২৬ জুলাই ২০২৩, বুধবার, ১২:৫৭

৬১% রোগীর মৃত্যু তিন হাসপাতালে

দেশে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর প্রায় ৬০ শতাংশ ঢাকার বাসিন্দা। এসব রোগীর মধ্যে ৪০ শতাংশ তিনটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।

হাসপাতাল তিনটি হচ্ছে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে মৃত্যুর হার ঢাকায় মোট মৃত্যুর ৬১ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৬ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪ জন এবং ঢাকার বাইরে দুজন। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় ডেঙ্গুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মারা গেছেন।

গতকাল সকালে আরো মারা গেছেন আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দা সাদিয়া ইয়াসমিন রাইসা। এ ছাড়া রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সহকারী পরিচালক মারা গেছেন।

জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এস এম নাজিয়া সুলতানা ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। নাজিয়া আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুই দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ৩০তম বিসিএস ব্যাচের এই কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও উইংয়ে কর্মরত ছিলেন।

গত রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পাবলিক অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টের সহকারী পরিচালক কান্তা বিশ্বাস পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২০১ জন। চলতি মাসে মৃত্যু হয়েছে ১৫৪ জনের।

গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ৪১৮ জন। চলতি বছর এক দিনে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এটাই সর্বাধিক। এর মধ্যে ঢাকায় এক হাজার ১৬২ জন এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ২৫৬ জন ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে রোগীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ৬৮৮ জনে পৌঁছাল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে চার হাজার ৬৪৬ জন। ঢাকার বাইরে তিন হাজার ২৮২ জন। এ নিয়ে ঢাকায় রোগী ২২ হাজার ৩৪৯ জন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় ১৫ হাজার ৩৩৯ জন, যা মোট রোগীর ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে

বেশি আক্রান্ত চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে।
তিন হাসপাতালে ৪০% রোগীর চিকিৎসা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৬২ জন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ২২ হাজার ৩৪৯ জন। এর মধ্যে ঢাকার সরকারি তিন হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছে আট হাজার ৯৫৩ জন। মৃত্যু ৯৯ জনের। অন্য ১৩ হাজার ৩৯৬ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে বাকি ৭১টি হাসপাতালে। মৃত্যু ৬৩ জনের। বাকি হাসাপাতালগুলোর মধ্যে সরকারি ১৭টি ও বেসরকারি ৫৪টি।

ঢাকায় সবচেয়ে বেশি পাঁচ হাজার ১০২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালে এ পর্যন্ত মারা গেছে সর্বাধিক ৪৮ জন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে দুই হাজার ৬২ জন, মারা গেছে ৩৫ জন। মিটফোর্ড হাসপাতালে এক হাজার ৮৭৯ জন, মারা গেছে ১৬ জন।

সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৬৬ জন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ৭২ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৯৫ জন। এ ছাড়া ডিএনসিসি হাসপাতালে ৭১ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫৫ জন এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৪৭ জন ভর্তি হয়েছে।

কোথাও ঠাঁই নেই, কোথাও শয্যা ফাঁকা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ডেঙ্গুর যে জায়গায় হটস্পট, রোগীরা সাধারণত তার নিকটবর্তী হাসপাতালে যাচ্ছে। এ জন্য কোথাও রোগী অনেক বেশি, আবার কোথাও শয্যা ফাঁকা।

তিনি বলেন, ‘মুগদা হাসপাতালে করিডর ভরে এখন জায়গা হচ্ছে না, অথচ আমাদের অন্যান্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও শয্যা অনেক খালি রয়েছে। যেমন ডিএনসিসি হাসপাতালে মাত্র ২৯০ জন রোগী ভর্তি। এখনো ৫০০টি শয্যা সেখানে ফাঁকা। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেও শয্যা ফাঁকা আছে।’

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীরা বেশির ভাগ চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। কভিডের সময় সেটি কিন্তু ছিল না। তখন রোগীকে অনেক বেশি সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হতো। এ কারণে আমাদের কোনো সংকট নেই।’

অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ঢাকার বাইরে যে যেখানে আক্রান্ত হচ্ছে, সেখানেই চিকিৎসা নেবে। প্রতিটি হাসপাতালে একই গাইডলাইনের আলোকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সবাই যদি ঢাকামুখী হয়, তাহলে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে।

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কারিগরি সক্ষমতায় ঘাটতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘আমরা গত ২৩ বছরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। ঢাকা মহানগর থেকে এখন সেটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এখন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা আরো কঠিন হবে। এতে ঢাকার বাইরে আরো রোগী বাড়বে। এ জন্য এখন প্রয়োজন প্রথমে উপজেলা হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়ানো।’

তিনি বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হলো কীটতাত্ত্বিক যে সক্ষমতা প্রয়োজন, সেটি হয়নি। সিটি করপোরেশন নানা উদ্যোগ নিচ্ছে, কিন্তু কার্যকর হচ্ছে না। এতে অর্থের অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে হাসপাতালে রোগী বাড়ছে, মানুষ মারা যাচ্ছে। এ জন্য প্রথমে প্রয়োজন কীটতাত্ত্বিক সক্ষমতা বাড়ানো। এর সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/07/26/1302375