১৬ জুলাই ২০২৩, রবিবার, ১২:৩৮

তিন জেলায় পানিবন্দি ২১ হাজার পরিবার

তিস্তার পানির তোড়ে শুক্রবার রাতে ভেঙে গেছে পাশাপাশি থাকা সদ্যোনির্মিত দুটি ব্রিজের সামনের কাঁচা রাস্তা। তার মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের চরবৈরাতি (হাজিরহাট) থেকে গতকাল তোলা।

উজানে বৃষ্টিপাত কমে আসায় উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আজ নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হতে পারে। তবে কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এই তিন জেলায় ২১ হাজার পরিবার এখনো পানিবন্দি অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চলতি মাসে দেশে নতুন করে বন্যা হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পাউবো।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি স্থিতিশীল থাকলেও যমুনার পানি বাড়তে পারে। এ সময় যমুনা নদী ফুলছড়ি ও বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপত্সীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।
তবে দ্রুতই পানি নেমে যেতে পারে।

পাউবো জানিয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তত্সংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে এসেছে। ফলে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত এ অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানি কমতে পারে।

এ ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টা (সোমবার সকাল ৬টা) পর্যন্ত কমতে থাকবে।
বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির অবসানের পর চলতি মাসে দেশে নতুন করে আর বন্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পাউবোর কর্মকর্তারা।

পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপত্সীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম স্টেশনে বিপত্সীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম বড়ুয়া গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উজানে বৃষ্টিপাত উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। ফলে উত্তরাঞ্চলে নদ-নদীর পানি কমছে। তবে তিস্তা ছাড়া অন্য নদ-নদীগুলোর পানি একটু ধীরগতিতে কমছে।

আগামী পাঁচ দিন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’
ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পার্থ প্রতীম বড়ুয়া বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বাড়ছে। জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টের ওপরের অংশ ব্রহ্মপুত্র ও নিচের অংশ হলো যমুনা। মাঝের পয়েন্ট দিয়ে তিস্তার পানি যমুনার ওপর এসে নামছে। যে কারণে ব্রহ্মপুত্রের চেয়ে যমুনার পানি কিছুটা দ্রুত বাড়ছে। ফুলছড়ি ও বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে রবিবার যমুনার পানি বিপত্সীমার কাছাকাছি উঠলেও দ্রুতই আবার নেমে যেতে পারে।’

কুড়িগ্রামে পানিবন্দি ১৫ হাজারের বেশি পরিবার : জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৪৫টি ইউনিয়নের ১৮৫টি গ্রামের ১৫ হাজার ৭২০টি পরিবারের ৬২ হাজার ৮৮০ জন পানিবন্দি অবস্থায় আছে। এর মধ্যে নদীভাঙনের শিকার হয়েছে এক হাজার ৬৬৫টি পরিবার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিন-চার দিন ধরে পানিবন্দি পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাড়ির ভেতরে পানি ওঠায় বাসিন্দারা ঠিকমতো রান্নাবান্না করতে পারছে না। নলকূপ ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। পাশাপাশি টয়লেট নিমজ্জিত থাকায় স্যানিটেশন সমস্যাও প্রকট হয়ে উঠেছে। দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য সংকটও।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সন্ন্যাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে সারডোব গ্রামের চারটি পরিবার। সেখানে আশ্রয় নেওয়া রাশেদা বেগম জানান, বাড়িতে পানি ওঠায় তিন দিন আগে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ আশ্রিত পরিবারগুলোর।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ জানান, এরই মধ্যে ২২৫ টন চাল, আট লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৩০০ প্যাকেট শুকনা খাবার উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা বিতরণ করা শুরু হয়েছে।

নীলফামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ হাজার পরিবার : জেলার ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেজবাহুর রহমান জানান, তিস্তার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশা চাপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের পাঁচ হাজার পরিবার। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের এক হাজার ২৫০টি পরিবার।
লালমনিরহাটে ১৩টি স্কুল প্লাবিত : গতকাল বিকেল থেকে লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলার পানি কিছুটা কমলেও নদীতীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। তিস্তার পানি উপচে প্লাবিত জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘সদর উপজেলা ও আদিতমারী উপজেলার ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।’

রংপুরে ডুবেছে ২০০ হেক্টর বাদামক্ষেত : রংপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলার চর এলাকার প্রায় ২০০ হেক্টর বাদামক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।
সিরাজগঞ্জে প্লাবিত পাঁচ উপজেলার চরাঞ্চল : সিরাজগঞ্জ জেলায় দ্রুতগতিতে বাড়ছে যমুনার পানি। প্লাবিত হয়েছে নদী তীরের পাঁচটি উপজেলার চরাঞ্চল। তলিয়ে যেতে শুরু করেছে বসতবাড়ি। পাশাপাশি কাজিপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায় দেখা দিয়েছে নদীভাঙন।

সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়া মুনসী জানান, গত কয়েক দিন ধরে কাওয়াকোলা ইউনিয়নের হাট বয়রা, ছোট কয়রা, দোগাছি ও কাওয়াকোলা গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব অঞ্চলের শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

রাজবাড়ীতে ফসলের ক্ষেতে পদ্মার পানি : রাজবাড়ী জেলায় পদ্মার পানি বেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকায় প্রবেশ করছে। ফলে এসব এলাকার আমন ধান, ধানের বীজতলা ও পাটক্ষেতে পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/07/16/1299078