২৩ জুলাই ২০২৩, রবিবার, ৩:৩৭

বরিশালের সড়কে মৃত্যু বেড়েছে ৩৫%

বরিশাল বিভাগে এক বছরের ব্যবধানে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। আগে বরিশাল বিভাগের সঙ্গে নদীপথেই যোগাযোগ বেশি ছিল। এখন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ায় যান চলাচল বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে দুর্ঘটনাও বেড়েছে।

২০২১ সালে বরিশাল বিভাগে ৩৩৫ দুর্ঘটনায় ২৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর ২০২২ সালে ৩৮২ দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জনের মৃত্যু হয়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে কাজ করা নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের বার্ষিক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সংগঠনটির ২০২১ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশাল জেলায় ১৬৩ দুর্ঘটনায় ১১৫ জন মারা গেছে।

ভোলায় ৪১ দুর্ঘটনায় ৪২ জন, ঝালকাঠিতে ১৫ দুর্ঘটনায় ১৭ জন, পটুয়াখালীতে ৫৭ দুর্ঘটনায় ৬১ জন, পিরোজপুরে ২৮ দুর্ঘটনায় ২৫ জন এবং বরগুনায় ৩১ দুর্ঘটনায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়।

আর ২০২২ সালে পটুয়াখালী বাদে বিভাগের সব জেলায় দুর্ঘটনা ও মৃত্যু বেড়েছে। এই বছরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশাল জেলায় ১৬৮ দুর্ঘটনায় ১৮৩ জন মারা গেছে। ভোলায় ৪৮ দুর্ঘটনায় ৪৪ জন, ঝালকাঠিতে ২২ দুর্ঘটনায় ২৪ জন, পটুয়াখালীতে ৫২ দুর্ঘটনায় ৫৩ জন, পিরোজপুরে ৪৭ দুর্ঘটনায় ৫৪ জন এবং বরগুনায় ৪৫ দুর্ঘটনায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়।

গত দুই বছরে ঝালকাঠি জেলায় ৩৭ জনের মৃত্যু হয়। গতকাল শনিবার এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত এক দুর্ঘটনায়ই ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। দুর্ঘটনায় আহত হয় আরো ১৮ জন। সদর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় খুলনা-ঝালকাঠি সড়কে ঘটে এই দুর্ঘটনা।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, দুর্ঘটনাকবলিত বাশার স্মৃতি পরিবহনের বাসটি ভাণ্ডারিয়া থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশে ছেড়ে আসে।
ছত্রকান্দায় পৌঁছার পর বাসটির চাকা ফেটে গেলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান এবং বাসটি উল্টে রাস্তার পাশের পুকুরে পড়ে যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সড়ক দুর্ঘটনা তথ্য সংরক্ষণ নথিতে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, চালকের অসাবধানতায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি পুকুরে পড়ে যায়।

অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনার উদাহরণ এটাই প্রথম নয়। দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার মানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবহনের মান উন্নত হচ্ছে না। ফলে দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। চাকা ফেটে যাওয়া এবং নিয়ন্ত্রণ হারানোর পেছনে গাড়ির গতি অন্যতম বড় একটি কারণ।

সাইদুর রহমান বলেন, আঞ্চলিক সড়কগুলোর মান তুলনামূলক ভালোর দিকে যাচ্ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে পরিবহনের মান ভালো হচ্ছে না। তাই সড়কে গাড়ির গতি বাড়লেও দুর্বল পরিবহন সেই গতির চাপ নিতে পারছে না।

চলতি বছরের ২৪ জুন চিকিৎসা শেষে রাজধানী থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে ফরিদপুরে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন তাসলিমা বেগম। সঙ্গে ছিল পরিবারের আরো ছয় সদস্য। পথে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ফরিদপুর অংশে দুর্ঘটনায় পড়ে অ্যাম্বুল্যান্সটিতে আগুন ধরে যায়।
এতে দুর্ঘটনাস্থলেই আগুনে পুড়ে সাতজন মারা যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্সটির চালকও মারা যান। আবার ৬ জুলাই খুলনা থেকে রোগী নিয়ে ঢাকায় আসার পথে গোপালগঞ্জে দুর্ঘটনায় পড়ে আরেকটি অ্যাম্বুল্যান্স। এ দুর্ঘটনায় রোগী-চালকসহ চারজন মারা যায়।

দক্ষিণাঞ্চলকেন্দ্রিক বড় মহাসড়কগুলোতেও এখন অনেকটা নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে জাতীয় মহাসড়কে এসে গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। ঝালকাঠির বাস দুর্ঘটনার মতো টায়ার ফেটে মাদারীপুরের শিবচরেও বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

দুই দুর্ঘটনায়ই বাসের টায়ার ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের বাইরে পড়ে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কে। নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের ২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোট সাত হাজার ২৪টি দুর্ঘটনার মধ্যে শুধু মহাসড়কে দুই হাজার ৩১৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর সড়কের বাইরে বা খাদে পড়ে এবং উল্টে ৮৪৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সড়ক ও পরিবহন দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবহন ও চালকের মান ভালো না হলে সড়ক যতই ভালো হোক দুর্ঘটনা কমবে না।

গতকালের দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সোজা পথে, সড়কে তেমন বাঁক ছিল না। বুয়েটের এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার ৮৪ শতাংশ ঘটে অতিরিক্ত গতির কারণে। আর বাঁকের চেয়ে সোজা পথে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। সোজা পথে দুর্ঘটনা ঘটে ৬৭ শতাংশ। বাকিটা সড়কের বাঁকে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/07/23/1301368