১৩ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৭

সরবরাহ সংকট, মাছ-সবজির দাম বাড়তি

রাজধানীর বাজারগুলোতে মাছ ও সবজির দাম আরো বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকায় সপ্তাহের ব্যবধানে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ সংকটে নতুন করে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দামও। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

সবচেয়ে কষ্টে আছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
নতুন করে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমিয়েছে সরকার। এতে এখন থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হবে ১৭৯ টাকা। গত মঙ্গলবার দাম কমানোর এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে দুই দিন চলে গেলেও নতুন দামের সয়াবিন তেল বাজারে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিক্রেতারা পুরনো বোতলজাত তেল আগের দামেই বিক্রি করছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, জোয়ারসাহারাসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া মাছ থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। প্রকারভেদে মাছের কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত।

বড় ও মাঝারি আকারের তেলাপিয়া মাছের কেজি ২২০ থেকে ২৬০ টাকা, ছোট তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২১০ টাকা। আকারভেদে পাঙ্গাশ মাছের কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। প্রতি কেজি চাষের নলা-রুই মাছ বিক্রি করা হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। ৮০০ গ্রাম ওজনের রুই মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, এক কেজি ওজনের ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা, দুই কেজি ওজনের ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। বড় আকারের কাতল মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

পাবদা মাছ আকারভেদে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, মাঝারি চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞা ২৩ জুলাই পর্যন্ত থাকবে। এতে বাজারে সরবরাহ কমে রেকর্ড দামে বিক্রি করা হচ্ছে ইলিশ। এক কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার ১০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি এক হাজার ৮০০ টাকা, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়, সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়। ফার্মের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়।

রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো. রুবেল হোসেন বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, মাছের দাম ঈদের আগে থেকেই বাড়তি, ঈদের পর নতুন করে আবার বেড়েছে। মূলত বাজারে মাছের সরবরাহ কমে যাওয়ায় এখন দাম বাড়ছে। ঈদের পরে প্রতিটি মাছের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

রাজধানীর রামপুরার ইলিশ মাছ বিক্রেতা মো. হাসান বলেন, সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে, যার কারণে বাজারে ইলিশের সরবরাহ সংকট। এই কারণেই ইলিশের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

এদিকে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আদার দাম কিছুটা কমেছে। ঈদের আগে কেরালা জাতের আদা প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হয়, দাম কিছুটা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৬০ টাকায়। তবে রসুনের দাম কিছুটা বেড়েছে। দেশি রসুন কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। খোলা চিনি প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। আলু কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজার রাজধানীতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। অন্যান্য সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়লেও বেশি বেড়েছে টমেটো ও করলার দাম। বাজারে দেশি টমেটোর সরবরাহ নেই, আমদানি করা টমেটোর কেজি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা। করলা কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, উচ্ছে (ছোট করলা) ৯০ থেকে ১০০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচুমুখি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, দেশি গাজর ১০০ টাকা, চীনের গাজর ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, চালকুমড়া প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং লাউ প্রতিটি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর বাড্ডার সবজি ব্যবসায়ী মো. হিরণ মিয়া বলেন, এখন সবজির মৌসুম নেই। তাই বাজারে সবজির সরবরাহ কম। কারওয়ান বাজারে এখন আগের মতো সবজি আসছে না, যেগুলো আসছে সেগুলো বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

নতুন করে মাছ ও সবজির দাম বৃদ্ধিতে স্বল্প আয়ের মানুষ বাজারে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। রামপুরা কাঁচাবাজারে বৃহস্পতিবার কথা হয় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে তাদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছে। অল্প বেতনে চাকরি করি, তিন বছরে মাত্র এক হাজার ৫০০ টাকা বেতন বেড়েছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে বাজারের খরচ বেড়ে গেছে দ্বিগুণের বেশি। বাধ্য হয়ে গত বছর স্ত্রী ও তিন বছরের এক মেয়েকে নিজের বাড়ি ভোলায় পাঠিয়ে দিয়েছি। তার পরও মাস শেষে আয় ও ব্যয়ের সঙ্গে হিসাব মেলাতে পারছি না।’

https://www.kalerkantho.com/online/national/2023/07/14/1298491