১২ জুলাই ২০২৩, বুধবার, ১০:৪২

ইসি’র প্রস্তুতি ও সক্ষমতা জানতে চাইলো ইইউ

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তুতি ও সক্ষমতা জানতে চেয়েছে ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দল। গতকাল ইইউ’র প্রতিনিধিদল ও ইসি’র বৈঠক শেষে এই তথ্য জানান ইসি’র অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। বলেন, ইইউ’র প্রতিনিধিদল প্রধানত নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে ইসি’র কাছে জানতে চেয়েছে। বিশেষ করে ভোটার, ভোটকেন্দ্র, পর্যবেক্ষক, সিসি ক্যামেরা নিয়ে তারা জানতে চেয়েছে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম কিনা, সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে। ইসি বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছে। এতে ইইউ’র প্রতিনিধিদল সন্তুষ্ট। অতিরিক্ত সচিব বলেন, পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে কী কী প্রস্তুতি নিতে হয়, ইসি কী করবে, তা জানতে চেয়েছে ইইউ’র প্রতিনিধিদল।

কমিশন বলেছে, তারা নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে, এর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। আবেদনের জন্য সময়সীমা আছে কিনা, তা জানতে চেয়েছে তারা।

ইসি বলেছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন এলে সুবিধা হয়। কারণ, আরও কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের বিষয়ও রয়েছে। তারা (ইইউ) যদি নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক পাঠায়, যত খুশি পাঠাক, এতে নির্বাচন কমিশনের কোনো আপত্তি নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে ইসি’র অতিরিক্ত সচিব বলেন, বর্তমান কমিশনের অধীনে এখন পর্যন্ত ৯১১টি নির্বাচন হয়েছে। এতে সন্তুষ্ট ইইউ’র প্রতিনিধিদলের। পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে তারা আরও আলোচনা করবে। ১৮ থেকে ২২শে জুলাইয়ের মধ্যে তারা আবার ইসি’র কারিগরি দলের সঙ্গে বসবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার ইসি’র বিষয় নয়। এ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটে আনার বিষয়ে ইইউ’র প্রতিনিধিদল কিছু জানতে চায়নি। নির্বাচনকালীন সরকার ও কোনো দলকে ভোটে আনার বিষয় বৈঠকের আলোচনায় আসেনি। ইসি’র অতিরিক্ত সচিব আরও জানান, ইসি’র সক্ষমতা নিয়ে ইইউ’র প্রতিনিধিদল সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টি কিছুই প্রকাশ করেনি। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে কিনা, তা নিয়েও তারা জানতে চায়নি।
বৈঠক শেষে রিকার্ডো শেলেরি সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের নির্বাচনের আগের সার্বিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে তারা ঢাকায় এসেছেন, যার ওপর ভিত্তি করে তারা ইইউ’র উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের জন্য একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করবেন। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যে, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য এখানে ইইউ’র কোনো প্রতিনিধিদল থাকবে কিনা। তবে এই সফর নিয়ে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন নেনটি রিকার্ডো শেলেরি। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, মিস্টার রিকার্ডো যেটা বলেছেন, ওটাই আমার বক্তব্য।

বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে কমিশনার রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান এবং ইসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে রিকার্ডো শেলেরির নেতৃত্বে ইইউ প্রতিনিধিদলে ছিলেন পাঁচ জন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধিদলের বৈঠক, বাইরে বিরোধী আইনজীবীদের সরকারবিরোধী স্লোগান: অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদল বৈঠক করেছেন। গতকাল সুপ্রিম কোর্টে অবস্থিত অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক চলে। প্রতিনিধিদলের নেতা রিকার্ডো চেলেরিসহ চারজন প্রতিনিধি এতে অংশ নেন। এ সময় তারা বাংলাদেশে নির্বাচনী আইন, ফৌজদারি ও দেওয়ানি এবং নাগরিকদের অধিকারের আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। কার্যালয়ের বাইরে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দিতে ইইউ প্রতিনিধিদলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন বিএনপিপন্থিসহ সরকারবিরোধী আইনজীবীরা। এ সময় তারা অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সামনে গণতন্ত্র ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ইংরেজি ভাষায় বিভিন্ন স্লোগান দেন।

