২৫ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ১:১৩

ডেঙ্গুতে নারীদের চেয়ে দ্বিগুণ আক্রান্ত পুরুষ

২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ২২৯৩, মৃত্যু ৯

নারীর চেয়ে পুরুষ প্রায় দ্বিগুণ হারে ডেঙ্গুর শিকার হচ্ছে। কাজের প্রয়োজনে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি রয়েছে এমন এলাকায় বেশি সময় কাটাতে হয় বলে পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের বেশ কিছু চিহ্নিত এলাকা রয়েছে যেখানে নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি বাস করে। এসব এলাকা থেকে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে এবং হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যবিদরা ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে এক কথায়, ‘ভয়াবহ’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। গতকাল দেশে ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং এদের সবাই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে।

দেশের সর্বত্র এডিস মশার বিস্তার ঘটেছে বলে প্রতিদিনই আগের দিনের বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে দেশে। গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ২৯২ জন। আক্রান্তের সংখ্যা গত রোববারের চেয়ে একজন বেশি হলেও আশ্বস্ত হওয়ার কিছু নেই। হাসপাতালে ভর্তির চেয়ে প্রকৃত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। কারণ সবাই হাসপাতালে ভর্তি হয় না। অনেকেই বাসায় চিকিৎসা নিয়ে থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩.৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬.৫ শতাংশ নারী। ঢাকা সিটিতে মোট ২১ হাজার ১৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে গতকাল পর্যন্ত। এর মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৭১২ জন এবং নারীর সংখ্যা ৮ হাজার চার হাজার ৪৭৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। ঢাকার বাইরে গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১৪ হাজার ৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৭০০ এবং নারী চার হাজার ৩৮৩ জন।

এ দিকে বাংলাদেশে ভয়াবহ ডেঙ্গু বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্যবিদরা ডেঙ্গুর টিকা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশে এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে জরুরি ভিত্তিতে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে মানুষকে টিকা দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (ইউএস এফডিএ) জরুরি প্রয়োজনে ডেঙ্গু টিকার অনুমোদন দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ডা: আহমেদ পারভেজ জাবীন। ডা: জাবীন বলছেন, বাংলাদেশে বৃদ্ধ, গর্ভবতী ও শিশুদের ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে টিকা দিয়ে দেয়া উচিত। আমরা যেহেতু ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, তাই জরুরি ভিত্তিতে টিকার ব্যবস্থা করা যায় কি না তা নীতি নির্ধারণের দায়িত্বে নিয়োজিতরা ভাবতে পারেন। তিনি গতকাল সোমবার নয়া দিগন্তকে বলেন, শুধু মশা মেরে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা যাবে না। জনসাধারণের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

জনসচেতনতা সৃষ্টি করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: এম মোজাহেরুল হক বলেন, মশক নিধনে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। শুধু সিটি করপোরেশন একা কাজটি করতে পারবে না, এটা প্রমাণিত হয়েছে। এখন সময় এসেছে প্রতিটি এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে তাদের মশক নিধনে সম্পৃক্ত করা। কারণ তারা তাদের নিজেদের এলাকায় কোথায় সব সময় পানি থাকে এবং কোথায় মশার বংশ বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে তারা তা জানে। স্বেচ্ছাসেবকরা ফগিং অথবা লার্ভিসাইডিং যারা করে তাদের নিয়ে যেখানে মশা জন্মাচ্ছে সেখানে গিয়ে ফগিং ও লার্ভিসাইডিং করে আসবে। অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, পৃথিবীতে সব ভালো ভালো কাজ হয়েছে স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করে। এখনকার মশক নিধনে এই কাজটি করলেই খুব তাড়াতাড়ি ঢাকা তথা সারাদেশেই মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে। তিনি বলেন, এই কাজটি যত তাড়াতাড়ি করবে তত তাড়াতাড়ি সুফল পাওয়া যাবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/764838/