১০ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ১০:৩৮

ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের এক বছরের ঋণ ১ লাখ ২৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা

টাকা ছাপিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জোগান দিয়েছে ৭৮ হাজার কোটি

ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বিদায়ী বছরে সরকার আগের অর্থবছরের চেয়ে তিনগুণ বেশি ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে (২০২২-২৩) সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৩১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। এক বছরে বিদেশী ঋণ বেড়েছে ৯২ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, যা শতকরা ২৯৫ ভাগের ওপরে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। বিদায়ী অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ঋণের জোগান দিয়েছে ৯৮ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা বা প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৮ হাজার কোটি টাকাই দেয়া হয়েছে নতুন টাকা ছাপিয়ে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, টাকা ছাপিয়ে সরকারের ঋণ নেয়া কোনো ক্রমেই ঠিক না। তাহলে তো কষ্ট করে রাজস্ব আদায়ের দরকার হয় না। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হয় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণকে হাই পাওয়ার মানি বা হট মানি বলা হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক এক টাকা ছেপে বাজারে ছাড়লে সাড়ে ৭ গুণ টাকার বিনিময় হয়। এতে বেড়ে যায় মূল্যস্ফীতি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিদায়ী অর্থবছরে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা বাজারে ছাড়া হয়েছে। এর অর্থই হলো টাকার সরবরাহ বেড়েছে। এতে বেড়েছে মূল্যস্ফীতির চাপ। তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন। এতে কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় হবে না। ফলে সামনে আরো বেশি হারে টাকা ছাপিয়ে ঋণ নিতে হবে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ আরো বেড়ে যাবে। দুর্ভোগে পড়বে সাধারণ মানুষ। এজন্য সরকারের বাহুল্য ব্যয় পরিহার করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে টাকার সঙ্কট ছিল। বেশিরভাগ ব্যাংকই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে ব্যাংকগুলোর টাকা সরবরাহ করছে। এ কারণেই সরকারের বেশি মাত্রায় ঋণের জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঈদুল আজহার আগে গত ২৬ জুন ছিল অর্থবছরের শেষ দিন। আর এ কারণেই ওইদিন পর্যন্তই সরকারের বিদায়ী অর্থবছরের ঋণের হিসাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২৬ জুন পর্যন্ত সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। যা গত বছরের ৩০ জুন ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। এ হিসাবে সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বছরের ৩০ জুনে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৫৯ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। আর এ ঋণ চলতি বছরের ২৬ জুনে এসে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে ৯৮ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে এর মধ্যে ৭৮ হাজার ১৪০ কোটি টাকাই দেয়া হয়েছে নতুন টাকা ছাপিয়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ ঋণ যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় করতে না পারলে এবং বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলে চলতি অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় ঋণ নিতে হবে। এতে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে বেশি মাত্রায় ঋণ নিলে বেসরকারি খাত বঞ্চিত হবে। ব্যাংক ঋণের সুদহার আরো বেড়ে যাবে। আর ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়লে পণ্য উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে। বাড়বে মানুষের দুর্ভোগ। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/761096/