বিক্ষোভকারীরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি সরকারবিরোধী স্লোগানও দেন। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের নেতা এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল।

ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধিদলের নেতা চেলেরি রিকার্ডোসহ তাদের দলের চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী। একদিকে ভেতরে ইইউ প্রতিনিধিদলের বৈঠক চলতে থাকে অপরদিকে বাইরে বিএনপিপন্থিসহ সরকারবিরোধী আইনজীবীরা বিভিন্ন দাবি সংবলিত স্লোগান দিতে থাকেন।

বৈঠক শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ওনারা নির্বাচনী আইন সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলেছেন। আমাদের দেশের প্রচলিত আইন কী, আইনগুলো কীভাবে হয়, কীভাবে তা প্রয়োগ হয় তা জানতে চেয়েছেন। নির্বাচনকালীন সময়ে আরপিও আইনগুলো, ফৌজদারি, দেওয়ানি এবং নাগরিকদের অধিকারের বিষয়ে যে আইনগুলো আছে সেগুলো জানতে চেয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কিংবা সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূলত তারা বাংলাদেশের আইনগুলো সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আইনগুলোতে কী আছে না আছে সেগুলো বলেছি। সরকার বিরোধী পক্ষের মামলা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না, ব্যক্তিগত বা বিশেষ কোনো মামলা নিয়ে আলোচনা হয়নি। শুধু আইন সম্বন্ধে জানতে চেয়েছেন। আমরা তা জানিয়েছি। আরপিও কিংবা কোনো আইন সংশোধনীর বিষয়ে তারা সুপারিশ করেছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সংশোধনীর প্রস্তাবটা কারা দেবে? যারা এই আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা দেবে। অন্য কেউ তো এটা দেয় না।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে যায় ইইউ প্রতিনিধিদল। যাওয়ার সময় ইইউ’র প্রতিনিধিদলের গাড়ির সামনে সরকারবিরোধী আইনজীবীরা ‘উই ওয়ান্ট ডেমোক্রেসি’ ‘উই ওয়ান্ট কেয়ারটেকার’ ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ উই ওয়ান্ট ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন’, ডিএসএ ইজ এ ব্ল্যাক ল’ স্লোগান দিয়ে প্রতিনিধিদলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্য থেকে ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, এডভোকেট শাহ আহম্মেদ বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল ইইউ প্রতিনিধিদলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ইংরেজিতে বিভিন্ন বক্তব্য দিতে থাকেন। এ সময় গাড়ির ভেতর থেকে ইইউ প্রতিনিধিদলকে মোবাইলে ভিডিও করতে দেখা যায়। বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড সংবলিত লেখা গাড়ির সামনে গিয়ে প্রদর্শন করলে তাও ভিডিও করেন তারা।

বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি তো ভেতরে ছিলাম; এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। আপনারা তো দেখেছেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, এই যে মিছিল স্লোগান এটা কিন্তু ১৯৯৪ সালে উচ্চ আদালতের যে আদেশ ছিল এটার পরিপন্থি। এদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল ইইউ প্রতিনিধিদলের গাড়ির সামনে বিক্ষোভ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা সফররত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সামনে শত শত আইনজীবী, নো মোর হাসিনা, উই ওয়ান্ট কেয়ারটেকার গর্ভমেন্ট, উই ওয়ান্ট ভোটিং রাইট, নো ইলেকশন আন্ডার হাসিনা, উই ওয়ান্ট ডেমোক্রেসি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন প্রদর্শন করেন। সফররত ইইউ প্রতিনিধিদল অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে বৈঠকের কথা জানতে পেরে সাধারণ আইনজীবীরা তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সামনে সমবেত হন। গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও ভোটাধিকারের দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকেন। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বিজ্ঞ আইনজীবীদের এসব প্ল্যাকার্ড এবং বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করেন।

https://mzamin.com/news.php?news=64235