১৭ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ৮:৪৫

জাতীয়করণের দাবি

শিক্ষকদের ১০ সংগঠন রাজপথে সোচ্চার

ঢাকার বাইরে অনেক স্কুলের শ্রেণিকক্ষে তালা

বেতনবৈষম্য দূর করাসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছেন শিক্ষকরা। স্কুলে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে রাজধানীতে এসে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন তারা। বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি নিয়ে শিক্ষকদের ১০টি সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের কাছে তাদের দাবি জানিয়েছে। এমনকি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকসমাজ আন্দোলন অব্যাহত রাখার বিষয়েও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আজ সোমবার থেকে অবস্থানরত শিক্ষকদের সংখ্যা আরো বাড়বে।

আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, এক সপ্তাহ ধরে তারা তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ে রাজধানীতে এসে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে কোনো ভ্রƒক্ষেপই করা হচ্ছে না। পরে বাধ্য হয়েই গতকাল রোববার সকাল থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক রাজপথে নেমে আসেন। এ সময় জাতীয় প্রেস ক্লাব ও আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল রোববার বিভিন্ন জেলা থেকে ক্লাস বর্জন করে অনেক শিক্ষক ঢাকায় এসে আন্দোলনে শরিক হন।

বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারীকরণের দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গত মঙ্গলবার থেকে অবস্থান করছেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন অন্তত আরো ১০টি সংগঠন। এসব সংগঠনের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস), বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (প্রিন্স), বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন, বেসরকারি শিক্ষক ফোরাম (সাইদুল), বেসরকারি শিক্ষক ফোরাম (মাইনুদ্দিন), ভোকেশনাল শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রধান শিক্ষক পরিষদ এবং জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোটসহ আরো কয়েকটি সংগঠন।

এ দিকে গতকাল রোববার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন অসংখ্য শিক্ষক। তাদের অবস্থান কর্মসূচির কারণে পল্টন থেকে কদম ফোয়ারার দিকের রাস্তা বেশ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যেসব বাস পল্টন থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের দিকে আসছে, তারা ঘুরে পল্টনমুখী বিপরীত রাস্তা দিয়ে পার হচ্ছে। এক লেনে দুইমুখী গাড়ির চলাচলে সৃষ্টি হয় যানজট। কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচিতে থাকবেন বলেও জানান তারা।

শিক্ষকদের অভিযোগ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। একই কারিকুলামে একই সিলেবাসে পাঠদান করিয়েও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক- কর্মচারীদের বেতনে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের থেকে এক ধাপ নিচে বেতন দেয়া হচ্ছে।

অন্য দিকে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। তা ছাড়া বিগত কয়েক বছর ধরে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ অর্থ কেটে নেয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করা হলেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট করতে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষক। তাই স্মার্ট শিক্ষক পেতে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারীকরণের বিকল্প নেই। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে জমা নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারীকরণ করতে সরকারের খুব বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে না বলে মন্তব্য করেন তারা। যদিও ঢাকায় বৃহৎ পরিসরে আন্দোলনের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের স্কুলগুলোতে আন্দোলনের ঢেউ লেগেছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা তাদের স্কুলের শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

শিক্ষক নেতারা জানান, শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন অনেক স্কুলের শিক্ষকগণ। এর মধ্যে ঢাকা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নোয়াখালী, বরিশাল, পাবনা, কুমিল্লা, কক্সবাজার, সিলেটসহ দেশের প্রায় অধিকাংশ জেলার বেশির ভাগ স্কুলের শিক্ষকরা তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করছেন।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, আমরা শিক্ষকরা নানাভাবে বঞ্চিত। তাই আমাদের এক দফা দাবি, মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা সারা দেশের শিক্ষকদের নিয়ে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। তিনি আরো জানান, সরকার যদি আমাদের দাবির প্রতি কোনো গুরুত্ব না দেয় বা দাবি না মেনে নেয় তাহলে প্রয়োজনে আমরা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেবো। আমরা দাবি আদায় করেই ক্লাসে ফিরব।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বাশিস) সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি গতকাল রোববার সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের দাবি যৌক্তিক এবং ন্যায়সঙ্গত। জাতীয়করণের এই সুবিধা ছাত্র শিক্ষক সবারই দাবি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বন্ধ করে শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলাতে চাই না। তবে এটা আমাদের অনেকটা প্রতিকী কর্মসূচি। আমরা ১৯ বছর ধরেই জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছি। উৎসব বোনাস নিয়ে সরকার আমাদের সাথে তামাশা করছে। তাই আমাদের দাবি সরকার আমাদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি মেনে নিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/762813/