২২ জুলাই ২০২৩, শনিবার, ১২:২৮

অনাবৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে আউশের উৎপাদন ব্যাহত

লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৮ হাজার হেক্টর অর্জিত হয়েছে ৯৫ হাজার

চলতি মাসের প্রথম দিকে কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের চাষিদের মাঝে আউশ রোপণের আয়োজন দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলে আউশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দারুণভাবে ব্যাহত হয়েছে। গত মৌসুমে উৎপাদন ভালো হওয়ায় গত বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর যুক্ত করে এবার আউশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৫ হেক্টর। তবে অনাবৃষ্টির কারণে আউশ রোপণ অর্জিত হয়েছে ৬৯ ভাগ অর্থাৎ ৯৫ হাজার ১৭৪ হেক্টর জমিতে, যা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১ ভাগ কম।

বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারিভাবে বিনামূল্যে কৃষি প্রণোদনার পাশাপাশি শাকসবজি ও ধানের মূল্য বেশি পাওয়ায় শাকসবজি চাষের পরিধি যেমন বাড়ছে তেমনি ধান চাষেও কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। সে কারণে ধান চাষের পরিধিও বৃদ্ধি পেয়ে আসছে। সে কারণে শুধু আউশে গতবারের তুলনায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ১০২ হেক্টর বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৫৪ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চারা রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এ অঞ্চলে গত মৌসুমে আউশ চাষের জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৯৩৩ হেক্টর আর ধান উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৫ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরে গড়ে উৎপাদন হয়েছে ২.৬৪ মেট্রিক টন করে। সে হিসাবে এবার আরো ৬৫ হাজার ২৬৫.২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন উৎপাদন ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করা হলেও অনাবৃষ্টির কারণে সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড.অরবিন্দ কুমার রায় এ তথ্য জানিয়েছেন।

গত মৌসুমে চট্টগ্রাম জেলায় আউশ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ হাজার ১৯৭ হেক্টর জমিতে ৯৬ হাজার ১৫১ মেট্রিক টন, কক্সবাজারে ৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ৩৬৬ মেট্রিক টন। নোয়াখালীতে ৩৮ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে ৮৯ হাজার ৮৪৪ মেট্রিক টন, এখানে গড়ে উৎপাদন হয়েছে প্রতি হেক্টরে ২.৩ মেট্রিক টন। চট্টগ্রামে গড়ে প্রতি হেক্টরে ২.৮১ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হওয়ায় নোয়াখালী জেলার চেয়ে চট্টগ্রাম জেলায় আউশ ধানের জমির পরিমাণ কম হলেও উৎপাদন বেশি হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলের ফেনী জেলায় ৮ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ২১ হাজার ৮৬৯ মেট্রিক টন এবং লক্ষ্মীপুর জেলায় ২৭ হাজার ৮১৬ হেক্টর জমিতে ৭৯ হাজার ৭৫৫ মেট্রিক টন। লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রতি হেক্টরে গড়ে উৎপাদন হয়েছে ২.৮৭ মেট্রিক টন, সে কারণে এ জেলায় চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়েছিল।

এ দিকে চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামে আউশ উৎপাদনে জমি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার ২৩৪ হেক্টর, অর্জিত হয়েছে ৩৩ হাজার ৭১৯ হেক্টর, কক্সবাজারে ৪ হাজার ২৯৭ হেক্টর বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৩ হাজার ৭১৩ হেক্টর, নোয়াখালী জেলায় ৪৭ হাজার ৮৯ হেক্টরের বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৩৪ হাাজর ১৭৫ হেক্টর, ফেনী জেলায় ১০.৮১০ হেক্টর জমির বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৬ হাজার ৭০২ হেক্টর এবং লক্ষ্মীপুর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৬০৫ হেক্টর এর বিপরীতে অর্জিত হয়েছে মাত্র ১৬ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, কৃষকের মাঝে সরকারিভাবে বিনামূল্যে কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে কৃষি অফিসারদের মাধ্যমে কৃষকদেরকে চাষাবাদে আধুনিক কলাকৌশল ও পরামর্শ প্রদান অব্যাহত থাকায় শাকসবজি ও ধান চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ যেমন বাড়ছে তেমনি চাষের পরিধিও বাড়ছে। তবে এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে আউশের লক্ষ্যমাত্রা দারুণভাবে ব্যাহত হয়েছে। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে আউশ ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হলেও আমন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলে আমন বীজতলা তৈরির কাজ ইতোমধ্যে ৬৫ ভাগ ছাড়িয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/764074