২৮ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ১২:৪৮

সব ভার কি জনগণকেই বইতে হবে?

কামরুল হাসান দর্পণ : ‘গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল’- আমেরিকার অবিসংবাদিত প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের বিখ্যাত এই উক্তিটি এখন কতটা প্রযোজ্য তা নিয়ে সংশয় দেখা দিতেই পারে। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশের জন্য তা কার্যকর কিনা, এ অশঙ্কা করাই যেতে পারে। অবশ্য আমাদের দেশ এখন গণতন্ত্রের কোন সংজ্ঞায় পরিচালিত হচ্ছে, তা নিয়েও মতভেদ রয়েছে। সরকার বলছে, একেবারে পরিপূর্ণ গণতন্ত্র বজায় রয়েছে। বিরোধী দল বলছে, গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলেন, পুরোপুরিও নয়, ভূলুণ্ঠিতও নয়। আধাআধি বা সীমিত গণতন্ত্র চলছে। তবে বিশেষজ্ঞদের কথাই যদি ধরে নেয়া হয়, তবে তা কোনোভাবেই জনগণের জন্য কল্যাণকর নয়। কারণ আধাআধি কোনো নিয়মই ভালো নয়। যেখানে আধাতন্ত্র নিয়ে নিয়মকানুন চলে, সেখানে তা কেউ মানে, কেউ মানে না। যারা না মানে তারা দোর্দÐ প্রতাপশালী হয়ে ওঠে। নিজেদের খেয়ালখুশি মতো আচরণ করে। তাদের প্রতাপে যারা নিয়ম মানতে চায় তারা অসহায় হয়ে পড়ে। এতে তাদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। আমাদের দেশের জনগণের হয়েছে বিপদ। তারা না পারে কিছু কইতে, না পারে সইতে। পদে পদে তাদের মুখ বুজে নিপীড়ন ও নির্যাতন সইতে হচ্ছে। এই যে গণপরিবহন খাতে যে দুর্ভোগ সইতে হলো, তার দায় কিন্তু কেউ নেয়নি। যাদের কারণে দুর্ভোগের সৃষ্টি হলো তারা বহাল তবিয়তেই রয়ে গেল। তাদের টিকিটি পর্যন্ত ধরা গেল না। উপরন্তু সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বললেন, পরিবহন মালিকরা অনেক পাওয়ারফুল, ক্ষমতাধর। অর্থাৎ সরকারের চেয়েও ক্ষমতাধর পরিবহন মালিকরা। ঘটনার সূত্রপাত, গত ১৬ এপ্রিল থেকে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করা নিয়ে। বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বেশ জোরেশোরে সিটিং সার্ভিস বন্ধে মাঠে নামে। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কাউকে কাউকে জেল-জরিমানাও করা হয়। বিপত্তিটা বাঁধে সেখানেই। পরদিন থেকেই দেখা গেল চিরাচরিত যানজটের শহর ঢাকার চিত্র বদলে গেছে। যানজট নেই, অনেকটা ফাঁকা রাস্তা। এমন হওয়ার কারণ আর কিছু না, পরিবহন মালিকরা কৌশলে রাস্তা থেকে তাদের বাস-মিনিবাসের সংখ্যা কমিয়ে দেয়। এতেই মহাবিপদে পড়ে যায় সাধারণ মানুষ। প্রায় প্রতিদিনই বাসের জন্য মানুষকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে কিংবা গাদাগাদি ও যুদ্ধ করে বাসে ওঠার চিত্র পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অথচ সিটিং সার্ভিস বন্ধে পরিবহন মালিকদেরও সম্মতি ছিল। মালিক সমিতির এক নেতাকেও সিটিং সার্ভিস বন্ধে মাঠে সরব থাকতে দেখা যায়। তারপরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। সিটিং সার্ভিস বন্ধ হলেও ভাড়া কমেনি। উল্টো পরিবহন মালিকদের যেন পোয়াবারো হয়েছে। সিটিং সার্ভিস বন্ধের বিষয়টি যে পুরোপুরি একটি নাটক এবং জনসাধারণের সাথে তামাশা ছিল, তা পরবর্তীতে পরিবহন মালিকদের আচরণ ও সরকারের পিছটান দেয়া থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারল, সরকারের পক্ষে পরিবহন মালিকদের অনিয়মকে নিয়মে আনা সম্ভব নয়। তারা এতটাই শক্তিশালী। তাহলে বিষয়টি এমন দাঁড়াল, সরকার জনসাধারণের উপকার করতে পারল না।

