২৭ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৬

অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা ২০২১ সালে

অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা হবে ২০২১ সালে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এবং শিক্ষা আইনের নির্দেশনা অনুযায়ী এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল ২০১৮ সাল। এখন ২০২১ সালের মধ্যে লক্ষ্য বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে পাঁচ দফা কর্মপরিকল্পনার একটি ছকও এঁকেছে মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০১৮ সালের মধ্যে সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। ২০১৯ সালে ষষ্ঠ শ্রেণী, ২০২০ সালে সপ্তম শ্রেণী এবং ২০২১ সালে অষ্টম শ্রেণী চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে পাঁচ দফা কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে : স্কুল ম্যাপিং, অষ্টম শ্রেণীর জন্য নতুন করে কারিকুলাম প্রণয়ন, সারা দেশের বিদ্যমান স্কুলগুলোর মধ্যে যাদের অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা হবে তাদের অবকাঠামো নির্মাণ, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানে সক্ষম ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ এবং স্কুল ম্যানেজমেন্ট।
পিডিইপি-৩ এবং ৪এর অধীনে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থায়ন করা হবে। ওই কর্মপরিকল্পনার কিছু কাজ ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে। সারা দেশে স্কুল ম্যাপিংয়ের কাজ করার জন্য বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (ব্যানবেইস) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা আগামী দুই বছরের মধ্যে স্কুল ম্যাপিংয়ের কাজ শেষ করবে। এ জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে পাঁচ কোটি এবং পরবর্তী অর্থবছরে পাঁচ কোটি টাকা প্রদান করা হবে ব্যানবেইসকে। স্কুল ম্যাপিং করা হবে বিদ্যমান স্কুলগুলোকে চিহ্নিত করে, এগুলোর মধ্য থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করার উপযোগী প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হবে। ঢালাওভাবে সব বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী চালু করা হবে না। এতে প্রাইমারি, নি¤œমাধ্যমিক, উচ্চবিদ্যালয়ের সাথে সংযুক্ত সরকারি বেসরকারি প্রাইমারি স্কুল, মাদরাসার সাথে সংযুক্ত ইবতেদায়ি ও দাখিল, এমনকি কওমি মাদরাসাও থাকবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, দেশের বর্তমানে ৮০৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম পর্যায়ে অষ্টম শ্রেণী চালু করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অষ্টম শ্রেণীর জন্য কারিকুলাম প্রণয়ন করা হবে নতুন করে। প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করতে গেলে বিদ্যমান কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা হলে এর গুণগত পরিবর্তন ও পরিমার্জন আনতে হবে। দেশের বিদ্যমান প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। এ প্রাথমিক শিক্ষা কমপিটেন্সি ভিত্তিক। অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা হলে তা শুধু কমপিটেন্সি বেইজড (পারদর্শিতা ভিত্তিক) হলে চলবে না বলে মনে করে মন্ত্রণালয়। এর জন্য কারিকুলামের ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ এরপর যেকোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের এখানেই ইতি ঘটতে পারে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার একটি সনদও দেয়া হবে। এ সনদের গুরুত্ব তখন অনেক বাড়বে। তাই বিদ্যমান অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এখন যে পাঠদান হচ্ছে তা দিয়ে সনদ বা কোনো শিক্ষার্থীর পরবর্তী জীবনের জন্য কোনো কিছুই করতে পারবে না। তাই বিদ্যমান কারিকুলামে সংশোধন ও পরিবর্তন করা হবে।
অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত কাস চালু করার মতো অবকাঠামো এখন দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর নেই। রাতারাতি সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী চালু করা যাবে না। তাই পর্যায়ক্রমে স্কুলগুলোর অবকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এর জন্য বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প-৩ এবং আগামী পিডিপিই-৪ এর আওতায় স্কুলগুলোর অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। স্কুল ম্যাপিং শেষ হলে এটি দ্রুত করা হবে।
অষ্টম শ্রেণীর পাঠদানের উপযোগী শিক্ষক নিয়োগে এখন থেকেই পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায়ও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে। নিয়োগবিধির সংশোধন করা হবে। দেশে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএড কোর্স চালু আছে তাদের অধীনে কী পরিমাণ শিক্ষার্থী শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে এখানে ভর্তি হচ্ছে, তার পরিসংখ্যানও নেয়া হচ্ছে। প্রাথমিকে এত দিন ১০ শ্রেণী ও একাদশ শ্রেণীতে উন্নীত নারীরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য আবেদন করার সুযোগ পেতেন। আগামীতে এ সুযোগটি থাকবে না। কোনো আবেদনকারীর বিএড ডিগ্রি না থাকলে ২০২১ সাল থেকে শিক্ষকতা পেশায় বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে আবেদনের যোগ্যতা হারাবেন। এ ছাড়া এখন যারা প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন, তাদের জন্যও কিছু সুযোগ রাখা হবে বলে সূত্র জানায়, তারা নির্ধারিত ডিগ্রি অর্জন করলে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাখা হবে।
স্কুল ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকেও নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার আগে। অষ্টম শ্রেণীর স্কুলগুলোতে শিক্ষার পরিধি বাড়ানো হলে এখানে আলাদা একটি শিক্ষা বোর্ড এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মতো পৃথক বোর্ড করা যায় কি নাÑ তার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ পর্যক্ষেণ ও পরিচালনার জন্য এখন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) কাজ করছে। আগামীতে ডিপিইর কার্যক্রমকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। ডিপিই আগামীতে নীতিনির্ধারণ এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন ও মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করবে। আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসগুলোকে অধিদফতরে রূপান্তর করার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। বিদ্যমান শিক্ষা অফিসারদের পদ, সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ এবং কালচারাল শিক্ষকের পদ সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে এ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/215461