১৬ জুলাই ২০২৩, রবিবার, ১২:২৪

সবার চাওয়া সুষ্ঠু নির্বাচন সমাধান কোন পথে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের সফরে সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও সুশীল সমাজের সাথে আলোচনায় বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার অভিন্ন চাওয়া পরিষ্কার। তবে নির্বাচন কিভাবে কোন উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে তার কোনো পথনির্দেশনা এখনো কারো সামনে নেই। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দল এই লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংলাপের ওপর প্রাধ্যন্য দিলেও সরকারি দল দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন করার কথা আগের মতোই জোর দিয়ে বলে আসছে। অন্য দিকে বিএনপি তার সমমনাদলগুলো বলছে, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এই লক্ষ্যে বিদেশী কূটনীতিকদের সফরকালীন বিএনপি ও সমমনারা সরকারের পতন ও কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবির আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। দুই পক্ষের এই অনড় অবস্থানের মধ্যেই সঙ্কটের সমাধান কোন পথে হতে- এ প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশী বিদেশী এবং সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বক্তব্য অনুযায়ী সবার চাওয়াই যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানই হয়ে থাকে তাহলে দুই পক্ষকেই শেষ পর্যন্ত সংলাপের পথেই হাটতে হবে। সংলাপ ও তার ভিত্তিতে সমঝোতা না হলে দেশে আবারো সংঘাত-হানাহানি হতে পারে।

এ ব্যাপারে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, এই অবস্থায় আলোচনা ছাড়া কোনো সমাধান হবে না। সংলাপ করতেই হবে। না হয় দেশের গতি প্রকৃতি কোন দিকে যায় তা বলা যাচ্ছে না।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক বলেন, দুই দলের অনড় অবস্থায় সংলাপের আশা অতি ক্ষীণ বলে প্রতীয়মান হলেও সংলাপ ছাড়া পরস্পর বিরোধী অবস্থান সবার জন্য অশনিসঙ্কেত। এতে দেশ অশান্ত হবে। সংঘাত-হানাহানি ঘটবে। ক্ষতি হবে দেশের।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সংলাপের কথা বলেছে। কিন্তু তারা সরাসরি যুক্ত হবে না বলে উল্লেখ করেছে। কিন্তু তাদের অনুরোধ জানালে সংলাপের বিষয়ে জড়িত হতে পারে। সংলাপ অবশ্যই হওয়া দরকার। সংলাপ না হলে সমাধান হবে না।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলগুলোর দাবির পাশাপাশি গত কয়েক মাস ধরেই বিদেশী কূটনীতিকদের তৎপরতার বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুুতে। সর্বশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরে নির্বাচন প্রসঙ্গটি সব কিছুর ওপরে স্থান পায়। ফলে এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টিতে বিদেশী প্রভাব নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এসব প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন পর্যায়ে পৃথকভাবে বৈঠক করে তাদের চাওয়া ও মনোভাব জানিয়ে দিয়েছে। তাদের দেয়া বার্তা অনেকটাই পরিষ্কার হলেও সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে সেটি পরিষ্কার নয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভিসানীতি ঘোষণার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা আলোচনা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তারপরই তাদের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রতিনিধি দল এখনো বাংলাদেশে রয়েছে। গতকাল তারা পৃথকভাবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতের সাথে বৈঠক করেছে। সব বৈঠকেই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ছাড়ার আগে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছে

চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে হতে পারে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। বিরোধী দলগুলোর দাবি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হওয়ার কারণে নির্বাচন একপেশে ও সরকারি দলের প্রভাবিত নির্বাচন হয়েছে। এতে আগে থেকেই সাজানো প্রশাসন সরকারের পক্ষে কাজ করে বিরোধীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিবেশই নষ্ট করে দিয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচিত হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে সরকারি দল দেড় শ’র বেশি আসনে ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। আর গত নির্বাচনে ভোটের দিনের আগের রাতেই প্রশাসনের সহায়তায় নির্বাচন হয়েছে বলে প্রায় সবমহল থেকেই অভিযোগ রয়েছে। যেখানে বিরোধীদল মাত্র সাতটি আসনে বিজয়ী হয়েছে। বিরোধীদের দাবি প্রধানমন্ত্রী ও সরকারি দল সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও কথা রাখেননি।

এজন্য এবার আর তাদের বিশ্বাস করার সুযোগ নেই। এজন্যই তারা আগে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। এরপর নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। যেটা তাদের এখন এক দফা দাবিতে পরিণত হয়েছে। অন্য দিকে সরকারি দল শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখেই নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড় রয়েছে। যেটা তাদেরও এক দফা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ঘোষিত এই ভিসানীতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশী নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এবং পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু-সহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল গত ১১ জুলাই থেকে তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ সফর করে ১৪ জুলাই ভোরে দেশ ত্যাগ করেছেন। সফরকালে তারা প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী ও সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়া নাগরিক সমাজের সদস্য, রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং মানবিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করেছেন তারা। এসব বৈঠকে উজরা জেয়া জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, আমি যে বার্তার ওপর জোর দিতে চাই তা হলো-সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও ন্যায্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার জন্য সব পক্ষকে আহ্বান জানানো। উজরা জেয়া আরো বলেন, আসুন আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে দেই।

এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের প্রতিও গুরুত্বারোপ করেছে দেশটি। উজরা জেয়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক মতবিরোধ নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রত্যাশা করেন। নির্বাচনের আগে বড় দুই দলের মধ্যে সংলাপের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এই মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, ‘আমরা সবাই সংলাপ চাই। তবে এই প্রক্রিয়ায় আমরা সরাসরি যুক্ত নই।’

দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র তার ভূমিকা রাখতে চায় উল্লেখ করে উজরা জেয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সরকারের একাধিক মন্ত্রী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক মানবাধিকার নীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় বলেও উল্লেখ করেন উজরা জেয়া। তিনি বলেন, শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নির্বাচন এবং সুশাসনে ব্যাপকসংখ্যক বাংলাদেশীর অংশগ্রহণের ওপর বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। একটি অংশগ্রহণমূলক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা থাকবে, যেখানে সব নাগরিকের বিকাশ হবে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশাল জনসভা দেখেছি। স্বস্তির বিষয়টি হচ্ছে, কোনোরকম সহিংসতা ছাড়াই সেটা হয়েছে। আমরা যেমনটা দেখতে চাই, এটা তার সূচনা। ভবিষ্যতেও এটির প্রতিফলন থাকবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

এ দিকে নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণে নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গত ৯ জুলাই ১৫ দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছে। আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত তাদের ঢাকায় অবস্থান করার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিনিধি দলটি সরকারের কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের সদস্য, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ অনেকের সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে। সেখানে তারা আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেছে বলে গণমাধ্যমকে জানান সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী। এছাড়া গতকাল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দলের সাথে বৈঠক করেছে তারা। এসব বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিষয়টি জানিয়েছে। তারা বলেছেন, আগে সরকারের পদত্যাগ করে স্ষ্ঠুু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এরপর সংলাপ হতে পারে, তার আগে নয়। আর জাতীয় পার্টি তাদের কাছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারকে সংলাপের আয়োজন করতে হবে বলে জানিয়েছে।

জানা যায়, ইইউ প্রতিনিধি দল তাদের কার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেপ বোরেলের কাছে পাঠাবে। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ মিশন এখানে পাঠানোর উপযোগী, সুপারিশযোগ্য কিংবা সম্ভব কি না। ২০১৮ সালে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠায়নি।

এ দিকে বর্তমানে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করলেও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পরিবেশ তৈরির ব্যাপারে এখনো কোনো সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দু’পক্ষের সংলাপের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, সংলাপ না হলে আবারো সঙ্ঘাত-হানাহানি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা দেশের জন্য ভালো হবে না।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের পরিস্থিতি এখন বাইরে চলে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সফর করছে। কিন্তু তারা এখনো মুখ খুলে সব কিছু বলেনি। তারা হয়তো পরে বলবে। তিনি আরো বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ বর্তমানে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে রয়েছে। এ অবস্থায় আলোচনা ছাড়া সমাধান হবে না। সংলাপ করতেই হবে। না হলে দেশের গতি প্রকৃতি কোন দিকে যায় তা বলা যাচ্ছে না।

বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদিন মালিক নয়া দিগন্ত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবাই সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু তাদের সফরের কারণে স্ষ্ঠুু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়ে গেছে বা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে এমন বলা যাবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে দেশের রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও জনগণকে মিলে। তাদের সফরে হয়তো স্ষ্ঠুু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে প্রচ্ছন্ন চাপ দিয়ে থাকতে পারে। তারা তো আর জোর করে কোনো কিছু বলে না। এটা কূটনৈতিক পরিভাষাও নয়। তারা কৌশলে বলে থাকে। তিনি আরো বলেন, বিএনপি বলছে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচন হবে। তাদের এ অনড় অবস্থায় সংলাপের আশাও অতি ক্ষীণ। কিন্তু আমার মতে সংলাপ ছাড়া পরস্পর বিরোধী অবস্থান সবার জন্য অশনিসঙ্কেত। এতে দেশ অশান্ত হবে। সঙ্ঘাত-হানাহানি ঘটবে। ক্ষতি হবে দেশের।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, সম্প্রতি দু’টি বড় সমাবেশ হয়েছে। কিন্তু তাতে কি সমাধান হয়েছে? তাদের মনোভাব কি পরিবর্তন হয়েছে? তারা তো এখনো আগের অবস্থানেই অনড় রয়েছে। ২০১৮ সালে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তারা কথা রাখেনি। এ কারণেই দেশের আজকের এ অবস্থা। ওই সময় নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তো এ অবস্থা হতোই না। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে একটি নিরপক্ষে, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। এ ক্ষেত্রে তারা সংলাপের কথা বলেছে। কিন্তু তারা সরাসরি যুক্ত না বলে উল্লেখ করেছে। কিন্তু আমার জানা মতে তাদের অনুরোধ জানালে যুক্তরাষ্ট্র সংলাপের বিষয়ে জড়িত হতে পারে। সংলাপ অবশ্যই হওয়া দরকার উল্লেখ করে ড. বদিউল আলম বলেন, সংলাপ না হলে সমাধান হবে না। দু’পক্ষই অনড় থাকলে আবারো সহিংসতা হবে। নির্বাচন কমিশনের অধীনে সংলাপ হলে তা বিরোধীপক্ষ মানবে না বলে মনে করেন তিনি। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নও মধ্যস্থতা করতে পারে। তিনি বলেন, এমন কেউ হতে হবে যাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো স্বার্থ নেই।


https://www.dailynayadiganta.com/first-page/762580/