৮ জুলাই ২০২৩, শনিবার, ১২:১০

ছয় মাসে ৬৩ জন কর্মকর্তা চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন

ছয় মাসে প্রশাসনে ৬৩ জন কর্মকর্তা চাকরির মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। এঁদের মধ্যে ২৫ জন সিনিয়র সচিব, সচিব, গ্রেড-১ ও অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন সুনির্দিষ্ট পদ ও সময়ের জন্য।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত কয়েক বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে সংকোচন নীতি অনুসরণ করে আসছিল।
তবে এ বছর তা বেড়েছে।

চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রতিরক্ষা ও জননিরাপত্তা সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের মহাপরিচালক। মন্ত্রিপরিষদসচিব, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবসহ কয়েকজন কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আলোচনায় আছেন।

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়নের বিষয়ে এখন ইসির কোনো এখতিয়ার নেই।

তাই সরকার তার মতো করে কর্মকর্তাদের নিয়োগ করছে। নির্বাচনকালীন সময়ে ইসি এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করবে।
আনিছুর রহমান বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের নির্বাচনের সময় প্রয়োজনে অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বদলি করা যাবে। কারণ চুক্তি পাওয়া কর্মকর্তাদের সুনির্দিষ্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সিনিয়র সচিব বা সচিব হিসেবে।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রজ্ঞাপনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ছয় মাসে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ৬৩ জন কর্মকর্তার প্রত্যেককে সুনির্দিষ্ট পদ ও সময়ের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে তাঁদের অন্য দপ্তরে বদলির বিষয়ে কিছু বলা নেই। যেমন—মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে এক বছর মেয়াদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ১২ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ১১ জুলাই ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত অথবা যোগদানের তারিখ থেকে এক বছর ছয় মাস মেয়াদে পুলিশ মহাপরিদর্শক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, চুক্তি পেতে পারেন সেই কর্মকর্তা যাঁর মেধা, যোগ্যতা, সততা অসাধারণ। যাঁর কোনো বিকল্প নেই। বাস্তবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের পছন্দ-অপছন্দই মুখ্য বিবেচ্য হয়।

চুক্তিতে নিয়োগের ফলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিজ নিজ ক্যাডারের শীর্ষ পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়। এ নিয়ে শীর্ষ পদ পাওয়ার প্রত্যাশায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। আবার চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের জন্য বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বাবদ সরকারকে বাড়তি ব্যয় করতে হয়।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বর্তমান প্রশাসনে পদের চেয়ে বেশি কর্মকর্তা আছেন। তাই এখন আগের মতো চুক্তিতে নিয়োগের প্রয়োজন নেই। তাই এই ব্যবস্থা থেকে সরে আসা উচিত। একজনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কয়েকজন কর্মকর্তার মধ্যে হতাশা তৈরি করে।

জনপ্রশাসন ও রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় যোগ্যতা আসলে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। নির্বাচন ঘিরে সরকার কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না। এ কারণেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের চুক্তিতে রেখে দেওয়া হয়।

তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, জনস্বার্থেই চুক্তিতে নিয়োগ দিতে হয়। যাঁদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলে রাষ্ট্র উপকৃত হবে তাঁদেরই চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এটা অতীতেও ছিল, এখনো আছে।

ছয় মাসে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেন যাঁরা : গত ছয় মাসে চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন ১১ সচিব ও সিনিয়র সচিব। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান পদে সরকারের সচিব মো. আনিছুর রহমান মিয়া, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আখতার হোসেন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান।

রাষ্ট্রদূত হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন এবং রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব জয়নাল আবেদীন।

গ্রেড-১ পদে চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন নির্বাচন কমিশনের মহাপরিচালক (এনআইডি) এ কে এম হুয়ামুন কবীর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ চার কর্মকর্তা।

অতিরিক্ত সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন পাঁচজন কর্মকর্তা। অন্যরা জনপ্রশাসনের বিভিন্ন পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/07/08/1296553