১১ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:৪৮

দেশে জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণার দাবি

১৪ হাজার ছাড়াল ডেঙ্গু রোগী : রেকর্ড ভর্তি

একদিনে আরও তিনজনের মৃত্যু, ভর্তি ৮৮৯ রোগী

সারা দেশে বিপজ্জনক অবস্থায় চলে গেছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়াল ৭৬ জনে। আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শিশুরা বেশি মারা গেছে শক সিনড্রোমে।

এদিকে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ডসংখ্যক ৮৮৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রোববার এ সংখ্যা ছিল ৮৩৬ জন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হপসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজার ৮৪৩।

সোমবার পর্যন্ত দেশে পাঁচটি জেলা (গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার) ছাড়া সব জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এবার বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই হানা দেওয়া এডিসবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুতগতিতে বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে না পারলে ভরা মৌসুমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৫৭৪ জন ঢাকায় এবং ৩১৫ জন ঢাকার বাইরের। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ২৫৩ জন রোগী। এদের মধ্যে ঢাকায় ২ হাজার ৮০ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ১৭৩ জন। ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩৬ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৯ জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হসপাতালে ৪৪ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ২৩ জন, সম্মিলিত সামরিক হসাপাতালে ১৯ জন এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল ও কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ১৮ জন করে রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ সময় ঢাকার ২০টি সরকারি হাসপাতালে ৩৫৫ জন এবং ৩টি বেসরকারি হাসপাতালে ২১৯ জন ভর্তি হন।

চলতি বছর কোন মাসে কতজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সেই তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে ১ হাজার ৩৬ জন, জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, এপ্রিলে ২ জন, মে মাসে ২ জন এবং জুন মাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। চলতি জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৮৬৫ জন। এ সময় মারা গেছেন ২৯ জন। অর্থাৎ দিনে গড়ে ৮৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি এবং ৩ জন করে মারা যান।

এ বছর এডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বর্ষা-পূর্ববর্তী জরিপে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিল, ঢাকার ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিতে ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় ঢাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বাস্তবেও দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে পরিস্থিতি।

২০২২ সালে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরেই ২৭ জনের মৃত্যু হয়। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর আক্রমণ আরও বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে যৌথ কোনো ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে না নিলে এবার পরিস্থিতি গতবারের চেয়ে অনেক ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।

ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে দেশে জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণার দাবি : ঢাকাসহ সারা দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর বিপজ্জনক বিস্তার ঘটেছে উল্লেখ করে সংক্রমণ রোধে হেলথ ইমার্জেন্সি বা জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদ। রোববার জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ফয়জুল হাকিম সই করা এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে সই করেন বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারুন-অর রশিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রওশন আরা, জনস্বাস্থ্য সংগঠক অনুপ কুণ্ডু ও সামিউল আলম।

এতে বলা হয়েছে, দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় ডেঙ্গু রোগের বিস্তার রোধে ওয়ার্ড পর্যায়ে এডিস মশা প্রজননবিরোধী প্রচার অভিযান চালাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত কর্মসূচি নিতে হবে। বিবৃতিতে রাজধানী ঢাকা থেকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত সর্বত্র বিনামূল্যে ডেঙ্গু রোগীর পরীক্ষা ও চিকিৎসার দাবি জানানো হয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/694530/