৮ জুলাই ২০২৩, শনিবার, ১২:০৮

ভয় ধরালেও নেই বিনামূল্যে পরীক্ষার উদ্যোগ

ডেঙ্গুর প্রকোপের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে মানুষের ভিড়। বহির্বিভাগে সর্দি-জ্বর নিয়ে গেলে প্রথমেই চিকিৎসক ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে বলছেন। তবে অর্থ সংকটে অনেকেই তা করাচ্ছেন না। অথচ ডেঙ্গুতে প্রাণহানি কমানো এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় রোগী দ্রুত শনাক্ত জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার কথা বললেও নেওয়া হচ্ছে না উদ্যোগ।

২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। তবে এবার এ ধরনের উদ্যোগ নেই। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার অস্থায়ী ১২ কেন্দ্রের সবগুলো কিট সংকটে বন্ধ রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ৩২টিতে সেবা মিললেও জানেন না অনেকে।

এদিকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই ১৮ জনের মৃত্যু হলো। এই সময় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ৩২০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে দেশে ২ হাজার ১৬৫ ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। চলতি বছর মোট ১১ হাজার ২৯৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের। সরকারি-বেসরকারি একাধিক হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফল একদিনে পাওয়া যায় না। তবে জটিল রোগীর ক্ষেত্রে দিনে একাধিকবার ডেঙ্গু পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এ সুযোগে কিছু বেসরকারি হাসপাতাল নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা নিচ্ছে। তাদের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণও নেই। ধানমন্ডি-গ্রিন রোড এলাকার কিছু হাসপাতাল নিচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। ধানমন্ডির একটি হাসপাতাল কিছুদিন আগেও নিয়েছে ৭০০ টাকা। হঠাৎ তারা এ পরীক্ষার ফি দ্বিগুণ করেছে। পান্থপথের একটি হাসপাতাল নিচ্ছে ১ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান সমকালকে বলেন, করোনা প্রতিরোধে সরকার যেমন বিনামূল্যে টিকা দিয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একইভাবে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলো নিয়ন্ত্রণ জরুরি। সেবার মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি হাসপাতালগুলো আইনের আওতায় আনতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, দ্রুত রোগী শনাক্তে অস্থায়ী বুথ তৈরি করে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা জরুরি। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। মশা জরিপে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত এলাকাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে মশকনিধন কার্যক্রম চালাতে হবে।

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল করিম বলেন, ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরীক্ষার কিট দিয়েছিল। তখন বিনামূল্যে পরীক্ষা করা হয়। তবে এখন এসব কেন্দ্রে কিট সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে। কিটের ব্যবস্থা হলে আবার বিনামূল্যে এ পরীক্ষার করা হবে।

ডিএনসিসির উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কর্নেল গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, উত্তর সিটির ৩২ কেন্দ্রে এখনও বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেবার পরিধি বাড়াতে আরও পাঁচটি কেন্দ্র চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি ১০০ টাকা নির্ধারণ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে এ মূল্য ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার বিষয়ে এখনও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষায় নির্ধারিত অর্থের বেশি নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত ফি অনুযায়ী বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা এবং সরকারি হাসপাতাল ১০০ টাকা নিতে পারবে।

https://samakal.com/bangladesh/article/2307182040