতে ভয়াবহ পরিস্থিতি যদি তৈরি হয় আমরা আরও শয্যা ডেডিকেটেড করে দিবো। এখন ৪০টি শয্যা আছে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য। সেটি পরিপূর্ণ, অন্যান্য ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এই হাসপাতালে নরমাল যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু রয়েছে তাদের ভর্তি দেয়া হচ্ছে না কারণ তাদের বাসায় রেখেই সুস্থ করা সম্ভব। যে সকল বাচ্চাগুলো ডেঙ্গু পজিটিভ যাদের ডেঙ্গু ওয়ানিং সাইন আছে সেগুলো শুধু আমরা ভর্তি করছি এবং যারা শকে চলে যায় তাদের ইমিডিয়েটলি ভর্তি করি। নরমাল ক্লাসিক্যাল রোগীদের পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় এবং তাদের বলে দেয়া হয় প্রচ- পেটে ব্যথা, বমি করা, শরীরে রক্তক্ষরণ হওয়া, প্রেশার কমে যাওয়া, হাত-পা ঠা-া হওয়া, পালস কমে যাওয়াসহ এসব সিনড্রোম দেখলে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত যেন হাসপাতালে নিয়ে আসে।

https://mzamin.com/news.php?news=66653