৭ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার, ১১:০৯

ডেঙ্গুতে দৈনিক গড়ে ৬২৭ আক্রান্ত মৃত্যু ৩ জনের বেশি

পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে

দেশে ডেঙ্গুতে দৈনিক গড়ে ৬২৭ জনের বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অপরদিকে দৈনিক গড়ে মৃত্যু হচ্ছে ৩ জনের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা চলতি মাসেই পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। যদিও ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয় আগস্ট থেকে এবং শেষ হয়ে থাকে সেপ্টেম্বরে। কিন্তু এ বছর গত এপ্রিল থেকেই শুরু হয়ে গেছে। অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণেই এপ্রিলে লার্ভা থেকে মশা বড় হয়ে বংশবৃদ্ধি শুরু করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিটি করপোরেশন আন্তরিকতার সাথে ব্যাপকভাবে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করলে ডেঙ্গু হয়তো এমন ভয়াবহ আকারে দেখা দিতে পারতোনা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গতকাল ৬ জুলাই পর্যন্ত ৫ দিনে দেশে ৩ হাজার ১৩৮ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এবং এই সময়ের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। অন্যদিকে জুন মাসের ৩০ দিনে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৯৫৬ জন অর্থাৎ জুলাই মাসের ৫ দিনেই জুন মাসের অর্ধেকেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছে। জুন মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জন। জুলাই মাসের সামনে আরো ২৫ দিন রয়ে গেছে এবং এই জুলাই মাসের বর্ষাতেও দেশে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবারও দেশে ৬৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ২ জন। সব মিলিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে দেশে। এটা স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব, এর বাইরেও অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে কিন্তু তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদফতরে যায় না। এদের বিশাল একটি অংশ চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর ঢাকা শহরের ৫৩ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিতে এসে ভর্তি হচ্ছে কেবল তাদেরই তালিকা তৈরি করে থাকে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জিন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কনট্রোল রুমের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা: মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে গতকাল যে ৬৬১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এর মধ্যে ৪৩৩ জনই রাজধানীতে আক্রান্ত হয়েছে এবং অবশিষ্ট ২২৮ জন রাজধানী ঢাকার বাইরে ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলা ও দেশের ৭ বিভাগে আক্রান্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: আহমদ পারভেজ জাবীন বলছেন, চলতি মাসের ৫ দিনে (১ থেকে ৬ জুলাই সকাল ৮টার আগ পর্যন্ত) যে পরিমাণ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে তা এলার্মিং। শিগগিরই বড় মশক নিধন অভিযান জোরে-শোরে না চালালে চলতি মাসেই হয়তো পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তিনি বলেন, অবশ্য ২০১৯ সালে এবারের চেয়ে অনেক বেশি ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল। ২০১৯ সালে সারা দেশে এক লাখ ৭৪২ মানুষ আক্রান্ত হয় ডেঙ্গুতে এবং ১২১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ডা: আহমদ পারভেজ জাবীন বলেন, যেভাবে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ছে তাতে চলতি জুলাই মাস শেষে ভয়াবহ হতে পারে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেঙ্গু ইউনিটের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, গত ৫ দিনেই যদি দেশে এতো বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারে তাহলে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে। অপরদিকে ডেঙ্গু সংক্রমণের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশে মৃত্যুও হতে শতাধিক। তবে সিটি করপোরেশন মশক নিধন অভিযান জোরদার করলে সংক্রমণ কমেও যেতে পারে। তিনি বলেন, শুধু ফগিং করলেই হবে না। পানিতে যে লার্ভা আছে সেগুলো ধ্বংস করতে লার্ভিসাইড করতে হবে। তাছাড়া ঢাকাবাসী তথা দেশবাসীকেও সতর্ক ও সচেতন করতে হবে এ বিষয়ে।

ডা: আহমেদ পারভেজ জাবীন, ঢাকা শহরের স্যুয়ারেজ সিস্টেমে রয়েছে অত্যন্ত অব্যবস্থাপনা। মিডিয়ায় বিশাল রিপোর্ট হলেই কেবল স্যুয়ারেজ সিস্টেমকে গতিশীল করতে ওয়াসার তোড়জোর শুরু হয়। মিডিয়া অন্য ব্যাপারে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও তাদের তৎপরতাও বন্ধ হয়ে যায়।

শজিমেক হাসপাতালে ১৬ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত চারজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা সবাই বগুড়ার বাসিন্দা। ঈদের ছুটিতে সবাই ঢাকা থেকে বগুড়ায় ফেরার পর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপপরিচালক ডা: আব্দুল ওয়াদুদ।

ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু সাদ ইসলামের মা কল্পনা খাতুন বলেন, ‘আমি ঢাকার মহাখালীতে থাকি। ঈদের ছুটিতে বগুড়ায় এসেছিলাম। ঈদের দিন দুপুর ১২টা থেকে আমার ছেলের জ্বর আসে। তিন দিন জ্বর ছিল। পরে টেস্ট করলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। অবস্থা খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করাইছি। শাজাহানপুরের বাসিন্দা হাসিবুর রহমান বলেন, ‘আমি চাঁদপুরে থাকি। ঈদের ছুটিতে বগুড়ায় আসার পথে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে এক রাত ছিলাম। বগুড়ায় এসে তীব্র জ্বর এবং শরীরে ব্যথা অনুভব করি। পরে টেস্টে ডেঙ্গু ধরা পড়ে।
শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা: আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, জুন মাস থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ১৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। বর্তমানে চারজন রোগী ভর্তি রয়েছে। বাকি ১২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তারা সবাই ঢাকা ফেরত ছিল।
তিনি আরো বলেন, ‘ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে কিট রয়েছে। চিকিৎসার জন্য আলাদা ডেঙ্গু কর্নার রেখেছি। আর ডেঙ্গু মোকাবেলায় মশার বংশ বিস্তার রোগে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং মশারি ব্যবহার বাড়াতে হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/760333