২৮ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ১:২৮

চতুর্মুখী জটিলতায় ফোরজি সেবা

চতুর্মুখী জটিলতায় ফোরজি সেবা চালু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমনকি চলতি বছরও চতুর্থ প্রজন্মের এ মোবাইল টেলিযোগাযোগ সেবা চালু সম্ভব না হওয়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ফোরজি সেবার গাইডলাইন চূড়ান্ত করলেও এর একাধিক শর্তের বিষয়ে লিখিত আপত্তি জানিয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব। গাইডলাইন চূড়ান্ত করার আগে মতামত না নেওয়ারও অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।

অ্যামটব মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবীর স্বাক্ষরিত ওই আপত্তিপত্র গত সপ্তাহে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে জমা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে নুরুল কবীর সমকালকে বলেন, বিটিআরসি ওই গাইডলাইন তৈরির আগে আমাদের মতামত নেয়নি। এমনকি শর্ত চূড়ান্ত করার পরও তা অপারেটরদের জানায়নি। গাইডলাইনের কিছু শর্ত বাস্তবসম্মত নয় দাবি করে তিনি বলেন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফোরজি সেবা চালু করা সম্ভব হবে না। অবশ্য এ ব্যাপারে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন পর্যায়ে অপারেটরদের মতামত নেওয়া হয়েছে। তবে আবেদন ফি ও বার্ষিক লাইসেন্স ফি নির্ধারণসহ এ ধরনের নির্ধারকের ক্ষেত্রে বিটিআরসি বাস্তব অবস্থা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়। আগেও যেভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এবারও তা-ই করা হয়েছে। চেয়ারম্যান জানান, গাইডলাইনটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। সেখানে অনুমোদিত হলেই ফোরজি সেবার জন্য বেতার তরঙ্গ নিলামের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তিনি বলেন, এ বছরের মধ্যেই ফোরজি সেবা

চালুর লক্ষ্যে কাজ করছে বিটিআরসি।

গাইডলাইনের তিন শর্ত নিয়ে জটিলতা :বিটিআরসি ও অ্যামটব সূত্র জানায়, মূলত বিটিআরসির গাইডলাইনের তিনটি শর্ত নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। একটি শর্তে বলা হয়, ফোরজি সেবার জন্য অপারেটররা তাদের বার্ষিক মোট আয়ের শতকরা ১৫ ভাগ সরকারকে কর হিসেবে দেবে। এ শর্তের বিষয়ে অ্যামটবের আপত্তিপত্রে বলা হয়, বর্তমানে টুজি ও থ্রিজি সেবার জন্য অপারেটররা বার্ষিক আয়ের সাড়ে পাঁচ শতাংশ কর দিচ্ছে। ফোরজির ক্ষেত্রে এটি ১৫ শতাংশ করা হলে তা কোনোভাবেই ব্যবসাবান্ধব হবে না। ফোরজির বেতার তরঙ্গ নিলামের ক্ষেত্রে প্রতি মেগাহার্টজের জন্য ২০০ কোটি টাকা (২৫ মিলিয়ন ডলার) প্রস্তাব করেছে বিটিআরসি। এ ক্ষেত্রে অ্যামটব বলছে, থ্রিজি নিলামের সময় প্রতি মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গের দাম ২০ মিলিয়ন ডলার এবং পরে নিলামের সময় একক ইউনিট হিসেবে আরও এক মিলিয়ন ডলার নূ্যনতম যোগ করার শর্ত রাখা হয়। ফলে প্রতি মেগাহার্টজে সব মিলিয়ে ২১ মিলিয়ন ডলার বা ১৬৮ কোটি টাকা দিতে হয় অপারেটরদের। এ মূল্যের সঙ্গে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার সুবিধা দিতে প্রতি মেগাহার্টজে আরও প্রায় ৪০ কোটি টাকা বাড়তি নেওয়ার বিষয়টি অযৌক্তিক। আপত্তিপত্রে বলা হয়, বেতার তরঙ্গের উচ্চমূল্য নির্ধারণের কারণে এখন পর্যন্ত ১৪৮ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গ অবিক্রীত রয়ে গেছে। এই উচ্চমূল্য সাধারণ গ্রাহকদের সাশ্রয়ী সেবা প্রদান বাধাগ্রস্ত করছে, তেমনি সরকারকেও বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে।

গাইডলাইনে ৭০০ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গকে ফোরজি সেবার জন্য নির্ধারিত রাখা হয়েছে। বেতার তরঙ্গ নিলামের পর প্রযুক্তি নিরপেক্ষ নীতি চালুর বিষয়টি বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। অ্যামটবের আপত্তিপত্রে বলা হয়, বর্তমান প্রযুক্তিগত বাজার বাস্তবতার বিবেচনায় এ তরঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যকর এবং সাশ্রয়ী মূল্যে ফোরজি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। এর বিপরীতে ফোরজি সেবায় বেতার তরঙ্গ ব্যবহারে প্রযুক্তি নিরপেক্ষ নীতি চালুর প্রস্তাব দিয়েছে অ্যামটব। এ ব্যাপারে অ্যামটব মহাসচিব সমকালকে বলেন, বেতার তরঙ্গ ব্যবহারে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা না থাকার কারণে দেশে মানসম্পন্ন থ্রিজি সেবা নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকও পাওয়া যায়নি। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা ছাড়া ফোরজি সেবার সাধারণ মানও নিশ্চিত করা যাবে না।

অপারেটরদের বিপরীতমুখী অবস্থান :সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফোরজি সেবার জন্য বেতার তরঙ্গ ব্যবহারে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা চালু নিয়ে তিন বড় মোবাইল ফোন অপারেটর বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে দুটি অপারেটরের কাছে টুজি ও থ্রিজি মিলিয়ে ৩০ মেগাহার্টজের বেশি বেতার তরঙ্গ রয়েছে। অন্য অপারেটরের ২৫ মেগাহার্টজের কম বেতার তরঙ্গ রয়েছে। বেশি থাকা অপারেটররা ফোরজির বেতার তরঙ্গ নিলামের আগেই প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা চায়। কারণ, প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা পেলে নতুন করে বেতার তরঙ্গ ক্রয় ছাড়াই তারা ফোরজি সেবা লাভজনকভাবে চালু করতে পারবে।

অন্যদিকে, এভাবে ফোরজি সেবা চালু হলে কম বেতার তরঙ্গ থাকা অপারেটররা শুরুতেই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে। বড় অপারেটরদের এই বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে বিটিআরসির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াও প্রভাবিত হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।

নতুন অপারেটর আনতে চায় বিটিআরসি :বিদ্যমান অপারেটরদের পাশাপাশি ফোরজি সেবায় নতুন অপারেটর আনার পথও উন্মুক্ত রেখেছে বিটিআরসি। সংস্থার ২০৩তম কমিশন সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ফোরজি সেবার জন্য বর্তমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে পাঁচটি লাইসেন্স ইস্যু করা হবে। এর বাইরে সব শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নতুন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলেও ফোরজি লাইসেন্স ইস্যু করা হবে। এ লাইসেন্সের মেয়াদ হবে ১৫ বছর। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফোরজি লাইসেন্সের জন্য আবেদন ফি পাঁচ লাখ টাকা, বার্ষিক লাইসেন্স ফি সাড়ে সাত কোটি টাকা এবং ১৫০ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হবে। এ ছাড়া মোট আয়ের এক শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে দিতে হবে।

http://bangla.samakal.net/2017/04/28/288614#sthash.LIxTNcYt.dpuf