২৭ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৯

হাওরের পানিতে ইউরেনিয়াম আছে কি-না নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট পরীক্ষা করা হয়নি

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, সুনামগঞ্জের হাওরের পানিতে ইউরেনিয়াম আছে কি-না তা নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট পরীক্ষা করা হয়নি। বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্ত করে সে রিপোর্ট জনগণের সামনে প্রকাশ করারও দাবি করেন তারা। 

গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে হাওর এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তাতে সাংবাদিক সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শুধু পানি দেখে বলে দিলাম বা পানি এনে একদিনে বলে দিলাম সেটা না করে আরেকটু সময় নিয়ে যে গবাদি পশুগুলো মারা গেছে, যে পোল্ট্রি মারা গেছে তাদের উপর কিছু রিপোর্ট করে জনসম্মুক্ষে নিয়ে আসলেও মানুষ আশ্বস্ত হতো। ইউরেনিয়াম এবং কয়লাখনি বর্জনে যে নিউজগুলো সরকার করেছে সেগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করা হউক। তার চেয়ে বড় কথা হলো যে, সরকারকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে তা না হলে এই ধরনের বিপর্যয় ভবিষ্যতে ঠেকানো যাবে না।
তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি-অনিয়মের চুলচেরা বিশ্লেষণ হওয়া দরকার। হাওর এলাকায় ঠিকাদারদের অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্থানীয় এমপির বাড়িতে হামলার ঘটনার তদন্তও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে ঠিকাদারদের যে যোগসাজশ আছে তা এতেই স্পষ্ট।
সাংবাদিক সম্মেলনে সুজনের সহযোগী সমন্বয়কারী সানজিদা হক বিপাসা লিখিত বক্তব্যে সাম্প্রতিক সময়ে হাওরাঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে পরিসংখ্যান তুলে ধরে এ দাবি জানান। হাওরাঞ্চল নিয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী এবং সচিবের বক্তব্যরও সমালোচনা করা হয় সাংবাদিক সম্মেলনে।
সুজনের নির্বাহী সদস্য এবং বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আমাদের দেশে মানুষের বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু না হলে সেটাকে দুর্যোগ বলা হয় না। সচিব মহোদয় নাকি বলেছেন কোনো এলাকায় অর্ধেক লোক মারা না গেলে সেখানে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা যায় না, এটা ঠিক নয়। মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা দিয়ে নয়, সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনা করে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা উচিত।
তিনি সরকারকে হাওরাঞ্চলের মানুষকে আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষায় স্থায়ী সমাধানে স্বল্প, দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আগানোর পরামর্শ দেন। একইভাবে ইউরেনিয়াম নিয়ে বিজ্ঞানীদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ারও সমালোচনা করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ।
তিনি বলেন, ওই এলাকায় হাজার হাজার হাস-মুরগি মারা গেছে। মৃত এসব হাস-মুরগি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রকৃত অবস্থা ব্যাখ্যা দেওয়া তাদের উচিত ছিল।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার তার বক্তৃতায় পুরো এক বছর দুযোগপূর্ণ হাওরাঞ্চলে সরকারের ত্রাণসহ কৃষকদের অন্যান্য সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার দাবি জানান।
তিনি বলেন, আগাম বন্যার ফলে এবার ওই এলাকায় ৬ লাখ টন খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে না। আজ দেখতে পেলাম চলনবিলেও আগাম বন্যা দেখা দিয়েছে। সেখানে কাঁচা-পাকা ধান কাটার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। তাই এবার দেশে ফসল ভালো হবে কি হবে না তা নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। দেশে যাতে খাদ্য সংকট না হয় সে জন্য সরকারকে এখনই নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সুজন সম্পাদক ড. বদউল আলম মজুমদার বলেন, যাদের অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে হাওরে বাঁধ ভেঙে গেছে, কৃষকের ফসল তলিয়ে অফুরন্ত ক্ষতি হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। ওই এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, এতে সরকার এত দ্বিধা দ্বন্দ্ব কেন?
সুজন সভাপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অধ্যাপক স্বপন আদনান বক্তব্য রাখেন।

 

http://www.dailysangram.com/post/281469-