১১ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:০০

প্রতিদিনই ভাঙছে ডেঙ্গু রোগীর রেকর্ড

ডেঙ্গু আক্রান্তে প্রতিদিনই রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক ৮৮৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৮৩৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। জুলাই মাসের ১০ দিনে ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে

চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ জনে। সরকারি হিসাবে এ বছরে ইতিমধ্যে প্রায় ১৪ হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু রোগীতে হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে।
বিজ্ঞাপন
কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই। সামনের দু’মাস ডেঙ্গু রোগী আরও বাড়ার আশঙ্কা তাদের। বর্তমানে গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা ছাড়া ৬০ জেলায়ই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে।

সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে গতকাল বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। জুলাই মাসের ১০ দিনে ২৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৮৮৯ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫৭৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩১৫ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ৮৮৯ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্ব মোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৫৩ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ৮০ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৭৩ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৮৪৩ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ হাজার ৫১৪ জন।

অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাই মাসে শনাক্ত ৫ হাজার ৮৬৫ জন এবং মারা গেছেন ২৯ জন।

কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার এ ব্যাপারে বলেন, এ বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। এবছর ৬৪ জেলায় ডেঙ্গু রোগী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ডেঙ্গু রোগী আরও বাড়বে। কারণ হিসেবে তিনি বললেন, ছুটি থাকার কারণে সব কিছু বন্ধ ছিল। এতে মশার বিস্তার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে আমাদের ঝুঁকিও বেড়ে যাবে। অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চালাতে হবে। সংশ্লিষ্টদের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। কারও জ্বর হলে দ্রুতই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ এবছরে ডেঙ্গুতে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। বর্তমান সময়ের মডেল বলছে, ঈদ-পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা হঠাৎ অনেক বেড়ে যাবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটবে। বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে অসংখ্য পরিত্যক্ত পাত্রে পানি জমা হয়েছে, যার মধ্যে এডিস মশা ডিম পাড়বে। এই ডিমগুলো ফুটে লার্ভা, পিউপা ও উড়ন্ত মশায় পরিণত হবে। একজন গবেষক হিসেবে বলতে পারি, আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় ডেঙ্গু সংক্রমিত হবে। ঢাকার পর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, গাজীপুর, চাঁদপুর, ফরিদপুর, যশোর, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি ঘটবে। এফডিএমএন বা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি থাকার কারণে সেখানে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়বে এবং সেখান থেকে কক্সবাজারে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে। এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঠেকাতে বিজ্ঞান ভিত্তিকভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আর এই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনসাধারণকেও সরাসরি সম্পৃক্ত হতে হবে। মানুষকে সচেতন হতে হবে।

https://mzamin.com/news.php?news=64042