১২ জুলাই ২০২৩, বুধবার, ১০:২৭

ডেঙ্গুর গতি-প্রকৃতি ও ভয়াবহতা

সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে চলেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এবারের ডেঙ্গুর প্রকোপ ২০১৯ সালের ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে যাবে। মূলত, প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে এবং প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কার্যক্রম বা তৎপরতা অনেকটা দায়সারা গোছের বলে মনে হচ্ছে। ফলে আগামী দিনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারির রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ডেঙ্গু জ্বর একটি এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মম-লীয় রোগ। এডিস মশার কামড়ে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো প্রকাশ পায়। উপসর্গগুলির মাঝে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গায়ে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি। দুই থেকে সাত দিনের মাঝে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষয়ী রূপ নিতে পারে যাকে ডেঙ্গু রক্তক্ষয়ী জ্বর (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার) বলা হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়, রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কখনো বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়। ফলে ভিকটিমের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

কয়েক প্রজাতির এডিস মশকী (স্ত্রী মশা) ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক। যেগুলোর মধ্যে এডিস ইজিপ্টি মশকী প্রধানতম। ভাইরাসটির পাঁচটি সেরোটাইপ পাওয়া যায়। ভাইরাসটির একটি সেরোটাইপ সংক্রমণ করলে সেই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে রোগী আজীবন প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে, কিন্তু ভিন্ন সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সাময়িক প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে। পরবর্তীতে ভিন্ন সেরোটাইপের ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হলে রোগীর মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু একটি বৈশ্বিক আপদে পরিণত হয়েছে। এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও অন্যান্য মহাদেশের ১১০টির অধিক দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। প্রতি বছর পাঁচ থেকে পঞ্চাশ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হোন এবং তাদের মাঝে দশ থেকে বিশ হাজারের মতো মারা যায় বলে পরিসংখ্যান থেকে জ্ঞাত হওয়া গেছে। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৭৭৯ সালে বিশ্বে ডেঙ্গুর প্রথম প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। বিংশ শতকের প্রথমভাগে ডেঙ্গুর ভাইরাস উৎস ও সংক্রমণ বিশদভাবে জানা গেছে। মশক নিধনই বর্তমানে ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায় বলে সনাক্ত করা হয়েছে। সরাসরি ডেঙ্গু ভাইরাসকে লক্ষ্য করে ওষুধ উদ্ভাবনের গবেষণা চলমান রয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশটি অবহেলিত গ্রীষ্মম-লীয় রোগের একটি হিসেবে ডেঙ্গু চিহ্নিত করেছে।

প্রতি বছর গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এতে অনেকেই আক্রান্ত হোন এবং প্রাণহানির ঘটনাও উল্লেখযোগ্যই বলা যায়। এবারো কিন্তু তার অন্যথা হয়নি। অতীত পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ২০১৯ সালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্-বর্ষা জরিপের তথ্য বলছে, এবারের পরিস্থিতি ২০১৯ সালের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি ভয়াবহ বলেই মনে হচ্ছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার ঘনত্ব এবং সম্ভাব্য প্রজননস্থলের সংখ্যা সর্বোচ্চ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিই ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০১৯ সালে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ড ছিল ২১টি। কিন্তু এই ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে উভয় সিটি কর্পোরেশন যেসব ব্যবস্থা বা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা মোটেই পর্যাপ্ত ও কার্যকর নয়। ফলে দিনের পর দিন পরিস্থিতির অবনতিই হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রাক্-বর্ষা জরিপ অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সব এলাকাতেই ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি বেশি। এবার ডেঙ্গুর মৌসুম গত বছরের মতো দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সিটি করপোরেশনের জোরালো কার্যক্রমের পাশাপাশি নগরবাসী সচেতন না হলে পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ নিতে পারে এমন আশঙ্কায় করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সার্বিক দিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের ৪ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ৯ হাজার ৮৭১ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় (৩ জুলাই সকাল আটটা থেকে ৪ জুলাই সকাল আটটা পর্যন্ত) চলতি বছরে এক দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। এই সময়ে মারা গেছেন পাঁচজন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৭৮ জন। দেশে কোনো বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ রূপ আর কখনো দেখা যায়নি। ২০১৯ সালে প্রথম ছয় মাসে মারা গিয়েছিলেন ৮ জন। আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ২০৮ জন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আরো উদ্বেগজনক।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বছরে তিনবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মশা জরিপ করে। প্রাক্-বর্ষা, বর্ষা ও বর্ষা-পরবর্তী জরিপ। গত ১৭ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত এবারের প্রাক্-বর্ষা জরিপ চালানো হয়েছে। ঢাকার দুই সিটির মোট ৯৮টি ওয়ার্ডের ৩ হাজার ১৪৯টি বাড়িতে জরিপ পরিচালিত হয়। প্রাক্-বর্ষা এই জরিপের ফলাফল গত ৪ জুলাই রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত স্বাস্থ্য ভবনের মিলনায়তনে প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টিকে বেশ উদ্বেগজনক বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। আর কতগুলো বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছে, তা পরিমাপের সূচক হলো হাউস ইনডেক্স। প্রাক-বর্ষা মৌসুম জরিপের এই দুই সূচকেই ডেঙ্গু পরিস্থিতির উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। জরিপের তথ্য তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা জানিয়েছে, ঢাকার দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিতেই ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। গত বছর ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৩টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি ছিল।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪০টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৮টি ওয়ার্ডে গেছেন জরিপকারীরা। এসব ওয়ার্ডের ৩ হাজার ১৪৯টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৫৪৯টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। ডিএনসিসির ২৭১ এবং ডিএসসিসির ২৭৮টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।