দুই.
আমরা জানি, একটি দেশে সবচেয়ে শক্তিশালী হলো সরকার। তার সাথে অন্যায়ভাবে ফাইট দিয়ে কারো পক্ষেই টিকে থাকা সম্ভব নয়। তবে সরকার যে কোনো গোষ্ঠীর কাছে পরাস্ত হয়, তা আমাদের গণপরিবহন মালিকদের কাছে সরকারের নতিস্বীকারের ঘটনা থেকে প্রথম বোঝা গেল। এটাও বোঝা গেল, এদের সাথে সরকার কখনো পারবে, এমন আশা করা যায় না। সরকার পারবে কেবল জনগণের সাথে। কীভাবে জনসাধারণকে চাপে ফেলে কাবু করা যায়, তার কৌশল প্রদর্শন করতে। তাদের ওপর যত ধরনের বোঝা চাপানো যায়, তা চাপাবে। অথচ জনসাধারণের সামান্য একটা উপকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা বিধান করা, তাই করতে পারল না। পরিবহন মালিকরা যে অন্যায়ভাবে তাদের খেয়ালখুশি মতো যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি পয়সা আদায় করে নিচ্ছে, এ কাজটুকু সরকার বন্ধ করতে পারল না। উল্টো বলে ফেলল, এরা অনেক ক্ষমতাধর। তাদের সাথে পারা যায় না। যে কথা সে কাজ। নামকাওয়াস্তে ১৫ দিনের জন্য অভিযান বন্ধের মতো একটা ঘোষণা দিয়ে পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলল। এর সাথে ছেলে ভোলানোর মতো করে বলল, সরকার চার হাজার গাড়ি নামাবে। ব্যর্থতা ঢাকতে এসব বুলি আউড়িয়ে বুঝিয়ে দিল সরকারের চেয়ে পরিবহন মালিকরাই শক্তিশালী। অথচ এ সরকারকেই না আমরা দেখেছি কত কঠোর হাতে বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম দমন করতে। তাদের দৌড়ের ওপর রাখতে যত রকমের শক্তি প্রয়োগ করা যায়, তার সবই করতে। আর গণপরিবহন মালিকদের কাছে এসে যেন সে পরাস্ত হয়ে পড়ল। এর কারণ কি? দুটো কারণ হতে পারে। এক. বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যে কোনো ছুঁতোয় ধরপাকড় এবং এর পক্ষে যে কোনো একটা বিবৃতি দিয়ে জায়েজ করে নেয়া যায়। জনসাধারণের মতের পক্ষে কথা বলে সরকারের ভাবমর্যাদার ক্ষতি করা যায়। কাজেই বিরোধী দলকে শায়েস্তা করা সরকারের জন্য সবচেয়ে সহজ একটি কাজ। দুই. পরিবহন মালিক আর সরকারের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণে থাকে সরকারেরই মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় লোকজন। অর্থাৎ পরিবহন মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অর্থই হচ্ছে, নিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। নিজের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যায়? যায় না। কাজেই জনসাধারণ মরল কি বাঁচল, তাতে খুব একটা কিছু আসে যায় না। জনগণের পক্ষ হয়ে পত্র-পত্রিকা কয়েক দিন লেখালেখি করবে, তারপর তা এমনিতেই থেমে যাবে। অন্যদিকে জনগণ কথা বলবে কোথায়? তাদের তো কথা বলার জায়গাই নেই। তাদের যতই চেপে রাখা হোক না কেন, এক গোঙ্গানি ছাড়া উচ্চৈঃস্বরে কোনো শব্দও করতে পারবে না। শব্দ করলেও সরকারের কিছু আসে যায় না। এই যে তাদের ওপর একের পর এক করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, তাতে জনসাধারণ কি কিছু করতে পারছে? যত কষ্টই হোক না কেন, তাদের তা দিতেই হচ্ছে। না দিলে জীবনযাপনও আপনাআপনি বন্ধ। কাজেই সরকার তো মনে মনে বলতেই পারে, হে জনসাধারণ, যাবে কোথায়! আমার কথা তোমাকে মানতেই হবে। পদে পদে তোমাকে ট্যাক্স দিয়ে চলতে হবে। কোনো সরকারের মনোভাব যদি এমন হয়, তবে জনগণের স্বস্তিতে থাকার কোনো কারণ থাকতে পারে না। সরকারের আচরণে এমন একটা প্রবণতা রয়েছে, জনগণের সুবিধা-অসুবিধা দেখার দায়িত্ব তার নয়। গণতন্ত্র নামে যে তন্ত্রটি আছে এবং তাতে যে সরকারকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়, এই আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সরকারের গণতন্ত্র কেবল মুখে মুখে শোভা পাচ্ছে। সরকারের কাছে জনগণ শুধু তারাই, যারা তাকে ক্ষমতায় থাকতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। ইতোমধ্যে এ প্রবণতা লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। সরকার তার প্রশাসন যন্ত্র এবং এর সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকেই জনগণ মনে করছে। তাদের বেতন শত ভাগ বৃদ্ধি করে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধান করার দিকেই মনোযোগ বেশি। তারা আরাম-আয়েসে থাকতে পারলেই সরকারের জন্য স্বস্তিকর। এর বাইরের জনসাধারণ শত কষ্টে থাকলেও তাতে কিছু আসে যায় না। সরকার জনগণের সংজ্ঞাটা যেন এমন এক সীমাবদ্ধ গÐির মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলেছে।

