১২ জুলাই ২০২৩, বুধবার, ১০:৪৬

আইসিডিডিআর,বি’র গবেষণা

গর্ভবতী ৫৪ শতাংশ নারী কম ওজন সমস্যায় ভুগছেন

গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যে হারে ওজন বাড়ে, সে হারে তা বাড়ছে না ৫৪ শতাংশের। দেশে গর্ভাবস্থায় নারীদের স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজন বাড়ছে। অর্থাৎ প্রতি ২ জন মায়ের মধ্যে ১ জন মায়ের অপর্যাপ্ত ওজন বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে গর্ভে থাকা সন্তানের ওপরও। এর জন্য খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি ও ভুল ধারণা দায়ী বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। ফলে প্রসবের পর এসব শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণের ঝুঁকি দ্বিগুণ হচ্ছে। অপর্যাপ্ত ওজন বৃদ্ধির কারণে বলা হয়েছে, মায়ের কম উচ্চতা, বেশি বয়সে গর্ভবর্তী (৩৫ বছরের উপরে), আর্সেনিক পানি পান করা, পারিবারিক আয় কম, শিক্ষার অভাব, খাদ্য নিরাপত্তা ও সিজার বিষয়গুলো সামনে এসেছে। কম ওজন নিয়ে জন্ম নিচ্ছে ৩৯ শতাংশ নবজাতক। গতকাল আইসিডিডিআর,বি’তে মাতৃত্বকালীন পুষ্টি নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. এসএম তাফসির হাসান।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইসিডিডিআর,বি) ২০১২-২০১৪ সালে তিন বছরে মাতৃত্বকালীন পুষ্টি নিয়ে জরিপ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মতলব উপজেলার ১ হাজার ৮৮৩ জন নারীর মধ্যে ৫৪ শতাংশ গর্ভবতীর কম ওজন বেড়েছে।

২০ শতাংশের ওজন বেড়েছে অতিরিক্ত হারে অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। আর ২৪ শতাংশ গর্ভবতীর সঠিকভাবে ওজন বেড়েছে। কম ওজন নিয়ে জন্ম নিচ্ছে ৩৯ শতাংশ শিশু অর্থাৎ প্রতি ১০ শিশুর প্রায় ৪ জন। ডা. এসএম তাফসির হাসান জানান, কম ওজন বৃদ্ধি ও বেশি ওজন বৃদ্ধি দু’টিই ক্ষতিকর। গর্ভবতী মায়ের কম ওজন বাড়লে, শিশুদেরও কম ওজন নিয়ে জন্মানোর ঝুঁকি থাকে। এতে শিশু স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় না। প্রয়োজন হয় সিজারের। আবার প্রয়োজনের তুলনায় শিশুর ওজন বৃদ্ধি বা শিশু বড় হলে, সেক্ষেত্রেও সিজারের প্রয়োজন পড়ে। অপুষ্টির দুষ্টুচক্র থেকে বের হয়ে আসতে হলে মায়ের স্বাস্থ্যের পুষ্টি বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করার সুপারিশ করেন এই গবেষক। মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য বিনিয়োগ করলে শিশুরও উপকার আসবে। মতলবে পরিচালিত এই গবেষণাটি সারা দেশের চিত্র তুলে ধরে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে এই গবেষক বলেন, মতলবে আইসিডিডিআর,বি ৬৬ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে। সেখানের মানুষদের গর্ভাবস্থায় পুষ্টি ও অন্যান্য অবস্থা নিয়ে নিয়মিত জরিপ করা হচ্ছে। অর্থাৎ এলাকাটির নারীরা আইসিডিডিআর,বি’র নজরদারিতে রয়েছে।

সেখানে যদি এই হার হয়, তবে সারা দেশের চিত্র এর থেকে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবারের প্রয়োজন। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটসহ ১০ ধরনের উপাদান প্রয়োজন। এগুলো ঠিক থাকলে মা ও শিশুর ওজন বাড়ার হার ভারসাম্য থাকবে। সাধারণ সময়ের তুলনায় গর্ভাবস্থায় সব ধরনের উপাদানই বেশি বেশি প্রয়োজন হয়। তাই মায়েরা যাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে সে বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে তাদের স্বামীদের। এই বিষয়ে আমাদের গাইডলাইনে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের করা একটি গাইডলাইন ধরে যতটুকু আমাদের দেশের জন্য কার্যকর তা গ্রহণ করে এই জরিপ করা হয়েছে, পুরোপুরি নয়। তবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য গাইডলাইন তৈরির কাজ শুরু করেছে। এতে ১৬ জন বিজ্ঞানী কাজ করছেন। বাংলাদেশও এর মধ্যে রয়েছে।

অনুষ্ঠানে গর্ভাবস্থায় খাদ্য গ্রহণ সংক্রান্ত অপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন আইসিডিডিআর,বি’র পুষ্টি গবেষণা বিভাগের বিজ্ঞানী ডা. মোস্তফা মাহফুজ। এ সময় নিজের তথ্যচিত্রে গর্ভবতী নারীদের খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত এবং দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি কেমন তা তুলে ধরেন তিনি। যেখানে ২০২১ সালের শেষে চাঁদপুরের মতলব ও ঢাকার মিরপুর বস্তিতে পরিচালিত জরিপে দেখানো হয়, দুই অঞ্চলের নারীরাই পুষ্টি উপাদানগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে পাচ্ছেন না। এরমধ্যে মিরপুর বস্তি (শহর) ও মতলবের (গ্রাম) গর্ভবতী নারীরা তাদের খাদ্য থেকে যথাক্রমে ৯০ ও ৯৩ শতাংশ ক্যালরি, ৭৮ ও ৭৯ শতাংশ প্রোটিন, ৩০২ ও ২৫২ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ২৩ ও ৪৬ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ৪৩ ও ৪১ শতাংশ আয়রন, ৫৮ ও ৮০ শতাংশ জিংক এবং ৩২ ও ২১ শতাংশ ভিটামিন-এ পাচ্ছেন। অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক বিজ্ঞানী ডা. তাহমিদ আহমেদ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

https://mzamin.com/news.php?news=64224