ঢাকা উত্তর সিটির মগবাজার, আদাবর, মোহাম্মদপুর, মণিপুর ও উত্তর বাড্ডা এলাকায় মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে। আর দক্ষিণ সিটির নবাবপুর, ডিস্টিলারি রোড, আজিমপুর, হাজারীবাগ, কাঁঠালবাগান ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। এবার এডিস মশা পাওয়া গেছে এমন বাড়ির শতকরা হারও (হাউস ইনডেক্স) উদ্বেগজনক। সাধারণত কোনো ওয়ার্ডের হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি হলে উদ্বেগজনক ধরা হয়। এবার ৯৮টি ওয়ার্ডের ৮০টি ওয়ার্ডেই হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি পাওয়া গেছে। গত বছর হাউস ইনডেক্স ১০-এর বেশি ছিল ১৯টি ওয়ার্ডে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছেন, জরিপের ফলাফলে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এবার মশার ঘনত্ব ২০১৯-২০ সালের থেকে অনেক বেশি। এই বছর দেরিতে বর্ষা এসেছে, দেরিতে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডেঙ্গু মৌসুম গত বছরের মতো দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। জরিপের তথ্যানুযায়ী, এবার বহুতল ভবনে (প্রায় ৪৪ শতাংশ) এডিস মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। এরপর সবচেয়ে বেশি লার্ভা (প্রায় ৪০ শতাংশ) পাওয়া গেছে একক বাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনে। এসব স্থানে পানি জমে থাকা ভেজা মেঝে, প্লাস্টিক ড্রাম ও পাত্র এবং ফুলের টবে লার্ভা বেশি ছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এডিস মশার নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা জটিল। বহুতল ভবনে সিটি করপোরেশনের একজন মশককর্মীর জন্য প্রবেশ করা কঠিন। নগরবাসীকে সম্পৃক্ত না করতে পারলে এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দেওয়া মুশকিল। ডেঙ্গুর হটস্পটগুলোকে (বেশি সংক্রমণ এমন এলাকা) আলাদা গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেয়া সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। বিশেষ করে হটস্পটগুলোতে উড়ন্ত মশা মারতে ব্যবস্থা নিতে হবে।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কয়েক মাস আগে এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করলেও ঢাকার দুই সিটি যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি বলে নগরবাসীর অভিযোগ তুলে ধরেন সাংবাদিকেরা। মূলত, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে দেরিতে ভর্তির কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৫০ জনের তথ্য পর্যালোচনা করে বলেছে, এ বছর ডেঙ্গুতে যারা মারা গেছেন, তাদের ৮০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির এক থেকে তিন দিনের মধ্যে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার বছরের প্রথম ছয় মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। দেশে সাধারণত জুনের পর থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তাই আগামী দিনগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আর আক্রান্ত বেশি হলে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় এখনই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এমনকি তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু ভাইরাসের কোন স্বীকৃত টিকা বা ভ্যাকসিন নেই। সুতরাং প্রতিরোধ নির্ভর করে জীবাণুবাহী মশা নিয়ন্ত্রণ এবং তার কামড় থেকে সুরক্ষার উপর। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা পাঁচটি মৌলিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে একমুখী নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর সুপারিশ করেছে: (১) প্রচার, সামাজিক সক্রিয়তা এবং জনস্বাস্থ্য সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে আইন প্রণয়ন, (২) স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বিভাগসমূহের মধ্যে সহযোগিতা (সরকারি ও বেসরকারি), (৩) সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহার করে রোগ নিয়ন্ত্রণে সুসম্বদ্ধ প্রয়াস, (৪) যে কোন হস্তক্ষেপ যাতে সঠিক লক্ষ্যবস্তুতে হয় তা সুনিশ্চিত করতে প্রমাণ-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং (৫) স্থানীয় অবস্থায় পর্যাপ্ত সাড়া পেতে সক্ষমতা বৃদ্ধি। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা খুব একটা সন্তোষজনক নয়। ফলে দেশে ডেঙ্গুর দ্রুত বিস্তার ঘটছে।

