২২ জুলাই ২০২৩, শনিবার, ১২:২৭

২২ শতাংশ ইউনিট এখনই অকার্যকর

আটকে গেল নতুন করে চাওয়া ৪৯৪ কোটি টাকার প্রস্তাবনা

কাজের মান খারাপ হওয়ার কারণে প্রকল্প শেষ হতেই সমস্যায় আক্রান্ত ও অকার্যকর ২২ শতাংশ সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট। এর মধ্যে ২২০টিই সমস্যায় আক্রান্ত। এখন নতুন করে চাওয়া ৪৯৪ কোটি টাকার ৬ হাজার ৩০০টি সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিটের প্রকল্প প্রস্তাবনা আটকে দিলো পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। সদ্য সমাপ্ত প্রকল্পের কাজের পরিস্থিতি ও প্রস্তাবিত প্রকল্পের এলাকা সরেজমিন দেখে তারপর প্রকল্পের কথা ভাববে তারা। আর মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটির এলাকা দেখার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের মূল্যায়ন কমিটি। তারা বিভাগের সদস্যের (সচিব) কাছে প্রতিবেদন দেয়ার পর নতুন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকল্প সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) আরিফ আনোয়ার খানের উপস্থাপনা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন ১৯টি জেলার উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহে বর্তমানে অগভীর বা গভীর স্তরে বিদ্যমান পানির উৎসসমূহে লবণাক্ততা ও আর্সেনিক দূষণের প্রভাব রয়েছে। এসব এলাকার জনগণ নিরাপদ পানির তীব্র সঙ্কটে পড়ছে। উপকূলবর্তী জেলাসমূহ নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল এবং সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপাঞ্চল হওয়ায় ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠস্থ পানির উৎসসমূহে লবণাক্ততার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধরনের সমস্যাসঙ্কুল ১৫ জেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্যকরী সমাধানের অন্যতম সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট একটি উপযুক্ত পদ্ধতি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের (ডিপিএইচই) পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়িত ‘পরিবেশবান্ধব সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি সম্প্রতি সমাপ্ত হয়েছে। মূলত এ প্রকল্পের সফলতার প্রেক্ষাপটে উপকূলীয় দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিকল্প ও কার্যকরী উৎসের সংস্থানকল্পে দেশের উপকূলীয় ১৫ জেলার ৫৮টি উপজেলায় ৬ হাজার ৩০০টি সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের নিমিত্ত এই প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে।

এলজিআরডির আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক প্রকল্পটি মোট ৪৯৩ কোটি ৫৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে তিন বছর চার মাসে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে লবণাক্ততাপ্রবণ এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহকরণ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো উপকূলবর্তী লবণাক্তপ্রবণ এলাকাসমূহে নিরাপদ পানি সরবরাহ করার মাধ্যমে ওই এলাকায় বসবাসরত জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন করা।

প্রকল্পটি নিয়ে মূল্যায়ন কমিটির সভায় পর্যালোচনায় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত একই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থাপিত ইউনিটগুলোর বর্তমান অবস্থা জানতে চাওয়া হয়। তখন ডিপিএইচইর সংশ্লিষ্টরা বলেন, সমাপ্ত প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৬টি উপজেলার যেসব পরিবারে সুবিধা প্রদান করা হয়েছে, সেসব পরিবারকে বাদ দিয়ে বর্তমান প্রস্তাব। বেরিয়ে আসে সব তথ্য।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তথ্য বলছে, পরিবেশবান্ধব সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহকরণ শীর্ষক প্রকল্প গত ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত হয়েছে। প্রকল্পে ৪টি বিভাগের ১৬টি জেলার ৬৬টি উপজেলায় এক হাজার ১৪০টি সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের সংস্থান রয়েছে। এর মধ্যে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ, চট্টগ্রামের পটিয়া, ভোলার চরফ্যাশনসহ আরো কয়েকটি উপজেলায় ১৪২টি সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের জন্য স্থান না পাওয়ায় ওই সব প্লান্টের কাজ করা সম্ভব হয়নি। যেসব ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না, পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানতে চাইলে ডিপিএইচইর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) জানান, স্থাপিত সোলার ইউনিটগুলোর মধ্যে প্রায় ৭৮ শতাংশ কার্যকর আছে। বাকিগুলোর মধ্যে কিছু কিছু সমস্যা হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন ভৌত অবকাঠামো বিভাগ পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ অনুবিভাগ সূত্র বলছে, প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে সদস্য, ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বরাবর প্রতিবেদন পেশ করতে হবে। যুগ্ম প্রধান (পরিবহন ও সমন্বয়) ভৌত অবকাঠামো বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের আবু মো: মহিউদ্দিন কাদেরীকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির সদস্যসচিব হলেন, সিনিয়র সহকারী প্রধান, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন উইং, ভৌত অবকাঠামো বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশনের আয়েশা সিদ্দীকা। আর সদস্য হলে, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা), জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন প্রতিনিধি। প্রতিবেদন প্রণয়নের পর পিইসি সভা আয়োজন করা হবে এবং উক্ত সভায় বুয়েটের একজন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে।

মূল্যায়ন সভার সভাপ্রধান ও পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, সমাপ্ত প্রকল্পের সম্পাদিত কার্যক্রম এবং প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্মপ্রধানকে (পরিবহন ও সমন্বয়) আহ্বায়ক করে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটি প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন পেশ করবে। প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/764078