তিন.
এখন এ কথা বলা যায়, সরকারের কাছে জনগণের উন্নয়ন বলতে পুরো প্রশাসনের উন্নয়নকেই বোঝানো হচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের সামনে এ উন্নয়নের কথা তুলে ধরা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে, তোমাদের উন্নতি হোক বা না হোক, প্রশাসনের লোকজনের উন্নতিই তোমাদের উন্নতি। জনগণও এই উন্নতি দেখছে এবং দেখছে তাদের পকেটের পয়সা দিয়ে কীভাবে প্রশাসনের লোকজনকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলা হয়েছে। সরকারও কীভাবে তার উন্নতির কথা বলে চলেছে। অথচ এসবই সাধারণ মানুষের পকেটের পয়সা দিয়ে করা হচ্ছে এবং কীভাবে আরও পয়সা কেড়ে নেয়া যায়, তার নানা ফন্দিফিকির করছে। এই যে জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে সবকিছুতেই ১৫ পার্সেন্ট ভ্যাট চালু করা হচ্ছে, এর অর্থই হচ্ছে জনগণের পকেটের পয়সা বের করে নেয়া এবং সরকারের উন্নয়ন করা। সরকার একবারও ভাবছে না, সাধারণ মানুষ এ পয়সা কোত্থেকে দেবে। এমন হতো সাধারণ মানুষ অত্যন্ত আরাম-আয়েস ও স্বস্তিতে বসবাস করছে, তাহলে এ পয়সা নিলে তাদের এমন কিছু যেত আসত না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যে বেকার তাকেও এই ভ্যাট দিতে হবে। যে কোনো জিনিস কিনতে গেলে ১৫ পার্সেন্ট ভ্যাট তার পকেট থেকে কেটে রাখা হবে। অথচ সরকার এই বেকারের কথা চিন্তা করছে না। তার কর্মসংস্থান কীভাবে হবে, তা নিয়ে যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। শুধু তাই নয়, ব্যাংকগুলোতে এক লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। বিদেশি সহায়তারও প্রায় একই পরিমাণ অর্থ অব্যবহৃত রয়ে গেছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, সরকার এসব অর্থ কীভাবে কাজে লাগাবে এবং কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিকে সচল করবে, তার উপায় জানে না। তার জন্য অর্থ সংগ্রহের সহজ কাজ হচ্ছে, জনসাধারণের পকেট হাতিয়ে নেয়া। যে সরকারের এ ধরনের প্রবণতা থাকে, সে সরকারকে কি সফল সরকার বলা যায়? ইতোমধ্যে এ সরকারের গায়ে ‘ব্যবসায়ী সরকার’-এর একটি তকমা লেগে গেছে। অর্থাৎ সরকার জনগণের সাথে ব্যবসা করছে। জ্বালানি তেলের দাম বিশ্বের সব জায়গায় সর্বনি¤œ পর্যায়ে থাকলেও সরকার তা কমাচ্ছে না। না কমিয়ে লাভ করে যাচ্ছে। যে জ্বালানি খাতে এতদিন ভর্তুকির কথা শোনা গেছে, তা এখন লাভজনক খাতে পরিণত হয়েছে। সরকারের এই ব্যবসায়িক মনোভাবের ভার বইতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আবার সাধারণ মানুষের পকেট কাটার জন্য পুনরায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। শুধু বিদ্যুতের দামের মধ্যে এ বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ থাকলেও একটা কথা ছিল। এর সাথে যে জীবনযাপনের সব ধরনের উপকরণের সম্পর্ক রয়েছে এবং সেগুলোর দামও যে বৃদ্ধি পাবে, সরকার তা বিবেচনায় নিচ্ছে না। এ কথা একবারও ভাবছে না, বাড়তি এ টাকা মানুষ কোথায় পাবে। সরকারের আচরণ এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, আমার বাড়ানোর কাজ বাড়িয়ে দিলাম পাবলিক কোথা থেকে দেবে তা তাদের ব্যাপার। অর্থাৎ পাবলিকের ওপরই সরকার তার সব বোঝা চাপাচ্ছে এবং সরকারকে তাদেরই কাঁধে করে নিয়ে যেতে হবে। সাধারণ মানুষ মনে করতেই পারে সরকারকে তাদেরই বয়ে বেড়াতে হবে। ‘পাবলিক পারসেপশন’ যদি এমন হয়, তবে এ ধরনের কোনো সরকারকেই জনবান্ধব বলা যায় না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যখন বলা হয়, এ সরকার জনভিত্তিহীন এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়, তখন সাধারণ মানুষের পক্ষে এ কথা একেবারে উড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয় না। কারণ জনসাধারণ দেখছে, সরকার তাদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা না করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। জনসাধারণের প্রতি মায়া ও দরদ থাকলে নিশ্চয়ই দাম বৃদ্ধি বা করের বোঝা চাপানোর আগে আরও গভীরভাবে চিন্তা করত। চিন্তা করত এই কর ও দাম বৃদ্ধির ভার মানুষ বহন করতে পারবে কিনা। জনবান্ধব সরকার হলে নিশ্চয়ই জনসাধারণের অসুবিধার কথা একবার নয়, অসংখ্যবার চিন্তা করত। তাৎপর্যের বিষয় হচ্ছে, সরকারের সিদ্ধান্ত যে জনসাধারণের জন্য কল্যাণকর নয়, তা আদালতও উপলব্ধি করে। এ জন্য গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছিল, তা আদালত ছয় মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেয়। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সরকার তার ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত জনসাধারণের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। আবার এমনও দেখা গেছে, জনসাধারণকে না জানিয়ে চুপিচুপি পানি ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে দিয়েছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি আদালত কর্তৃক স্থগিত হলেও গোপনে বাড়তি বিল আদায় করা হচ্ছে।

