ত্রাণের অপেক্ষায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বন্যাকবলিত মানুষ :নয়া দিগন্ত
২৭ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৪

তাহিরপুরে এখনো ত্রাণ পৌঁছেনি

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় এখনো ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারগুলোতে পৌঁছেনি কোনো ত্রাণসামগ্রী। এগিয়ে আসেনি অসহায় এই হাওর পাড়ের মানুষগুলোর পাশে সরকারি ও বেসরকারি এনজিও। একে একে সব হাওর ডুবে যাওয়ায় হাজার হাজার কৃষক এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। জীবন বাঁচার একমাত্র হাতিয়ার বোরো ধান হারিয়ে হাওরবেষ্টিত উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর, তাহিরপুর সদর, দক্ষিণ বড়দল, উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের হাজার হাজার কৃষক পরিবারগুলোতে হাহাকার বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঘরে এখন নেই খাবার ও বিশুদ্ধ পানি। হাওরের চার পাশে এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। হাওর পাড়ের বেশির ভাগ পরিবারেই এখন নেই টাকা ও চাল। আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকায় হাওর পাড়ের ওইসব কৃষক পরিবারগুলো উপজেলা সদরে ও নির্দিষ্ট বাজারে যেতেও পারছে না। আর যেসব কৃষক পরিবারের কাছে টাকা আছে তারাই কেবল বাজারে যাচ্ছে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অতিক্রম করে। হাওর ডুবির পরেও সরকারিভাবে কোনো সহায়তা না পাওয়ায় হাওর পাড়ের কৃষক পরিবারগুলোর মাঝে সঞ্চার হচ্ছে। 

জানা যায়, উপজেলার ছোট-বড় ২৩টি হাওরের কাঁচা, আধা পাকা বোরো ধান একবারেই পানিতে তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ২০ হাজার হেক্টরের বেশি। সর্বশেষ শনির হাওর ডুবে যাওয়ায় হাওর পাড়ে সর্বত্রই এখন বুকভরা দীর্ঘশ্বাস,আর্তনাদ আর আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা সদরেই সরকারিভাবে ডিলারদের মাধ্যমে দেয়া ওএমএস চাল তাও সঙ্কুলান হচ্ছেন। ভোক্তভোগীদের। সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পাচ্ছে না দূর-দূরন্ত থেকে আসা অনেকেই। উপজেলা সদরে তিনজন ডিলার দিয়ে প্রতিদিন একটন করে তিনজন ডিলার তিনটন চাল দিচ্ছেন যা তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। সারা দিন অপেক্ষা করে অনেকেই খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন। এই ওএমএসের চাল প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়নের ডিলারদের মাধ্যমে দিলে কিছুটা হলেও রক্ষা পেত হাওরবাসী।
এ দিকে তাহিরপুর উপজেলা বাজারসহ প্রতিটি বাজারেই চালের দোকানগুলোতে চাল নেই। অনেকেই কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বেশি নিয়ে বিক্রি করছেন। অন্য দিকে উপজেলায় উপজেলা পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী অফিস, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ভিজিএফ কার্ডের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দুই-এক দিনের মধ্যে জেলায় নামের তালিকা পাঠানো হবে। তাহিরপুর উপজেলা পিআইও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ১৫৪০০ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এখন যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। আজ-কালের মধ্যে জেলায় পাঠানো হবে। এ কার্ডে কোনো প্রকার অনিয়ম হলে এবং তা প্রমাণিত হলে সাথে সাথে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর জন্য দ্রুত ত্রাণসামগ্রী পাঠানো প্রয়োজন। বোরো ধান হারিয়ে কৃষক পরিবারগুলো এখন বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/215460