২৪ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ১২:৪৫

বানের পানির মতো ডেঙ্গু রোগী আসছে হাসপাতালে

ডেঙ্গু প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। গতকাল রোববার মুগদা হাসপাতাল থেকে তোলা ছবি -সংগ্রাম
ইবরাহীম খলিল : বানের পানির মতো ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে আসছে। গত কয়েক দিনে সেই দৃশ্যই দেখছেন হাসপাতালে অবস্থান করা রোগীর স্বজনরা। তারা বলছেন দিন যতই যাচ্ছে বানের পানির মতো হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। বিশেষ করে মহাখালীতে অবস্থিত ডিএনসিসির ডেঙ্গুর জন্য উৎসর্গীকৃত হাসপাতালে গতকাল সরেজমিনে গিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল এসব কথা।

গত বৃহস্পতিবার মাদারীপুরের শিবচর থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত ভাইকে নিয়ে আসেন ঢাকার মহাখালীর এই হাসপাতালে আরিফ বিল্লাহ। তারা এসে দেখেন মাত্র দুই তিনজন রোগী আছে। কিন্তু এই কয়দিনে পুরো হাসপাতাল ভরে গেছে। হাসপাতালের চারতলায় কেবিনে বসে কথা হয় আরিফ বিল্লাহর সঙ্গে। তার মন্তব্য দিন যতই গড়াচ্ছে রোগীর চাপ বাড়ছেই। সামনের দিনগুলোতে রোগী আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা তার। পাশের কেবিনে এগিয়ে গিয়ে কথা হয় আমেনা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানালেন তারাও এসেছেন মাদারিপুর থেকে। গত কয়েকদিনে যা দেখেছেন তাতে মনে হয়, সামনের দিনগুলো আরও খারাপ হবে। কথা প্রসঙ্গে আমেনা খাতুন জানালেন, তার বড় ছেলের প্রথমে জ্বর, পরে শরীর ব্যথা এবং পাতলা পায়খানা দেখা দেয়। অবস্থা দিন দিন খারাপ হওয়ায় শিবচর হাসপাতালে নেওয়া হয় ডাক্তারের কাছে। পরীক্ষার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ডাক্তারের পরামর্শক্রমে নিয়ে আসেন ঢাকার হাসপাতালে। এবার তিনি খবর পেয়েছেন মেয়েটারও একই অবস্থা। তার আশঙ্কা, মেয়েকেও ডেঙ্গুতেই ধরেছে। তাকেও হয়তো ঢাকাতেই নিয়ে আসা লাগবে।

লিফট দিয়ে চারতলায় ওঠে কিছুক্ষণ হাঁটার পর পূর্বপার্শ্বে গেলে কিছু দোকান বন্ধ পাওয়া যায়। আরেকটু সামনে এগুনোর পর দেখা গেল দোকানের শাটার তোলা। আরেকটু সামনে গিয়ে দেখা গেল শাটার খোলা দোকানে রোগীর জন্য বেড পাতা। সেইসাথে মশারি টানানো। ভেতরে রোগী। কারো সাথে স্বজন রয়েছে। আবার কেউ একাই বসে আছেন মশারীর নিচে। ছোট দোকানগুলো বানানো হয়েছে একজনের কেবিন। আবার কোনটা বানানো হয়েছে ডাবল বেডের কেবিন। আবার বড় দোকানে বানানো হয়েছে ৪ জনের কেবিন। কিছুটা ওয়ার্ডে টাইপের।

দেখলেই বোঝা যায় দোকান বানানো হয়েছিল ব্যবসার জন্য। এসব দোকানে নানান পণ্য সামগ্রী সাজানো থাকার কথা থাকলেও এখন ঠাঁই হয়েছে ডেঙ্গু রোগীর। গত ১২ তারিখ এই মার্কেটকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। এর আগে এটিকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ছিল। করোনা কমে যাওয়া এখন ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বরাদ্দ করা হলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা দৈনিক সংগ্রামকে জানান, বানের পানির মতোই ডেঙ্গু রোগী আসছে হাসপাতালে। এমনটি ১২ তারিখের পর বেশ কিছুদিন রোগী ছিল না। কিন্তু কয়েকদিন ধরে ব্যাপকহারে আসছে রোগী। কয়েকদিনের মধ্যে গতকাল সবচেয়ে বেশি রোগী এসেছে হাসপাতালে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায় গতকাল মহাখালীর এই হাসপাতালে রেকর্ড সংখ্যক ২৬০ জন রোগী এসেছে হাসপাতালে। মোট ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৭ শত ৫৬ জন।

এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর ১১টি এলাকা থেকে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছেন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ছয়টি এবং উত্তর সিটির পাঁচটি এলাকা রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যেসব জায়গা থেকে বেশি ডেঙ্গু রোগী আসছেন, এর মধ্যে আছে যাত্রাবাড়ী, মুগদা, কদমতলী, জুরাইন, ধানমন্ডি ও বাসাবো। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জায়গাগুলোর মধ্যে আছে উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, তেজগাঁও ও বাড্ডা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো) মো. হাবিবুল আহসান তালুকদার এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৬৮৫ জন। তার মধ্যে ঢাকায় ১৮ হাজার ৮৮৫ এবং ঢাকার বাইরে ১১ হাজার ৮০০ জন। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২ হাজার ২৪২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আর এই সময়ে মারা গেছেন ১১ জন। তার মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নয়জন, চট্টগ্রামে এক এবং ফরিদপুরে একজন মারা গেছেন। এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ১৬৭ জন মারা গেছেন। চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ১ জুলাই থেকে অদ্যাবধি ২২ হাজার ৭০৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রামে আক্রান্ত আরও ১১১জন
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে গতকাল রোববার ২৪ ঘন্টায় ডেংগু আক্রান্ত হয়েছে আরও ১১১ জন। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূএ বলছে, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ১১১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেংগু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৩৪জনে। এছাড়া শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডে্গংুতে প্রাণ হারিয়েছেন ২২ জন। গতকাল বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ডে্গংু রোগী ভর্তি ছিল ২৭১জন।

খুমেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত
এক নারীর মৃত্যু ॥ ভর্তি ৫৮ জন
খুলনা ব্যুরো : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শেফালী বেগম (৫৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার মো.বারেকের স্ত্রী। তিনি শনিবার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এদিকে খুমেক হাসপাতালে একদিনে ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালে মোট ৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। আর গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২ জন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (আরএমও) ডাক্তার সুভাষ রঞ্জন হালদার জানান, চলতি বছরে খুলনায় সর্বমোট ২২০ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১৭ জন রোগী ভর্তি হয়। বর্তমানে হাসপাতালে ৫৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া পরিবর্তন ও তাপমাত্রা তারতম্যের কারণে জ্বরে আক্রান্ত রোগী এখন ঘরে ঘরে। বিভিন্ন হাসপাতালে জ্বর-কাশিজনিত ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকেও জ্বর-কাশির রোগী রেফার করা হচ্ছে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ও খুলনা শিশু হাসপাতালে। ফ্লুজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে হাসপাতালের বহির্বিভাগেও।

আবহাওয়া পরিবর্তনের এ গরম-ঠান্ডার মধ্যে প্রায় প্রতিটি পরিবারে মওসুমি জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় গত কয়েক দিন ধরে জ্বর-সর্দি-কাশি ও শরীর ব্যথার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগী প্রচুর দেখা যাচ্ছে।
জ্বর, সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন ফ্লুজনিত রোগীর অস্বাভাবিক চাপ দেখা দিয়েছে হাসপাতালগুলোতে। বহির্বিভাগ ও শয্যার অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
খুলনা শিশু হাসপাতালে ভর্তি এক শিশুর বাবা আরাফাত বলেন, জ্বর ও ডায়রিয়া নিয়ে শিশুকে ভর্তি করেছি। হাসপাতালে এ ধরনের শিশুর সংখ্যাই বেশি।

খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাইফুল ইসলাম নামে এক রোগী বলেন, হাসপাতালে রোগীর সীমাহীন চাপ। এত বড় লাইন দেখে মনে হচ্ছে প্রতি ঘরে ঘরেই যেন মানুষ অসুস্থ।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলে

https://dailysangram.info/post/530767