চার.
সামনে নতুন বাজেট ঘোষণা করা হবে। প্রায় ৪ লাখ ২০০ কোটি টাকার। আমাদের দেশে বাজেট ঘোষণা জনসাধারণের কাছে অনেকটা আতঙ্ক হয়ে দেখা দেয়। এর কারণ হচ্ছে, বাজেট ঘোষণার আগেই ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ প্রায় সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দেয়। বাজেটে কোন জিনিসের দাম কমবে বা বাড়বেÑ ওই পর্যন্ত অপেক্ষা করে না। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী বাজেট মানেই জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে হবে, এমন সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নিয়ে রাখে। বাজেট ঘোষণার পর কতটুকু বাড়ল বা কমল, এর ধার ধারে না। এ ব্যাপারে জনসাধারণের পাশে সরকারকে দাঁড়াতে দেখা যায় না। বাজেটের আগে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগই পরিলক্ষিত হয় না। উদ্যোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে জনসাধারণকে জিম্মি করে ফেলে। দেখা গেল, বাজেটের আগে জিনিসপত্রের দাম একবার বৃদ্ধি করা হলেও বাজেটের পর আরও এক দফা বাড়ানো হয়। ব্যবসায়ীরা যেমন জনসাধারণের ওপর বাড়তি দামের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে, তেমনি সরকারও একই কাজ করছে। একবারও ভাবছে না জনসাধারণ এই ভার বইতে পারবে কিনা। উভয় দিক থেকে জনসাধারণকে এমন পিষ্ট করার প্রক্রিয়া বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা, জানা নেই। আমাদের কথা হচ্ছে, সরকারকে সাধারণ মানুষের সামর্থ্য ও সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভ্যাট, ট্যাক্স ও গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ছয় মাস অন্তর অন্তর বা বছর না পেরুতেই দাম বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি পরিহার করে সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধার দিকটি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে। দফায় দফায় জনগণের ওপর করের বোঝা বাড়িয়ে ও দাম বৃদ্ধি করে মানুষের জীবনযাপনে টানাপড়েন সৃষ্টি করা সরকারের কাজ হতে পারে না। মানুষের পকেট থেকে অর্থ বের করে আয় করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের দিকে মনোযোগ দেয়াই সরকারের কাজ। তা করতে না পারলে, এটা তার ব্যর্থতা হিসেবেই পরিগণিত হতে বাধ্য।

 

 

https://www.dailyinqilab.com/article/77080