৭ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার, ১১:১৬

রুট পারমিট ছাড়াই চলছে শত শত গাড়ি

রাজধানীতে রুট পারমিট ছাড়াই চলছে শত শত যানবাহন। শুধু পুলিশকে ম্যানেজ করেই এসব যানবাহন চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর অল্প কিছু যানবাহনের জন্য বিআরটিএ’র কিছু সদস্যও উৎকোচ পাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু গাড়ি রয়েছে যা দ্রুতগামী হলেও তার কোনো রেজিস্ট্র্রেশন নম্বরই নেই। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে এর কোনো হিসাবই নেই।

রাজধানীর ডেমরার বামইল এলাকায় অটোচালক রাব্বি জানায়, ব্যাটারিচালিত এই অটোরিকশা দিয়ে সিএনজি অটোরিকশার সাথে প্রায়ই সে পাল্লা দিয়ে চলে। কিন্তু এর কোনো রেজিস্ট্র্রেশন নেই। তার নিজেরই গাড়ি। কেনার পর সে মাঝে মধ্যে চালায়, আবার অন্য চালকের কাছে ভাড়াও দেয়। স্টাফ কোয়ার্টার, বামইল, বাঁশেরপুল, কোনাপাড়াসহ কয়েকটি স্থানে প্রতিদিন ৩০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। লাইনের এই চাঁদা দিলে পুলিশ আর এই গাড়ি ধরে না। টাকা না দিলেই পুলিশ গাড়ি ধরে নিয়ে যায়।

স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় রাস্তার পাশ দিয়ে গড়ে উঠেছে চার-পাঁচটি অটোরিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড। এই গাড়িগুলোর অধিকাংশই ঢাকা শহরে চলাচলের কোনো অনুমতি নেই। এখানে একটি লেগুনা স্ট্যান্ডও রয়েছে। যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এই লেগুনাগুলো চলে। এসব গাড়ির অধিকাংশের নম্বর প্লেট ঢাকার বাইরের। এগুলো চলেও অনেক বেপারোয়া। কাজলা এসে এগুলো পুলিশের চোখের সামনে দিয়েই উল্টো রাস্তায় ঢুকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যায়। অথচ পুলিশ অজ্ঞাত কারণে এই গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এই রুটে চলাচলকারী একাধিক গাড়ি চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা ম্যানেজ করেই গাড়ি চালান।

জুরাইন এলাকায় রেললাইনের এপাড়া ওপাড় মিলিয়ে গড়ে উঠেছে বিশাল সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড। এগাড়িগুলো পাগলা, শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জ, মাওয়া, লৌহজংসহ বিভিন্ন এলাকায় যাত্রীবহন করে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর অধিকাংশ গাড়ির কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। এক সময় ওয়াসিম নামের এক সন্ত্রাসী এই এই গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণ করত। ওয়াসিম ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর থেকে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে আলম ওরফে দিগম্বর আলম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর বায়তুল মোকাররম ও গুলিস্তান এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী এবং মাওয়াসহ বেশ কিছু রুটে শত শত যানবাহন চলাচল করছে। এসব যানবাহন বছরের পর বছর রুট পারমিট ছাড়াই চলাচল করছে বলে খোদ পুলিশ সদস্যরাই বলেছেন। ঢাকা শহর থেকে এগুলো চলাচলের বৈধ কোনো অনুমতি নেই বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রুট পারমিট না থাকলেও কিছু কিছু পরিবহন বিশেষ ব্যবস্থায়, আবার কোন কোনটি পুলিশ ও বিআরটিএ সদস্যদের মাসোয়ারা দিয়ে চলাচল করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা মিনি স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। এগুলোর বৈধ অনুমতি না থাকলেও বছরের পর বছর এভাবেই চলে আসছে।

রাজধানীর ট্যানারি মোড় থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত চলছে রুট পারমিটবিহীন বেশ কিছু লেগুনা। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই এসব যানবাহন চালাচ্ছে। ঝিগাতলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত চলাচলকারী লেগুনার কোনো রুটপারমিট নেই বলে জানা যায়। এদিকে ঝিগাতলা থেকে হাজারীবাগ পর্যন্ত অর্ধশত অটোরিকশা চলছে। ঝিগাতলাতে এসব অটোরিকশার একটি অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে।

সিদ্দিকুর রহমান নামের এক ভুক্তভোগী বলেছেন, সম্প্রতি যাত্রাবাড়ীর মৃধাবাড়ি এলাকায় তার মোটরসাইকেলকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে ধাক্কা মারে। এতে তিনি ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। গাড়িটি তিনি শনাক্ত করতে পারেননি। সিদ্দিকুর জানান, গাড়ির পেছনে নম্বর প্লেট থাকলে হয়তো গাড়িটি শনাক্ত করতে পারতেন। আইনি ব্যবস্থা নিতে পারতেন। ওই বিভাগের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এই গাড়িগুলোর গতি কিন্তু কম নয়। যে কারণে এসব গাড়ির দুর্ঘটনাও কম নয়। কিন্তু কোনো রেজিস্ট্র্রেশন না থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। একবার পালাতে পারলে আর ধরার কোনো সুযোগ নেই।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/760332