১৬ জুলাই ২০২৩, রবিবার, ১২:২৫

ডেঙ্গুতে এক দিনে মৃত্যু ৭ হাসপাতালে ভর্তি ১৬২৩

কারো চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে কেউ বমি করছে

সারা দেশে রেকর্ড ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলো এই সময়ে এক হাজার ৬২৩ জন ভর্তি হয়েছেন। চলতি মৌসুমে এর আগে এত অধিক সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়নি। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। সারা দেশের হাসপাতালে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন আছে ৪ হাজার ৯৪৭ জন।

অন্য দিকে রাজধানীর হাসপাতালগুলো এখন ডেঙ্গু রোগীর স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না। ঢাকা শহরের ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গতকালই ভর্তি হয়েছে এক হাজার ১৬৪ জন এবং এই ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩ হাজার ২৩৮ জন। রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য সরকারি হাসপাতালে নির্ধারিত বেড নেই। যারা আসছে এখন তাদের সবাইকে ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে অথবা বেডের চিকিৎসাধীন রোগীকে অন্যত্র সরিয়ে অথবা তাকে ছাড়পত্র দিয়ে নতুন ভর্তি করতে হচ্ছে।

রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে এখন ডেঙ্গু রোগীতে ঠাসা। ৫০০ বেডের এই হাসপাতালে বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীই ভর্তি আছে ৫৮০ জন। গতকাল শনিবারও এই হাসপাতালে ২৮০ জন ডেঙ্গু রোগীকে নতুন করে ভর্তি করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের সিটগুলো ভর্তি, কোনো স্থান নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের বাইরে ফ্লোরে রোগীদের স্থান করে দিয়েছেন চিকিৎসার জন্য। সবাইকে হাসপাতালের বিছানাও দিতে পারেননি। মশারি টানানোর মতো জায়গাও নেই। তারপরও রোগীরা এখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গতকাল শনিবার বিকালে মুগদা হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড ও এর বাইরে এ ধরনের চিত্র দেখা গেছে। বিছানার ব্যাপারটা রোগীদের নিজের ব্যবস্থাপনায় হচ্ছে। কেউ মাদুর বিছিয়ে শুয়ে আছেন, কেউ শুধু একটি চাদর বিছিয়ে আছেন। কেউ কিছুক্ষণ পর পর বমি করছেন বালতিতে। কেউ স্ট্যান্ডসহ পুশ করা অবস্থায় স্যালাইনের ব্যাগ নিয়ে হাঁটছেন। কেউ কেউ আল্লাহ আল্লাহ বলে কাতরাচ্ছেন। এমন দৃশ্য মুগদা হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের সর্বত্র।

মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, গতকাল বিকালের দিকে ইমার্জেন্সিতে যে ক’জন রোগী এসেছেন এর ৮০ শতাংশ রোগীই ডেঙ্গু আক্রান্ত। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের দেখে যাকে ভর্তি করা দরকার তাকে তিনি ভর্তির ব্যবস্থা করছেন আবার যাকে ভর্তি না করলেও চলে তাকে ওষুধ দিয়ে ডেঙ্গু টেস্ট করিয়ে আবার এখানে এসে ডাক্তার দেখাতে বলে দিচ্ছেন। ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসারকে দেখা গেছে, তিনি প্রতি এক মিনিটে একজন করে রোগী দেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন এবং এদের বেশির ভাগেরই ডেঙ্গু লক্ষণ রয়েছে। কেউ বলছেন, গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, কিছুক্ষণ পর পরই বমি হচ্ছে। কেউ এসেছেন কিছু খেতে পারছেন না, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা। কেউ চোখে রক্ত জমাট নিয়ে এসেছেন ডাক্তারের কাছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো ডেঙ্গু জীবাণুতে আক্রান্ত হলে তার লক্ষণ কী, শরীরে কী লক্ষণ দেখা দিলে কখন কী করতে হবে তা জানা নেই। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যের ডা: আহমদ পারভেজ জাবীন বলেন, ডেঙ্গু বিষয়ক যেসব প্রচারণা রয়েছে তা যথেষ্ট নয়। সাধারণ মানুষের বোঝার মতো করে প্রচারণাগুলো হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে ডেঙ্গু বিষয়ক সচেতনতা কর্মসূচি নিতে হবে, তাহলে মানুষের উপকারে আসবে। তিনি বলেন, জ্বর হলেই পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে যে জ্বরটি ডেঙ্গু সংক্রমণের কারণে হয়েছে কি না। নিশ্চিত হলে যে কোনো চিকিৎসকের কাছে গেলেই সাধারণ চিকিৎসা পাওয়া যাবে, এ জন্য বিখ্যাত কোনো ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। কারণ স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে ডেঙ্গু চিকিৎসার গাইডলাইন দেয়া আছে। তিনি রোগীদের উদ্দেশে বলেন, ডেঙ্গু হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে। এ সময় খাবার স্যালাইন বেশ উপকারে আসে। শরীরে লাল র্যাশ দেখা দিলে অথবা চোখে রক্ত এসেছে এমন দেখলে দেরি না করে সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/762571/