৯ জুলাই ২০২৩, রবিবার, ৪:২০

বাজার সিন্ডিকেটের কাছে সরকার অসহায়

কাঁচামরিচের অস্থিরতার মধ্যে আলু রসুনের বাড়তি দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতা

এমনিতেই বাজারে অধিকাংশ পণ্যমূল্যই অস্বাভাবিকভাবে বাড়তি। কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগ থেকে অস্থির হওয়া কাঁচা মরিচের ঝালও খুব একটা কমাতে পারেনি সরকার। এর উপর নতুন করে কোনো কারণ ছাড়াই বেড়েছে আলুর দাম। আমদানিকৃত রসুনের দামও প্রতি কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। ফলে ক্ষুব্ধ জনমনে এখন জিজ্ঞাসা বাজার সিন্ডিকেটের কাছে সরকার কি অসহায়? নাকি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই?

চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখন এককেজি তো দুরের কথা এক পোয়া তথা ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ একসাথে কেনার লোক হাতে গোনা। এখন কাঁচা মরিচের দাম হাঁকা হয় ১০০ গ্রাম হিসেবে। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে প্রতি এক শ’ গ্রাম কাঁচামরিচ ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। অবশ্য কেজি হিসেবে নিলে কিছুটা কম রাখা হয়, কিন্তু একসাথে এককেজি কাঁচামরিচের এখন ক্রেতা সহজলভ্য নয়। সেজন্য বিক্রেতারাও এককেজি নিলে ৩৬০ টাকা দর দিচ্ছেন, কিন্তু এক শ’ গ্রাম নিলে গুনতে হচ্ছে ৪০ টাকা। মানে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৪০০ টাকা।

বাজারে অনেকের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, অনেক ভোক্তাই এখন আপদকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় কাঁচামরিচ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। বিকল্প হিসেবে শুকনো গোটা মরিচ ব্যবহার করছেন। এর সত্যতা লক্ষ্য করা গেছে বিক্রেতাদের কাঁচা মরিচের পোটলায়ও। চকবাজারের এক সবজি ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আগে যেখানে দিনে ২০ কেজি পর্যন্ত কাঁচা মরিচ বিক্রি করতেন এখন তা ৩/৪ কেজিতে নেমে এসেছে। ঈদের পর পর ভারত থেকে আমদানির খবরে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কিছুটা দাম কমিয়ে প্রতি কেজি ২৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু তা একদিনও স্থায়ী হয়নি। এর দুইদিন পর আবারো ৫০০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হয়। সর্বশেষ গতকাল স্বল্প পরিমাণে কিনলে প্রতি কেজি ৪০০ টাকা এবং বেশি পরিমাণে কিনলে প্রতি কেজি ৩৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এমনি পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। বরং সস্তায় আমদানি করে বিদেশী কাঁচামরিচ দেশীয় গুলোর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে সংঘবদ্ধ বাজার সিন্ডিকেট। কিন্তু সরকার তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ভোক্তাদের এখন জিজ্ঞাসা বাজার সিন্ডিকেটের কাছে কি সরকার অসহায়?

এদিকে কাঁচা মরিচের বাজারে অস্থিরতার মাঝেই আলুর বাজারকে নতুন করে অস্থির করে তুলেছে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। দেশে আলুর মজুদের কোনো সঙ্কট না থাকলেও ঈদের পর হতেই কেজি প্রতি ১০-১২ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে আলুর দাম। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে বিভিন্ন বাজার ও মুদি দোকানে মানভেদে ৪২-৪৫ টাকা দরে আলু বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এ ছাড়া প্রতি কেজি আমদানি করা রসুন খুচরা বাজারে এখন ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে, যা ঈদের আগে ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারেও প্রতি কেজি রসুন গতকাল ১৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। নামকাওয়াস্তে ভোক্তা অধিকারের অভিযানে আদার দাম কিছুটা কমলেও এখনো বাড়তিই রয়ে গেছে। গতকাল চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি আদা ২৫০-২৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। যা পাইকারি বাজারে ২২০ থেকে ২৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এ ছাড়া পেঁয়াজের দামও বেড়ে এখন দেশী পিঁয়াজ ৬৫-৭৫ টাকা এবং ভারতীয় পিঁয়াজ ৪২-৫২ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর মাছের বাজারে তো মধ্যবিত্তের হাত দেয়ার অবস্থা নেই।

সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলেও অসহায় ভোক্তাদের যেন কিছুই করার নেই। চোখ বুঝে বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে নিত্য এসব পণ্য। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না থাকায় জনমনে ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে।

চকবাজারের নিয়মিত ক্রেতা ইমতিয়াজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে আসলে মনে হয় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণের চেয়ে নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত। তিনি বলেন, জনগণের কষ্ট নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই।

বহদ্দারহাট বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী আনিসুরের সাথে। তিনি জানান, মানুষ যে কি কষ্টে আছে তা হয়তো সরকার বুঝতে পারছে না, নয়তো বুঝার চেষ্টা করছে না। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙ্গা ছাড়া এই পরিস্থিতির উন্নতি কি সম্ভব? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি যেটা একমাত্র সরকারই পারে বলে মন্তব্য করেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/760861/