৯ জুলাই ২০২৩, রবিবার, ৪:৩৫

বিশ্ববিদ্যালয়ের হাট-বাজার

পন্ডিতেরা বলেছেন ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। যে দেশে যত শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত সে দেশ জ্ঞান-মেধায় তত সমৃদ্ধ। উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্যে বাংলাদেশে হাট-বাজারের মতো গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৬৯টি। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি হওয়ার কথা গবেষণা। সেটা কি হচ্ছে? কিউএস বিষয়ভিত্তিক আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে মাত্র দুটি এবং এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিংয়ে মাত্র ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিদেশে যাচ্ছেন উচ্চশিক্ষা নিতে। কেউ কেউ এটাকে মেধা পাচার হিসেবে অবিহিত করে থাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে এ দায় কার?

১৯৯২ সালে ১১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক আসন না থাকা, দেশের শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাওয়ার প্রবণতা কমাতে অনুমোদন দেয়া শুরু হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এরপর বিগত তিন দশকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৩টি। এই সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৬টিতে। অনুমোদন পাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে হাতেগোনা কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা, পাঠদান, গবেষণায় অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু বেশিরভাগই পরিণত হয়েছে নামসর্বস্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরুতে গ্রহণযোগ্য ও শিক্ষানুরাগী উদ্যোক্তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সময়ের পরিক্রময়ায় এখন রাজনৈতিক বিবেচনা ও তদবিরের ভিত্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়ার প্রবণতা শুরু হয়। তারপরও থেমে নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাওয়ার হিড়িক। প্রতিবছরই একের পর এক অনুমোদন দিচ্ছে সরকার। যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া হচ্ছে তাতে রাজধানীর ধানম-ি, বনানী, মিরপুর, উত্তরা, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাট-বাজারে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। প্রশ্ন উঠেছে আর কত বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন? আদৌ এতো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে কিনা? সেটিও ভেবে দেখার কথা বলেছেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র জানানিয়েছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আরো বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন রয়েছে অনুমোদনের অপেক্ষায়।

এদিকে দেশে এতোগুলো বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও চলতি সপ্তাহেই প্রকাশিত কিউএস বিষয়ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিংয়ে দেশের শুধু বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। তবে এ তালিকায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ভারতের ৪১টি ও পাকিস্তানের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক। কিন্তু ন্যূনতম মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় খুবই কম। নতুন করে যেগুলো অনুমোদন দেয়া হচ্ছে সেগুলোর সম্ভাব্যতা কতটুকু, অনুমোদ দেয়া যুক্তিসঙ্গত কিনা? সেটা ভেবে দেখা দরকার। কারণ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করলেও অনেকগুলো না চলার মতোই চলছে। তাই সংখ্যা বাড়িয়ে উচ্চশিক্ষার মান ধরে রাখা কঠিন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মান নিয়ে সব সময় প্রশ্ন তোলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষাবিদসহ সবমহলই। নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ, যা বিভিন্ন সময় ইউজিসির তদন্তেও উঠে এসেছে। হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিগুলো সাইনবোর্ডসর্বস্ব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক কিংবা গলি পথে কয়েকটি রুম ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম। এসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনকে। নিজস্ব জমি নেই, নেই পূর্ণকালীন শিক্ষক (প্রফেসর, সহযোগী অধ্যাপক), পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি ও গবেষণা খাতে ব্যয়। যেখানে আগে অনুমোদন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরই বেহলা দশা সেখানে প্রতিবছরই নতুন করে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

গত তিন মাসে আরো নতুন তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যার সর্বশেষ ‘লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি হবে কুষ্টিয়ায়। কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্র মৈত্রী ইউনিভার্সিটি নামের আরও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নামের পুরোনো একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

নতুন অনুমোদন পাওয়া লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হলেন ফৌজিয়া আলম। এর আগে ঢাকায় কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইসলামি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বাংলাদেশ’, রংপুরে মো. আশরাফুল আলম আল-আমিনকে ‘তিস্তা ইউনিভার্সিটি’, রাজশাহীতে ‘শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি’ এবং বান্দরবানে ‘বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়’, খুলনায় খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহীতে আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়।

একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকলেও নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছে ইউজিসি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও বলছে, এটি মন্ত্রণালয়ের না, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সরকার চাইলে মন্ত্রণালয়ের কিছুই করার থাকে না।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, যেভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে তাতে এক সময় হয়তো বাড়ি বাড়িই বিশ্ববিদ্যালয় দেখা যাবে। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ¯œাতকদের শিক্ষার মান কাক্সিক্ষত নয় বলে স্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত কারিকুলাম প্রণয়ন, আধুনিক গবেষণাগার, ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, লিখিত ও মৌখিকভাবে নিজস্ব চিন্তা উপস্থাপন এবং তথ্য-প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জনের জন্য কারিকুলামে প্রয়োজনীয় উপাদান সংযোজন করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১২ সালের পর অনুমোদন পাওয়া বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের অনেকে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

কোথায় কত বিশ্ববিদ্যালয়:
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের পর দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬টিতে। আর লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখন ১১৩টি।

এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকায়। রাজধানীতে ১১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সেগুলো হচ্ছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেসনালস, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়।

আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে- ৫৭টি। এর মধ্যে নর্থ সাউথ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, সেন্ট্রাল উইমেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, ইস্ট ওয়েস্ট, এশিয়া প্যাসিফিক, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, পিপলস ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল, ব্র্যাক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনটিভ, সাউথইস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল, স্ট্যামফোর্ড, স্টেট, প্রাইম, নর্দান, গ্রিন, ওয়ার্ল্ড, শান্ত-মারিয়াম ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, মিলেনিয়াম, ইস্টার্ন, উত্তরা, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল, সাউথ এশিয়া, ভিক্টোরিয়া, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি, প্রেসিডেন্সি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সায়েন্সেস, প্রাইমএশিয়া, রয়েল, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ ইসলামিক, আশা, ইউরোপিয়ান, সোনারগাঁও, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, নটরডেম, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, কানাডিয়ান, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ঠাকুর ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ আর্টস, আনোয়ার খান মডার্ন, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজম্যান্ট সায়েন্সেস, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড, ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, মাইক্রোল্যান্ড, ইন্টারন্যাশনালন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ইবাইস ও কুইন্স ইউনিভার্সিটি।

চট্টগ্রামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৪টি- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ১০টি- ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট, প্রিমিয়ার, সাউদার্ন, ইস্ট ডেল্টা, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল, চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি।

রাজশাহীতে সরকারি ৩টি- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাইভেট ৪টি- বরেন্দ্র, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল, আহসানিয়া মিশন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, শাহ মাখদুম ম্যানেজম্যান্ট ইউনিভার্সিটি।

ময়মনসিংহে ২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। কুষ্টিয়ায় ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় আর প্রাইভেট দুটি- রবীন্দ্র মৈত্রী, লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়।

সিলেটে ৩টি সরকারি- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি আছে ৫টি। লিডিং, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল, মেট্রোপলিটন, নর্থ ইস্ট, আরটিএম আল-কাদির টেকনিকাল ইউনিভার্সিটি।
খুলনায় সরকারি ৪টি- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), খুলনা কৃষি, শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

আর বেসরকারি ৪টি- নর্থ ওয়েস্টার্ন, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি, খুলনা খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি।

গাজীপুরে ৫টি সরকারি- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি দুটি- বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি, জার্মান ইউনিভার্সিটি।

কুমিল্লায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৩টি- ব্রিটানিয়া, সিসিএন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি।
রংপুরে ১টি করে সরকারি বেসরকারি- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও তিস্তা ইউনিভার্সিটি।

বরিশালে সরকারি ১টি, বেসরকারি ২টি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ, ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি। সিরাজগঞ্জে রবিন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি খাজা ইউনুস আলী ইউনিভার্সিটি। জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ইউনিভার্সিটি।

কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি ঈশাখাঁ ইন্টারন্যাশনাল, শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে বেসরকারি নেই:
দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। টাঙ্গাইলে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোণায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নেই:
কোন সরকারি নেই শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে- বগুড়ায় পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, মুন্সিগঞ্জে হামদর্দ ইউনিভার্সিটি, চুয়াডাঙ্গায় ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি, চাঁপাইনবাগঞ্জে এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ফেনীতে ফেনী ইউনিভার্সিটি, ফরিদপুরে টাইমস ইউনিভার্সিটি, নাটোরে রাজশাহী সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি, কক্সবাজারে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নারায়ণগঞ্জে আর.পি সাহা ইউনিভার্সিটি, রূপায়ণ একেএম শামসুজ্জোহা, ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচমেন্ট এন্ড টেকনোলজি, নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, মানিকগঞ্জে এনপিআই ইউনিভার্সিটি, বান্দরবানে বান্দরবান ইউনিভার্সিটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এছাড়া ইবাইস ইউনিভার্সিটি, কুইন্স ইউনিভার্সিটি।

এর মধ্যে প্রায় সাত বছর আগে অনুমোদন পাওয়া রূপায়ণ এ কে এম শামসুজ্জোহা এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি। একই দশা ২০১৮ সালের এপ্রিলে অনুমোদন পাওয়া রাজশাহীর শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট নামে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু করেছে, সেগুলোর বেশ কয়েকটি নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ। এ কারণে ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এর মধ্যে ৮টিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নেই, ৭০টিতে নেই প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ নেই ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ তিনটি পদই শূন্য থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, দেশে যে পরিমাণ বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে আর নতুন করে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের দরকার নেই। তবে পুরনো জেলাগুলোতে একটি করে হতে পারে। তারপরও কেন দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিরুৎসাহিত করছি। কোন ব্যতিক্রম ও উদ্দেশ্য ভালো দেখলে সেটি সুপারিশ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম বলেন, যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। নামমাত্র বেতন, গবেষণা না থাকাসহ এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু ইস্যু আছে। আর্থিক সক্ষমতা না থাকার কারণে তারা দাঁড়াতে পারবে না।এটি না থাকলে অনুমোদন দেয়াই উচিত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আর্থিক সক্ষমতা ও ন্যূনতম মান নিশ্চিত করতে হবে-এটা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ না। এছাড়া রাজনৈতিক মনোভাব এবং বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে কখনো ভালো করতে পারবে না।

নজরুল ইসলাম বলেন, শহরকেন্দ্রীক আর বিশ্ববিদ্যালয় না বাড়িয়ে পুরনো জেলাগুলোতে এবং পিছিয়ে পড়া এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় দেয়া যেতে পারে। তবে একই জেলায় ২-৩টা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন দরকার নেই।
একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. আবু ইউসুফ মিয়া বলেন, এটি মন্ত্রণালয়ের নয়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। সরকার চাইলে আমাদের কিছু করার থাকে না। 

https://dailyinqilab.com/national/article/586127