মূলত, ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করার প্রাথমিক পদ্ধতি হলো এর বৃদ্ধির পরিবেশকে ধ্বংস করে ফেলা। পানির আধার খালি করে অথবা কীটনাশক প্রয়োগ করে অথবা এইসব জায়গায় বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল এজেন্টপ্রয়োগ করে, যদিও ংঢ়ৎধুরহম রিঃয অর্গ্যানোফসফেট বা পাইরেথ্রযয়েড স্প্রে করাকে খুব লাভজনক ভাবা হয় না। স্বাস্থ্যের উপর কীটনাশকের কুপ্রভাব এবং কন্ট্রোল এজেন্টের ব্যয়বহুলতার কথা মাথায় রেখে পরিবেশ শোধনের মাধ্যমে জমা পানি কম করাটাই নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভাল উপায়। মানুষজন পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরে, বিশ্রামের সময় মশারি ব্যবহার করে এবং প্রতিরোধক রাসায়নিক প্রয়োগ করে মশার কামড় এড়ানোর পরামর্শও এসেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে পুরোপুরি কার্যকর কোন চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। তবে ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধী টিকা কয়েকটি দেশে অনুমোদিত হয়েছে। তবে এই টিকা শুধু একবার সংক্রমিত হয়েছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কার্যকর। একাধিকবার আক্রান্ত হলে তা মোটেই কার্যকর নয়। মূলত এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। তাই মশার আবাসস্থল ধ্বংস করে মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে। এ জন্য এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী বিভিন্ন আধারে, যেমন, কাপ, টব, টায়ার, ডাবের খোলস, গর্ত, ছাদ ইত্যাদিতে আটকে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরিধান করতে হবে।

ডেঙ্গু একটি ভয়াবহ মশকবাহী ভাইরাস জনিত রোগ। সম্প্রতি এই রোগের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে আমাদের দেশে। তাই ডেঙ্গু জ্বর হলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম এবং বেশি করে তরল খাবার গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল এবং প্রায়শ রোগীর শিরায় স্যালাইন দেয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। মারাত্মক রূপ ধারণ করলে রোগীকে রক্ত দেয়ারও আবশ্যকতা রয়েছে। ডেঙ্গু জ্বর হলে কোন ধরনের এন্টিবায়োটিক ও ননস্টেরয়েডাল প্রদাহপ্রশমী ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকবে বলা হয়। কারণ, এতে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করতে চলেছে। এমতাবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গণসচেতনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সাথে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল সনাক্তকরণ এবং বংশবিস্তার রোধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, রোগ নিরাময় চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়তর। একই সাথে আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা প্রদানের জন্য দেশের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ সহ জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা দরকার। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

https://dailysangram.info/post/529647