১১ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:০৪

আলু টমেটো কাঁচা মরিচের বাজারে কী হচ্ছে?

বাজারে এখন সবকিছুর দামই চড়া। তবে এই সময়ে সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছে কাঁচামরিচ। দরকারি এ পণ্যটি এখন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তবুও প্রয়োজনে কিনতে হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে। ওদিকে কাঁচামরিচের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আলু ও টমেটোর দামও। কয়েক দিনের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর টমেটোর দাম উঠেছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এখনো কমেনি কাঁচামরিচের দাম? ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচামরিচ দেশে পৌঁছানোর পর দাম কমেছিল কাঁচামরিচের। তবে সরবরাহ সংকটে আবারো ঊর্ধ্বমুখী কাঁচামরিচের দাম। একদিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা।

পাশাপাশি বিভিন্ন সবজির দামও বেড়েছে। সরজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। আমদানি কম ও মাঝে দুদিন সাপ্তাহিক ছুটিতে বাজারে এলসি বন্ধের প্রভাব পড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। দফায় দফায় দাম বাড়ায় দিশাহারা ভোক্তারা।

শেওড়াপাড়া কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মোহন বলেন, কাঁচামরিচের দাম আবার বেড়ে গেছে। আজকে ২৫০ গ্রাম মরিচ বিক্রি করছি ১২৫ টাকায়। গতকাল ২৫০ গ্রাম বিক্রি করেছি ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আজকে প্রতি কেজি মরিচ ৫০০ টাকায় বিক্রি করছি। আরেক মরিচ বিক্রেতা সবুজ জানান, তিনি দেশি মরিচ ৩৫০ টাকা ও ভারতীয় ৪০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। তিনি অভিযোগ করে জানান, আড়ত থেকে মরিচ ঠিকমতো দিচ্ছে না।

বাজার করতে আসা অনেক ক্রেতাকেই মরিচের দাম জেনে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এমনই এক ক্রেতা আলম। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যা ইচ্ছা তা-ই করছে। আজকে একদাম তো কালকে আরেক দাম। তাও আবার দাম দশ-বিশ টাকা বাড়ে না, দ্বিগুণ হয়ে যায়।

আলুর দামেও লাফ: আড়াই মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় আলুর দাম ছাড়িয়েছে ৫০ টাকা। আর দেশি জাতের আলুর দাম ৬০ টাকায় ঠেকেছে। সেই হিসেবে গত তিনমাসে প্রতি কেজি আলুর দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। রাজধানীর কাওরান বাজার, মিরপুরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাদা ও লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে, যা দুদিন আগে ছিল ৪০ টাকা। দেশি ছোট গোল আল ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, গত দুদিনে বাজারে আলুর দাম বেড়ে প্রতি কেজি এখন ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা। আলুর এ মূল্যবৃদ্ধি শুরু হয়েছে রোজার ঈদের পর থেকে। তখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলুর দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছর দেশে ১ কোটি ১১ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে বেশি। ওই বছর দেশে আলু উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন। এ উৎপাদন দেশে আলুর চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। দেশে বার্ষিক আলুর চাহিদা ৮৫ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ লাখ টন।

অন্য বছর চাহিদার চেয়ে আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় সচরাচর বাজারে দাম স্থিতিশীল থাকতো। মৌসুমের শেষে হিমাগারগুলোতে আলু অবিক্রীত থেকে যেতো। বছর শেষে লোকসানের কথা বলতেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর হিমাগারে পর্যাপ্ত আলু থাকার পরও দাম বাড়ছে। কারণ হিসেবে কেউ বলছেন বাড়তি চাহিদার কথা, কেউ বলছেন অন্য পণ্যের দামের প্রভাবের কথা। তবে, সিন্ডিকেটের আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। ঊর্ধ্বমুখী এ বাজারে আলুর বাড়তি দাম নিম্নআয়ের পরিবারগুলোতে বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় এ পণ্যের চড়া দাম প্রভাব ফেলেছে মধ্যবিত্তদের দৈনন্দিন খরচেও।

টমেটোর দামে আগুন: বাজারে অন্যান্য সবজির মতো টমেটোর দামও বেশ চড়া। এখন টমেটো কিনতে কেজিতে গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে আড়াইশ’ টাকা। কোথাও কোথাও এর চেয়েও বেশি। রাজধানীর হাজারীবাগের এক ক্রেতা জানান, তিনি টমেটো কিনেছেন ৩০০ টাকা কেজি। তবে মিরপুরে ২০০ টাকাতেও বিক্রি হতে দেখা গেছে।

ওদিকে কেজিতে বিভিন্ন সবজির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি লাউ ৭০-৮০ টাকায়, শসা দাম বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। কালো গোলবেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকায়। প্রতি কেজি ঢেঁড়শের দাম বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজি করোলা ১২০ টাকায়। প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫- ৫০ টাকায়। প্রতি কেজি বরবটি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।

বিক্রেতারা জানান, দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হওয়ায় বাজারে সবজির সরবরাহ কম। এতে পাইকারিতেই কেজিতে সবজির দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।

https://mzamin.com/news.php?news=64036