২২ জুলাই ২০২৩, শনিবার, ১২:২১

কবর থেকে উঠে মিরপুরে ছাত্রলীগের ওপর হামলা!

-মামলার আসামি সম্পর্কে জানেন না বাদি

মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে তার কর্মশক্তি বন্ধ হয়ে যায় বলেই সবার জানা। তবে মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের সামনে বিএনপির পদযাত্রায় অংশ নেয়া দলটির নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষের সময় কবর থেকে উঠে এসে ছাত্রলীগের ওপর হামলা করে মৃত শ্রমিক দল নেতা আ: জব্বার হাওলাদার ও বাংলা কলেজ ছাত্রদলের সহসভাপতি মৃত শফিকুল ইসলাম (সুমন)। রাজধানীর দারুস সালাম থানায় গত বুধবার (১৯ জুলাই) দায়ের করা একটি মামলা থেকে এমন তথ্যই পাওয়া যায়।

৬২০ জন বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় বাংলা কলেজের অফিস সহকারী মো: মহিদুর রহমানের দায়ের করা মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ১৮ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের পদযাত্রা চলাকালীন বাংলা কলেজের দুই নম্বর মেইন গেটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বাদি মোহাম্মদ রুবেলসহ একাধিক ছাত্রের ওপর হত্যার উদ্দেশে হামলা হয়। তারা বাঁশ-লাঠি নিয়ে হামলা এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এ সময় বাদির একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। বাংলা কলেজের আরেক ছাত্র সাদ্দাম হোসেনের মোটরসাইকেল লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করে হামলাকারীরা।

এজাহার সূত্রে আরো জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও মিরপুরের বিভিন্ন থানা ওয়ার্ড বিএনপির যুবদল ও ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও ডজনখানেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দারুস সালাম থানায় দায়ের করা মামলায় ১২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তবে বাদি যে মামলা দায়ের করেছেন তার ২নং ও ৭৩নং আসামি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে দুই বছর আগে মারা গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলার দুই নম্বর আসামি সাবেক শ্রমিকদল নেতা মো: আ: জব্বার হাওলাদারের ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর মৃত্যু হয়। তিনি ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন। তিনি দারুসসালাম থানা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া মামলার ৭৩নং আসামি মো: শফিকুল ইসলাম (সুমন) এক বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলা কলেজ ছাত্রদলের সহ সভাপতি ছিলেন। মৃত ব্যক্তিরা কবর থেকে উঠে এসে কিভাবে হামলা চালালেন তা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ঘটনার বিষয়ে বাংলা কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সরদার মো: মিলন নয়া দিগন্তকে বলেন, পদযাত্রার দিন বিনা উসকানিতে ছাত্রলীগ আমাদের নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালিয়েছে। তারাই মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। সেই মামলায় আমাদের মৃত নেতাকর্মীরাও বাদ যায়নি। এই মামলা পুলিশের সাজানো মামলা তা জনগণের কাছে স্পষ্ট।

মৃত ব্যক্তিদের আসামি করার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা কলেজের অফিস সহকারী ও মামলার বাদি মো: মহিদুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকারি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে আমরা শুধু একটা অভিযোগ দিয়েছি। মামলায় কাকে আসামি করা হয়েছে সেটা তো পুলিশের বিষয়। পুলিশ বলতে পারবে কাদের আসামি করেছে। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।
এ রকম মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, এসব মামলা বিরোধীমতকে দমনের অন্যতম হাতিয়ার। অতীতেও বিরোধীদের দমনে এমন মামলা দেয়া হয়েছে। এক কথায় এ মামলাগুলো গায়েবি মামলা। এর ফলাফল ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

মৃত ব্যক্তিদের মামলায় অন্তর্ভুক্তির বিষয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল নয়া দিগন্তকে বলেন, এগুলো ভিত্তিহীন, ভুয়া এবং বানোয়াট মামলা। বিরোধীমতকে দমনের জন্য এসব মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এসব মামলা দায়েরের ফলে পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। আমি মনে করি এসব বানোয়াট মামলা দায়েরের জন্য পুলিশের বিচার হওয়া দরকার। সরকার যে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না, সরকার যে বিরোধী মতকে গুরুত্ব দেয় না তার প্রমাণ এসব মামলা।

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, মিরসরাইয়ে মুখোশ পরে দুই যুবলীগ কর্মীর উপর হামলা ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১২৫ জন নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আহত যুবলীগ কর্মী সাজ্জাত হোসেন সজিব বাদি হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে মিরসরাই থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাখাওয়াত হোসেনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব ও সাবেক চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন সেলিমসহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য চলমান আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে আওয়ামী লীগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজেরা ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে। মামলা-হামলা করে আন্দোলনকে থামানো যাবে না। অবিলম্বে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি।’

মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: কবির হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার কমলদহ এলাকায় একটি মোটরসাইকেলে আগুন ও দুই যুবলীগ কর্মীর উপর হামলার ঘটনায় আহত সাজ্জাত হোসেন সজিব বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১২৫ জনকে আসামি করা হয়। এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের কমলদহ এলাকায় যুবলীগের দুই কর্মী সজিব ও মামুনের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা জানান, খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়ার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা সহস্রাধিক আসামি করা হয় এসব মামলায়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে মো: শামীম চৌধুরী বাদি হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দায়েরকৃত মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়াসহ ৩৫৭ জনের নাম উল্লেখ এবং আরো সাড়ে তিন শতাধিক অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। একই সময়ে ইকু বাবু চাকমা নামে শিক্ষানবিস এক আইনজীবী ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অপর একটি মামলা করেছে সদর থানায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আরিফুর রহমান।

এর আগে সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা ও আহত করার ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে ১৫৭ জন বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ আরো ৫-৬ শতাধিক অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করে।

এ দিকে বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের জন্য আবেদন করলেও ঘটনার দুই দিন পরও তা আমলে নেয়নি পুলিশ। এমন অভিযোগ জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়ার।

এ ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেফতারসহ জড়িত আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অফিসে পাল্টা-পাল্টি হামলা, সংঘর্ষ, পৌরসভায় হামলা, ভাঙচুর, মোটরসাইকেলে আগুন, পুলিশের টিয়ার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় সাংবাদিক ও পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/764090