১০ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ১০:৩০

ডেঙ্গুতে একদিনে ৬ জনের মৃত্যু রেকর্ড ৮শ’৩৬ জন হাসপাতালে

চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছ ৮৩৬ জন। হাসপাতালে ভর্তি আর মৃত্যু দুটোতেই রেকর্ড হয়েছে। এডিস মশাবাহিত এই রোগ নিয়ে শনিবার ৮২০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এর আগে গত ৪ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ নিয়ে জুলাইয়ের প্রথম ৯ দিনে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়াল। মৃত্যু হল ২৬ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যে ৮৩৬ জন ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫১৬ জন ঢাকায় এবং ৩২০ জন ঢাকার বাইরের। নতুন ভর্তি রোগীদের নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১২ হাজার ৯৫৪ জনে। গত এক দিনে মারা যাওয়া ৬ জনকে নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৭৩ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৭৫০ জন রোগী। এদের মধ্যে ঢাকায় ১,৯৬৮ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৮২ জন। মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে ১০৩৬ জন এবং জুন মাসে ৫৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন, মে মাসে দুজন এবং জুন মাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এবার বর্ষা শুরুর আগে থেকেই এডিস মশাবাহিত এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা।

গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বর্ষা পূববর্তী জরিপের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকার ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিতে ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশার ঝুকিপূর্ণ উপস্থিতি প্ওায়া গেছে। এ অবস্থায় ঢাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ঢাকায় এডিস মশার উপস্থিতি কতটা তা শনিবার ডিএনসিসির এক অভিযানে কিছুটা দেখা গেছে। এদিন ডিএনসিসিরর মেয়র মোহাম্মদপুর এলাকার ছয়টি বাড়ি পরিদর্শন করেন। এতে পাঁচটি বাড়ির নিচতলায় জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন। এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।

এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এ যাবৎকালের সর্বাধিক। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের।

৫৭ জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিচ্ছে
রোববার দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়াস্থ নিজ বাসভবনে এক মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন বলেছেন, এ বছর সবচেয়ে বেশি এডিস মশার প্রকোপ দেখা দিয়েছে, সামনের দুই তিন মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এ ব্যাপারে আমরা প্রতিটি হাসপাতালে নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি। সে অনুযায়ী সমস্ত হাসপাতালে ডেঙ্গু ইউনিট স্থাপন করা আছে, সমস্ত ওষুধের ব্যবস্থা করা আছে।’

জাহিদ মালেক বলেন, ‘এডিস মশা নিধনের কাজটি সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সকলেই যার যার আঙিনা পরিষ্কার করে রাখবেন। যেখানে মশা জন্ম নিচ্ছে বা লার্ভা হচ্ছে, সেই জায়গাগুলোকে স্প্রে করে লার্ভাগুলোকে ধ্বংস করতে হবে, যাতে মশার উৎপত্তি না হয়। এখন থেকে আমরা সজাগ না হলে আরও ভয়াবহ অবস্থায় যেতে পারে।’

সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেন্সিয়াল ড্রাগস নিয়ে নানা সংবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইডিএল প্রতিষ্ঠানটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে মানিকগঞ্জে স্থাপন করার চেষ্টা করেছি, একনেকে বিষয়টি পাসও হয়েছে। ইডিসিএল সবকিছু দেখে তাদের সুবিধামতো একটি জায়গা বেছে নিয়েছিল। আপনারা জানেন, মৌজার দরটা আইন মন্ত্রণালয় ও শ্রেণি ঠিক করে ভূমি মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো হাত নেই। যে জমির কথা বলা হয়েছে, সরকারি মৌজা দর হিসাবে ১ লাখ টাকা করে ধরা আছে। সেখানে বর্তমান বাজারদর আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। এ প্রজেক্টের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি, এমনকি আর্থিক লেনদেনও হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ‘আফসোসের বিষয়টা হচ্ছে, ১ বছর পার হয়ে গেছে ২ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্টটি এখনও শুরু হচ্ছে না। প্রায় ২০০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে লোকসান হয়ে গেছে। নতুন করে ইডিসিএল জায়গা নিতে গেলে তাদের প্রায় ২ বছর সময় বেশি লাগবে। এতে সরকারের আরও ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হবে। আমাদের একটা প্রচেষ্টা আছে এখানে যেন প্রতিষ্ঠানটা হয়। এখানে প্রতিষ্ঠানটা হলে অনেক মানুষের চাকরির ব্যবস্থা হবে। এখানে যদি প্রতিষ্ঠানটি না হয় তাহলে মানিকগঞ্জের লোক বঞ্চিত হবে।

https://dailysangram.info/post/52948