২৩ জুলাই ২০২৩, রবিবার, ৩:৩৮

গ্রামাঞ্চলে ফের বেড়েছে লোডশেডিং

গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং ও পিজিসিবির তথ্যে গরমিল

সারা দেশে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। তবে চাহিদানুযায়ী বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াচ্ছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। দেশে এখন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এই ঘাটতির কারণে ঢাকার বাইরের জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে।

বিপিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, তীব্র গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও জ্বালানিসংকটে উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেড়ে গেছে।

এক মাসেরও বেশি সময় দেশে অতিরিক্ত লোডশেডিং থেকে মুক্ত ছিল দেশের মানুষ। এতে বিদ্যুৎ নিয়ে অনেকটাই স্বস্তিতে ছিল সাধারণ জনগণ।

এর বড় কারণ বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমে যাওয়া।
বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। প্রতিষ্ঠানটি সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার দুপুর ১২টার সময় লোডশেডিং ছিল এক হাজার ৬১৪ মেগাওয়াট। তখন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট; উৎপাদন হয় ১২ হাজার ৫৮৬ মেগাওয়াট।

গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার সময় লোডশেডিং ছিল এক হাজার ৯৯১ মেগাওয়াট। তখন দেশে চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ১৫০ মেগাওয়াট এবং উৎপাদন হয়েছিল ১২ হাজার ১৫৯ মেগাওয়াট। আগের দুই দিনের তুলনায় গত দুই দিন (শুক্র ও শনিবার) বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কম ছিল। ফলে লোডশেডিংও অনেক কম হয়েছে। গত শুক্রবার সকাল ১১টার সময় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট, উৎপাদন ছিল ১১ হাজার ৫৪১ মেগাওয়াট।

তখন লোডশেডিং হয়েছিল ৭০৯ মেগাওয়াট।
গতকাল দুপুর ১২টার সময় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। ওই সময় উৎপাদন ছিল ১২ হাজার ৬০৭ মেগাওয়াট এবং লোডশেডিং ছিল ১৯৩ মেগাওয়াট। তবে গতকাল কালের কণ্ঠ’র প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য ও লোডশেডিংয়ের সার্বিক চিত্র বলছে, বর্তমানে চাহিদা ও লোডশেডিং পিজিসিবির এই তথ্যের চেয়ে এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বেশি ছিল।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পিজিসিবি মূলত উৎপাদনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চাহিদা তৈরি করে প্রকাশ করে, যার কারণে বাস্তবতার সঙ্গে তাদের তথ্যের মধ্যে বড় গরমিল রয়েছে।

দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। প্রতিষ্ঠানটি গ্রামাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিতরণ করে। এখন আরইবির বিতরণ এলাকায় সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। প্রতিদিন দিনের বেলায় বিতরণ কম্পানিটির লোডশেডিং ছিল এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি। আরইবির একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গরম বাড়ার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা আগের তুলনায় কিছুটা বেড়ে গেছে। কিন্তু আমরা সেই তুলনায় বিদ্যুতের বরাদ্দ পাচ্ছি না। তাই লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’

কুমিল্লা : কুমিল্লার মুরাদনগরে দিন-রাতের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুিবহীন পার করতে গিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। লোডশেডিংয়ের সময় হিট স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে পোলট্রি মুরগি। খামারিরা হারাচ্ছেন পুঁজি। বাড়ছে ক্ষোভ। মুরাদনগর উপজেলা পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলায় চারটি সাবস্টেশন রয়েছে। চাহিদামতো বিদ্যুৎ না পাওয়ায় প্রতিটি সাবস্টেশনে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে।

উপজেলার বাঙ্গরাবাজার সাবস্টেশনে চাহিদা ১৪-১৫ মেগাওয়াট। কিন্তু পাচ্ছে তিন-চার মেগাওয়াট। বাঙ্গরা সাবস্টেশনের আওতায় আকবপুর ইউনিয়নের পোলট্রি ব্যবসায়ী ওমর ফারুক বলেন, ‘এক ব্যাচে ৩০০ মুরগি ছিল। অসহনীয় গরম ও অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে ১২৫টি মুরগি হিট স্ট্রোক করে মারা গেছে। লাভ তো দূরের কথা, পুঁজি হারাতে বসেছি।’

মুরাদনগর সাবস্টেশনের সহকারী জোনাল ম্যানেজার মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকায় নিরুপায় হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’

মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলায় তীব্র গরমের মধ্যেও অব্যাহত রয়েছে লোডশেডিং। কোনো কোনো দিন গভীর রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরে ঘরে অসুস্থ শিশু, বৃদ্ধসহ সবাইকে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক এ বি এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। অথচ পাচ্ছি ৬০ মেগাওয়াটের মতো।’

নীলফামারী : নীলফামারী জেলাজুড়ে গত এক সপ্তাহ ধরে দিনরাতে ঘন ঘন লোডশেডিং ভোগান্তিতে ফেলেছে সাধারণ মানুষকে। তবে জেলা শহরে গত শুক্র-শনিবার লোডশেডিং না থাকলেও জেলার বাইরের উপজেলাগুলোতে ঘন ঘন লোডশেডিং হয়েছে।

ডোমার উপজেলার মিরজাগঞ্জ গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলাম (৫৫) বলেন, ‘এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে দুই ঘণ্টা থাকে না। সমস্যাটা চলছে এক সপ্তাহ ধরে। ডোমার নেসকো কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নওশাদ আলম বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম পাওয়ায় লোডশেডিং দিয়ে চালাতে হচ্ছে।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/07/23/1301385