৯ জুলাই ২০২৩, রবিবার, ৪:৩৭

তিন বছরে ছয় হেক্টর বন বিলীন

বরগুনার আমতলী উপজেলার টেংরাগিরি বনকে ১৯৬০ সালে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার। বাস্তবে এই বন সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি বন বিভাগ। গত তিন বছরে এই বনের প্রায় ছয় হেক্টর জমি ও অন্তত ১৫ হাজার গাছ বিলীন হয়ে গেছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

পটুয়াখালী বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কাগজে-কলমে টেংরাগিরি বন হলেও স্থানীয়ভাবে এটি ফাতরার বন হিসেবে পরিচিত।
১৩ হাজার ৬৪৭.৩ একর আয়তনের বনটির পূর্ব দিকে রয়েছে কুয়াকাটা, মহিপুর ও আন্ধারমানিক নদী। পশ্চিমে লালদিয়া, কুমিরমারা, পায়রা ও বিষখালীর মোহনা; উত্তরে সোনাকাটা, নিশানবাড়িয়া ও সখিনা খাল; দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। বনটির চতুর্দিকে সাগর-নদী বেষ্টিত এবং শ্বাসমূলীয় হওয়ায় পর্যকটদের কাছে এর আকর্ষণ খুব বেশি। ১১ কিলোমিটার প্রস্থ আর ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বনের পুরোটা রয়েছে সাগরের তীর ঘেঁষে।

গত ৬৩ বছরে প্রায় দুই হাজার একর বন সাগরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
গত বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাগরের তীর ঘেঁষে অবস্থিত ১৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বনের হাজার হাজার কেওড়া, গেওয়া, করমচা, হেতাল, রেইন ট্রি সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে ওপরে মাটিতে পড়ে আছে। ভাটার সময় গাছগুলো দেখা গেলেও জোয়ারের পরে এসে দেখা বেশির ভাগ গাছ পাওয়া যায় না বলে জেলেরা জানিয়েছেন। সাগরের তীরের বালু পেরিয়ে বনের ভেতরে ঢুকলে দেখা যাবে, ঢেউয়ের তোড়ে বনের ভেতরের প্রায় ৫০০ মিটার পর্যন্ত গাছের গোড়ার মাটি সরে গেছে।

এসব গাছ যেকোনো সময় বিলীন হয়ে সাগরের চলে যাবে।
স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা আছমত আলী বলেন, ‘সাগরের গভীরের দুই মাইলের মধ্যে বাগান আছিল, হেই বাগান সাগরে লইয়া গ্যাছে। ভাঙতে ভাঙতে বাগান অ্যাহন প্রায় শ্যাষ অইয়া যাওন ধরছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর বনদস্যুদের উৎপাতেও বনটির কাহিল দশা।’

ফকিরহাটের স্থানীয় বাসিন্দা মনির ফরাজী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় বন্যাসহ নানা কারণে বনের কাহিল দশা।
প্রতিবছর বর্ষাকালে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের ছোবলে মাটি ক্ষয়ে গাছ ওপরে পড়ে সাগরে ভেসে যাওয়ার কারণে বনের আকার ছোট হয়ে আসছে। এ ছাড়া রাতে প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় গাছ কেটে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বনদস্যুরা।’

খলিল নামের এক জেলে জানান, এক শ্রেণির বনদস্যু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রচ্ছায়ায় বনের গাছ কেটে নিচ্ছে। বনদস্যুরা দিনে গভীর জঙ্গলে গাছ কেটে ফেলে রাখে, রাতে কাটা গাছ ট্রলারে ভরে নিয়ে যায়। এসব গাছ ইটভাটা ও লাকড়ি হিসেবে বিক্রি হয়। তিনি বলেন, সাগরের তীর ঘেঁষে যেসব গাছ পড়ে রয়েছে, তা ঢেউয়ের তোড়ে ওপরে মাটিতে পড়ে আছে। বনদস্যুরা এসব গাছও নিয়ে যায়।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে বনটি প্রায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। কয়েক লাখ গাছ উপড়ে যায়। এ রেশ কাটতে না কাটতে ২০০৯ সালে আঘাত হানে আইলা। এতেও বনের অনেক গাছের ক্ষতি হয়েছে।

পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ভাঙনের হাত থেকে বন রক্ষার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়—এ বিষয়ে জুনের প্রথম সপ্তাহে জাইকার (জাপানি দাতা সংস্থা) দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ফাতরার বন পরিদর্শন করেছে। তা ছাড়া এ বছর আমরা ঝাউ এবং অন্যান্য প্রজাতির গাছ ঘন করে লাগাব, যাতে সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ে মাটি ক্ষয় করতে না পারে।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/07/09/1296864