১৫ জুলাই ২০২৩, শনিবার, ৮:২৫

জুলাইয়ের ১৪ দিনে ডেঙ্গুতে ৪৬ জনের প্রাণহানি

হাসপাতালে প্রায় ১০ হাজার

লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুতে রেকর্ড হচ্ছে। ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে শুক্রবার ছুটি থাকায় কিছু কিছু হাসপাতাল ডেঙ্গুর তথ্য দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে। জুলাই মাসের ১৪ দিনে ৪৬ জনের প্রাণহানি এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ হাজার ৮৫৩ জনে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩ জনে। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ১৯ জন।

গতকাল শুক্রবার সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৪৯ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৮৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ২৬৫ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ৪৪৯ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২২০ জনে। ঢাকার ৫৩টি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ৭৫৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৪৬৫ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৮৩১ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৩ হাজার ৫১৮ জন।

অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাই মাসে শনাক্ত ৯ হাজার ৮৫৩ জন এবং মারা গেছেন ৪৬ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই।

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ৪৮ জন
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল শুক্রবার ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে আরও ৪৮জন। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র বলছে, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ৪৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২১৩জনে। এছাড়া শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন। গতকাল বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ডে্গংু রোগী ভর্তি ছিল ২৮৯ জন।

এদিকে হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে রোগী।তাই জরুরি পরিস্থিতিতে কোভিড ইউনিটকে ডে্গংু ওয়ার্ডে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং ডেঙ্গু চিকিৎসা সুবিধা সহজীকরণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ৩৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।গত বৃহস্পতিবার এ কমিটি গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে প্রধান করে কমিটিতে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেমকে সদস্য সচিব করা হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিকে সদস্য করা হয়। মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ ও ডেঙ্গু চিকিৎসা সুবিধা সহজ করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ কমিটি গঠিন করা হয়। এতে ১১টি সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বলা হয়। তার মধ্যে মশার লার্ভা পাওয়া গেলে ভবন মালিককে জরিমানার আওতায় আনা হবে। এটি নিশ্চিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকাকালীন প্রতিদিন কমপক্ষে দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে পরিচ্ছন্নতা বিভাগকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হবে। বছরব্যাপী ডেঙ্গু প্রতিরোধ বা মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা, ডেঙ্গু প্রতিরোধে গঠিত ওয়ার্ড কমিটিকে আরো সক্রিয় করে ওয়ার্ড পর্যায়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কোভিড ইউনিটকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রূপান্তরের বিষয়ে বৈঠক হয়েছে চমেক হাসপাতালে।রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিজনিত জরুরি পরিস্থিতিতে চমেক হাসপাতালের কোভিড ইউনিটকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। সেক্ষেত্রে কোভিড রোগীকে চমেক হাসপাতালের পরিবর্তে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রাখা হবে। তবে জটিল কোভিড রোগীদের প্রয়োজন হলে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে। চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যখন চাইবে, তাদের কোভিড ইউনিটকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রূপান্তর করতে পারবেন। আর কোভিড ইউনিটকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হলে সেখানে কোভিড রোগী ভর্তি রাখা হবে না। কোভিড রোগীদের চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।
খুমেক হাসপাতালে ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি

খুলনা ব্যুরো : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একদিনে ৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালে মোট ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। আর গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬ জন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (আরএমও) ডাক্তার সুভাষ রঞ্জন হালদার জানান, চলতি বছরে খুলনায় সর্বমোট ১০৯ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৭ জন রোগী ভর্তি হয়। বর্তমানে হাসপাতালে ২৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।

https://dailysangram.info/post/529942