১৭ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ৮:৫৭

তালা ঝুলিয়ে আন্দোলনে বেসরকারি শিক্ষকরা


লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। আন্দোলনে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যোগ দেন। গতকাল শিক্ষকদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। দাবি আদায়ে নানা ধরনের সেøাগান দিতে থাকেন তারা। এ ছাড়াও গতকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আসেন অনেক শিক্ষক। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তারা। বিটিএ’র ব্যানারে আন্দোলন হলেও হাজারো সাধারণ শিক্ষক এতে অংশ নেন।

টানা ৬ষ্ঠ দিনের মতো জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন করে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। শুক্রবার মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের গতকাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে সব শিক্ষক-কর্মচারীর চলমান লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানায় বিটিএ। কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে শিক্ষকদের আরও ১০টি সংগঠন। এই সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন (বাশার-জসিম), বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম (সাইদুল-ইসলাম), এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরাম (বাশিফ), বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস), বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (প্রিন্স), জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট, বেসরকারি ভোকেশনাল শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ ও বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম (অপর অংশ)।

শিক্ষক নেতারা জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান।

অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে দেয়া হয়। তা ছাড়া সহকারী প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল না দেয়ায় উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান। এতে সহকারী প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।

গতকাল শিক্ষকরা প্রেস ক্লাব এলাকায় সেøাগান, বক্তব্যে জাতীয়করণের দাবি তুলে ধরেন। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে সরকারের উদ্দেশ্যে শিক্ষক নেতারা বলেন, এখনো সময় আছে। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি মেনে নিন। নইলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে। জাতীয়করণের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্কুলের তালা খুলবে না। তারা বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার আগেই অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছেন। কয়েক বছর ধরে কোনো ধরনের সুবিধা না দিয়েই অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া মানবজমিনকে বলেন, আমাদের এক দফা দাবি, মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ। দাবি না মানা পর্যন্ত এখানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবো। গতকাল স্কুল খুললেও অধিকাংশ স্কুলই ছিল তালাবদ্ধ। জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত এই তালা খুলবে না। আমরা শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কিছু করতে চাইনি। কিন্তু আমরা বাধ্য হয়েছি। সরকারকে সময় দিয়েছি কিন্তু জাতীয়করণ ঘোষণা করা হয়নি। এখন আমাদের আর কোনো পথ খোলা না থাকায় আমরা স্কুলে তালা ঝুলিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।



https://mzamin.com/news.php?news=65019