১১ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:৫০

রাজধানীর সড়কে অটো সিগন্যাল অকার্যকর

রাস্তা, ওভারব্রিজ ও ফুটপাতের অব্যবস্থাপনায় সুফল ব্যাহত

রাজধানী ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের ঋণে ৪২৫ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেস)’ প্রকল্প। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশনের রাস্তায় অকার্যকর হয়ে আছে অটো সিগন্যাল ও সোলার সিস্টেম। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে ফুটপাত ও ফুটওভারব্রিজের কার্যকর ব্যবহারও নিশ্চিত হচ্ছে না। পাশাপাশি মূল প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত সময় গেছে শতভাগ আর ব্যয় বেড়েছে ৮০ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন করে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এমন চিত্রই পেয়েছে। ২০১৯ সালে শেষ হওয়া প্রকল্পটি ছিল একটি আমব্রেলা (ছাতা) প্রকল্পের অংশ।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গুলশান-১ লিংক রোড ইন্টারসেকশন অটো কন্ট্রোল ট্রাফিক সিস্টেম চালু নেই এবং সৌরবিদ্যুৎ অকার্যকর। একই অবস্থা দেখা গেছে হাউজবিল্ডিং কলোনি ইন্টারসেকশন, ঝিগাতলা, সাতমসজিদ রোড (শংকর) ইন্টারসেকশন এবং বনানী রোড-১১নং ইন্টারসেকশনে। তবে জসীমউদ্দীন রোড ইন্টারসেকশনে ফ্লাইওভারের কাজ চলায় সেখানেও এটা চালু নেই। ওখানেও সৌরবিদ্যুৎ অকার্যকর দেখা গেছে। এছাড়া গুলশান-২ রোডে রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেম চালু থাকলেও সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম অকার্যকর। ফুটওভারব্রিজের অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, শাহজাদপুর ফুটওভারব্রিজ অবৈধ হকারদের দখলে থাকায় জনগণের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া সিঁড়ির উচ্চতা বেশি হওয়ায় বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের ওঠানামা করতে অসুবিধা হচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে বনানী-কাকলী, শ্যামলী, বসুন্ধরা শপিংমল, সোবাহানবাগ মসজিদ, নর্দা-বারিধারা বাসস্ট্যান্ড এবং উত্তর বড্ডা বাজার ফুটওভারব্রিজে। এছাড়া পীরজঙ্গী মাজার, কমলাপুরের ফুটওভারব্রিজের ল্যান্ডিং সিঁড়ি একপাশে হওয়ায় যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। একই অবস্থা মতিঝিল গভ. বালক উচ্চবিদ্যালয়সংলগ্ন ফুটওভারব্রিজেও। বনানী-১১নং রোডে ফুটওভারব্রিজের চলন্ত সিঁড়ি সব সময় কার্যকর থাকে না।

প্রতিবেদনে ফুটপাতের সম্পর্কে বলা হয়েছে, লালমাটিয়া ব্লক-ই বাবরী মসজিদ রোডের ফুটপাতের ভাঙা অংশ সংস্কার করা হয় না। রাস্তায় অবৈধ দোকান বসানোয় যানজট তৈরি হয়। ফুটপাতের প্রশস্ততা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এছাড়া লালমাটির ব্লক-‘ডি’তে ২৯৩ মিটার ফুটপাত ও রোড ডিভাইডারের কাজ করা হয়েছে। ফলে রাস্তা সরু হয়ে যানজট সৃষ্টি হয়। এর জন্য রাস্তার ফেরিওয়ালা এবং অনিয়ন্ত্রিত পার্কিংও দায়ী। তাজমহল রোডে ৬৯৪ মিটার ডিভাইডার করায় যানজট কমেছে। শেরশাহ সুরি রোডে ৫১৩ মিটার রাস্তায় মালামাল রেখে ফুটপাত দখল করা হয়েছে। রিংরোড থেকে কলেজগেট পর্যন্ত রাস্তায় অযাচিত গ্যারেজ ও খাবারের দোকান থাকায় কলেজ ছুটির সময় মাঝেমধ্যে যানজট হয়।

আইএমইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, খিলগাঁও আনসার ক্যাম্প সড়কে রাস্তায় অল্প কিছু গর্ত আছে এবং ফুটপাতে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। খিলগাঁও আনসার ক্যাম্প থেকে বাকি সরণি পর্যন্ত রাস্তার পাশে আবর্জনার কারণে ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া সড়কে রিকশা ও ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকায় চলাচলে অসুবিধা হয়। এছাড়া গুলশান-১-এর ডিসিসি মার্কেটের কাছের যাত্রীছাউনিটি অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতায় মূল প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ৪৪৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৫১ কোটি ৮৪ লাখ এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে ৩৯৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় করার কথা ছিল। কিন্তু তিনবার সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৮০২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু বারবার মেয়াদ বাড়িয়ে এটি শেষ করা হয় ২০১৯ সালের জুনে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে মোট খরচ হয়েছে ৪২৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি ৬ কোটি ৮৩ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণের ৪১৮ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন রোববার যুগান্তরকে বলেন, এ প্রকল্পের কোনো এক্সিট প্ল্যান ছিল না। ফলে বাস্তবায়ন-পরবর্তী কীভাবে এর ব্যবস্থাপনা করা হবে, সেটা নিয়ে কেউ ভাবেনি। তাই এ অবস্থা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক শীর্ষ র্অথনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি যখন নেওয়া হয়, তখনই প্রশ্ন উঠেছিল-প্রকল্প শেষে কাজগুলো কীভাবে অব্যাহত থাকবে। তখন এদিকে পাত্তা না দিয়ে বলা হয়েছিল, আগে প্রকল্প হোক, তারপর দেখা যাবে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি দীর্ঘসময় ধরে বাস্তবায়িত হয়েছে। বনানীতে এক্সেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি) ফুটওভারব্রিজ নিয়েও অনেক তবলা বাজানো হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে অনেক কিছুই অকার্যকর। এখানে সময় ও অর্থের অপচয় হয়েছে। যে ঋণ সম্পদ তৈরি করে না, উলটো অপচয় হয়, সেই ঋণ তো বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা রোববার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে আমরা স্টাডি করছি। এটি শেষ হলে বলতে পারব কতটা সঠিক বাস্তবায়ন হয়েছে বা প্রকল্প কতটা কার্যকর ও অকার্যকর। এর বেশি কিছু আপাতত বলতে পারছি না।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/694542/