১০ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ১০:৫১

আন্দোলনে চিকিৎসকরা, ভুগছেন রোগীরা

রাজধানীতে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন চিকিৎসকরা। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা। গত কয়েকদিন ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন (বিসিপিএস)-এর অধিভুক্ত পোস্টগ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডাক্তারদের ভাতা বৃদ্ধি ও নিয়মিতকরণের দাবিতে শহীদ মিনারে আন্দোলন করছেন। তা গতকালও অব্যাহত ছিল। বিএসএমএমইউতে চিকিৎসকরা আন্দোলনে থাকায় চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

এদিকে, অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারসহ সারা দেশে চিকিৎসক নিগ্রহের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি)। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে প্রমাণ ছাড়াই চিকিৎসকের জেল-জরিমানা হলে কোনো চিকিৎসক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে এগিয়ে আসতে চাইবে না। গতকাল দুপুরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. শাহজাদী এবং ডা. মুনার মুক্তির দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে ওজিএসবি’র সাবেক মহাসচিব ও দেশের প্রখ্যাত গাইনি চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা বেগম বলেন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় ডা. শাহজাদী এবং ডা. মুনাকে অভিযোগ প্রমাণের আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা তাদের নিঃশর্ত মুক্তি চাই।

এ ছাড়াও যে কনসালটেন্ট রোগীর প্রাণ বাঁচাতে রাতভর চেষ্টা করেছেন এবং দক্ষতার সঙ্গে চিকিৎসা দিয়েছেন, সেই চিকিৎসক ডা. মিলিকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা এই নির্দেশের প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছি। তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশেই আমাদের গাইনি চিকিৎসকবৃন্দ কঠিন পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতদিন কাজ করছেন।

যার ফলেই মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
আমাদের চিকিৎসকবৃন্দ যদি এরকম পরিবেশে কাজ করে, ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজ করতে গেলে যদি মায়ের মৃত্যু হয় এবং চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা এবং একপর্যায়ে যদি জেল হয়, তাহলে এক সময় হয়তো চিকিৎসা পেশায় কেউ আসতে চাইবে না। এসময় দুই চিকিৎসকের গ্রেপ্তারের ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের ভূমিকার সমালোচনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। তিনি বলেন, সেদিন সেন্ট্রাল হাসপাতালের ম্যানেজমেন্টের যারা দায়িত্বে ছিল, আমি বলবো সেদিনের সে বিষয়টি তারা সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে পারেনি।

এটা খুবই নিন্দনীয়। তিনি বলেন, সুশীল সমাজসহ সকল পেশার পেশাজীবীদের প্রতি আমার অনুরোধ, চিকিৎসকদের পাশে আপনারা দাঁড়ান। যারা আপনার আমার স্বাস্থ্যসেবায় নিজেদের উৎসর্গ করে চলেছেন, তাদের বিপদে এগিয়ে আসা আপনাদের দায়িত্ব। কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, চিকিৎসা নেয়ার পর কোনো রোগীর যদি মৃত্যু হয়, সে মৃত্যুর দায় কোনোভাবেই চিকিৎসকের ওপর আসতে পারে না। চিকিৎসকরা নিজের সর্বোচ্চটাই দিয়ে থাকেন।

কোনো চিকিৎসকই চান না তার রোগীটির মৃত্যু হোক। এ বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে। তিনি আরও বলেন, কোনো রোগীর মৃত্যু হলেই যদি চিকিৎসকের জেল-জরিমানা হয়, তাহলে সংকটাপন্ন কোনো রোগীর চিকিৎসাতেই চিকিৎসকরা এগিয়ে আসতে চাইবেন না। এতে করে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার ভিত নড়বড়ে হয়ে উঠতে পারে। সেটি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। ওজিএসবি’র নেতা অধ্যাপক ডা. সালেহা বেগম চৌধুরী বলেন, প্রসব বেদনায় কাতর জটিল রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের ডাক্তাররা আজ জেলে। পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নেই। সংগঠনটির সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. সালমা রৌফ বলেন, কোনো মৃত্যুই কারও কাম্য নয়, কিন্তু জটিলতা এড়ানো যায় না। পৃথিবীর কোথাও জটিলতার জন্য ফৌজদারি মামলা হয় না। বিনা বিচারে গ্রেপ্তার চিকিৎসকদের জামিন না হওয়া দুষ্ট লোকদের সুযোগ করে দেয়ার শামিল। তাই চিকিৎসকদের জামিন ও মামলা প্রত্যাহার করা হোক।

অন্যদিকে, গতকাল শহীদ মিনারে পোস্টগ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টর এসোসিয়েশন আয়োজিত পূর্বনির্ধারিত কর্মবিরতি ও গণঅনশন কর্মসূচি পালন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন (বিসিপিএস)-এর অধিভুক্ত পোস্টগ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডাক্তারদের ভাতা বৃদ্ধি ও নিয়মিতকরণের দাবিতে তারা এ কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরুন নবী বলেন, আমাদের এই আন্দোলনটা শুরু হয় ২০২০ সাল থেকে। তখন তিনটি দাবি নিয়ে আন্দোলনটা শুরু করা হয়েছিল। সেগুলো ছিল ভাতা ৫০ হাজার টাকা বৃদ্ধি, ভাতা নিয়মিতকরণ ও বকেয়া ভাতা পরিশোধ। এই তিনটি দাবির মধ্যে কেবল বকেয়া ভাতা পরিশোধের দাবিটি বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু বাকি দুটি দাবি এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা যতবারই দাবিগুলো ভিসি, ডিজি হেলথের কাছে নিয়ে গিয়েছি, ততবার কেবল আশ্বাসই পেয়েছি। কবে বাস্তবায়ন করা হবে তার কোনো নিশ্চয়তা পাইনি।

https://mzamin.com/news.php?news=63874