২৭ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৪

চট্টগ্রামে রাস্তাঘাট খানাখন্দে বেহাল

চৈত্র ও বৈশাখ মাসের অকাল ভারী বর্ষণ, জোয়ার ও পানিবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রামের বেশিরভাগ সড়ক, রাস্তাঘাট খানাখন্দে চরম বেহাল দশায় পৌঁছে গেছে। আগের ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট, সড়কগুলো আরো ভেঙে গিয়ে বর্তমানে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নতুন করে রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরে গেছে অনেক জায়গায়। এতে করে বিভিন্ন সড়কে দিন-রাত যানজট লেগেই থাকছে। দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রায় সময়ই। গত ২১ এপ্রিলের প্রবল বৃষ্টিপাত, একই সঙ্গে সামুদ্রিক জোয়ার ও পানিবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন সড়ক, রাস্তাঘাটের সর্বনাশ হয়েছে বেশি। এর আগের দু’দফায় অসময়ের ভারী বৃষ্টিপাত ও জোয়ারে সড়কগুলোর ক্ষতি হয়। মহানগরীর আগ্রাবাদ-বারিক বিল্ডিং, বন্দর-সল্টগোলা-সিমেন্ট ক্রসিং হয়ে কাঠগড় বাজার ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়ক, আরেক দিকে চকবাজার-কাপাসগোলা-বাদুরতলা, বহদ্দারহাট-সিঅ্যান্ডবি-চান্দগাঁও হয়ে কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও কালুরঘাট সড়ক, মুরাদপুর-বিবিরহাট-অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কসহ চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দুরবস্থা প্রকট। এতে করে অসহনীয় দুর্দশা পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন লাখ লাখ কর্মমুখী মানুষ, যাত্রীসাধারণকে। 

চট্টগ্রামের প্রায় প্রতিটি সড়ক স্থানে স্থানে বিপজ্জনক ফাটল, ভাঙন ও খানাখন্দে ভরে গেছে। প্রাক-বর্ষায় সা¤প্রতিক অতিবর্ষণ ও পানিবদ্ধতা, জোয়ার ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলজুড়ে সড়ক-মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়কসহ স্থানীয় রাস্তাঘাটের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মহানগরী ও বৃহত্তর জেলার ক্ষতবিক্ষত এসব সড়ক, মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হতে চলেছে। জরাজীর্ণ এসব সড়ক- মহাসড়কে যানজট প্রতিনিয়ত লেগেই আছে। সেই সাথে হাজার হাজার যাত্রীসাধারণের দুর্ভোগের মাত্রাও বেড়েই চলেছে। বিপর্যস্ত সড়ক-মহাসড়কের দুর্দশাকে পুঁজি করে একশ্রেণীর পরিবহন মালিক-শ্রমিক যথেচ্ছ হারে ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে বাস-মিনিবাস, কোস্টার, কোচ, সিএনজি অটোরিকশা, রাইডার, টেম্পো, লেগুনা যাত্রীদের কাছ থেকে। এ নিয়ে প্রতিদিনই যাত্রীদের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের ঝগড়া-বিবাদ লেগেই আছে। কিন্তু কোনো সুরাহা নেই। সাধারণ মানুষের ভোগান্তিরও শেষ নেই।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, চৈত্র ও বৈশাখের অকাল ভারী বর্ষণ, জোয়ার ও ঢলের কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার সড়ক কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ সড়কের উপরিভাগের পিচ উঠে গিয়ে ছাল-বাকল, আস্তর-ইট-কঙ্কর পর্যন্ত উঠে গেছে। অসংখ্য গর্ত, ফাটল ও খানাখন্দে ভরে গেছে সড়ক। এসব সড়কের উপর দিয়ে কাদা-পানি জমে আছে। এ অবস্থায় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে মহানগরীর অনেক সড়ক। তাছাড়া চট্টগ্রাম জেলায়ও অধিকাংশ সড়ক ভেঙেচুরে খানাখন্দে একাকার হয়ে গেছে। অনতিবিলম্বে মেরামত করা ছাড়া সড়কগুলো যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী করা সম্ভব হবে না। তবে এখনও মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ভায়া উখিয়া-টেকনাফ, হাটহাজারী-ফটিকছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়িসহ চট্টগ্রামের প্রধান ২২টি রুটে সড়ক আগে মেরামতের পরও এখন আবারও খানাখন্দ, ফাটল ও ভাঙনে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। যাত্রীদের দুঃসহ কষ্ট ও দুর্ভোগ লাঘব হয়নি। সড়ক-মহাসড়কের দুর্দশার কারণে প্রতিনিয়ত যাত্রী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে। নাজুক, জরাজীর্ণ, ভঙ্গুর, বেহাল সড়কগুলোর টেকসই ও স্থায়ীভাবে সঠিক তদারকির মাধ্যমে সংস্কারের জন্য স্থানীয় জনসাধারণ, যাত্রী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা জোরালো দাবি তুলেছেন। তারা বলেছেন, খানাখন্দে বেহাল অবস্থায় দুর্ঘটনা ছাড়াও দীর্ঘস্থায়ী যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। গন্তব্যে পৌঁছতে সময় বেশি লাগছে। মহানগরী ছাড়াও চট্টগ্রাম শহরতলী এলাকা, দক্ষিণ চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরাকান সড়কের পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়ার অংশে বাস-মিনিবাস, কোচ চলাচলের অনুপযোগী অবস্থায় রয়েছে সড়কের খানাখন্দে ভাঙাচোরা অনেক জায়গা।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/76962/#sthash.Rj6c27aL.dpuf