২৬ জুলাই ২০২৩, বুধবার, ১২:৩৪

বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণমান নেতিবাচক

আগে স্থিতিশীল ছিল, আগামী বছর ঋণমান আরও কমতে পারে

বাংলাদেশের ঋণমান কমাল আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। সংস্থাটির মতে ঋণমানে বাংলাদেশ এতদিন স্থিতিশীল ছিল। এখন সংস্থাটি ঋণমান কমিয়ে ‘নেতিবাচক’ করেছে। একই সঙ্গে দেশের সার্বভৌম বা সভরেন ঋণমান দীর্ঘমেয়াদে ‘বিবি মাইনাস’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘বি’ নিশ্চিত করেছে।

বৈদেশিক মুদ্রায় স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধে সরকারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ অবস্থা আগামী বছর আরও খারাপ হতে পারে। এছাড়া দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেশ চাপের মুখে রয়েছে। এই দুই কারণে সংস্থাটি বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে।
মঙ্গলবার ঋণমান যাচাইকারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল তাদের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণমানের পূর্বাভাসবিষয়ক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। এসঅ্যান্ডপি একটি বৈশ্বিক ঋণমাণের পূর্বাভাস বা রেটিং আউটলুক প্রকাশকারী সংস্থা।
এর আগে ৩১ মে অপর আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডিসও বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিকমানের দুটি সংস্থা ঋণমান কমিয়ে দেওয়ার কারণে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সমস্যায় পড়বে। ঋণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বেশি হারে সুদ দিতে হবে। একই সঙ্গে এর বিপরীতে বাড়তি চার্জ দিতে হবে। ফলে বৈদেশিক ঋণের খরচ বাড়বে। কেননা, আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো দেশ বা কোনো উদ্যোক্তাকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দিতে গেলে ওইসব আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী সংস্থাগুলোর রেটিংকে বিবেচনায় নেয়। রেটিংয়ের মান খারাপ হলে তারা ঋণ দিতে উৎসাহী হয় না। আগে বাংলাদেশের ঋণমান সন্তোষজনক ছিল। এখন পরপর দুটি সংস্থা ঋণমান কমিয়ে দিল।

এর আগে বাংলাদেশ ও দেশের উদ্যোক্তারা কম সুদে বিভিন্ন দেশ থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে ঋণের স্থিতি রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ঋণও রয়েছে। সব মিলে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ এখন সাড়ে ৯ হাজার কোটি ডলার।

সূত্র জানায়, গত দেড় বছর ধরে বাংলাদেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বাড়লেও এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডলারের দাম বৃদ্ধি ও রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণেই এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মনে করছে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে আগামীতে সরকারকে আরও চাপে পড়তে হবে।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ৩ বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৬ থেকে ৬ দশমিক ৪ শতাংশের মতো। তাদের মতে সদ্য বিদায়ি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আইএমএফ বলেছে গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশের বেশি হবে না। বিশ্বব্যাংক মনে করে প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশ সরকার আমদানি করা জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর বাংলাদেশে ডলারের দাম বেড়ে যায়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারেও পণ্যের দাম বাড়ে। এসব কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। আমদানি ব্যয়ের বাড়তি চাপ মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রার এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল সতর্ক করে বলেছে, আগামীতে বাংলাদেশের প্রকৃত বৈদেশিক ঋণ ও আর্থিক খাতে তারল্য পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তখন দেশটির বৈদেশিক ঋণমানের পূর্বাভাস আরও কমানো হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রকৃত বৈদেশিক ঋণ যদি বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবের ভারসাম্যের চেয়ে বেশি হয় বা মোট বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের মাত্রা চলতি হিসাবে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি ও ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের চেয়ে বেশি হয়, তখন বাংলাদেশের ঋণমান আরও কমানো হতে পারে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের চলতি হিসাবের ভারসাম্য এখনো নেতিবাচক হলেও তা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। আগামীতেও আরও কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে হলে রপ্তানি আয় ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/700063