৬ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১:৫৮

রিজার্ভ আরও কমলো

ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি, সেই সঙ্গে বিদেশি ঋণের ছাড় ও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে রিজার্ভের অঙ্ক বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। যদিও এর আগে ডলার সংকটের পাশাপাশি রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে ভাটা পড়ায় রিজার্ভ ধারাবাহিক-ভাবে কমেছে। এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাজারভিত্তিক দরে ডলার বিক্রি ও আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) বিল পরিশোধের ফলে রিজার্ভ আরও কমেছে।

বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে গত সোমবার থেকে বাজারভিত্তিক দামে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে (আন্তঃব্যাংক) সর্বোচ্চ যে দামে ডলার বিক্রি করছে, সেই দামে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। মূলত সরকারি বিভিন্ন আমদানির দায় মেটাতেই এই ডলার বিক্রি। এর ফলে ইতিমধ্যেই টান পড়েছে রিজার্ভে।

জানা গেছে, গত সোমবার থেকে এভাবে ডলার বিক্রি করায় বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৩ হাজার ১১৯ কোটি ডলারে নেমেছে। এদিন ৫ কোটি ৪৫ লাখ ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে প্রতি ডলারের দাম ধরা হয়েছে ১০৮ টাকা ৮৫ পয়সা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত বুধবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে ও জুন মাসের আমদানি বিলের ১০৯ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।

করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যে স্থবিরতা এবং পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে।

এ সংকট ক্রমাগত বাড়ছে। সংকট কাটাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি থাকায় আমদানি ব্যয় কমেনি। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। এছাড়া পুরনো আমদানি দায় এখনো বকেয়া রয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাজারে রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে চাপ আরও বাড়ছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এ সূচকের উপর। মূলত আইএমএফ’র শর্ত মেনে ডলারের বাজারভিত্তিক দর কার্যকর করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর ফলে আমদানি ব্যয় আরও বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে মূল্যস্ফীতিতে। দীর্ঘদিনের ডলার সংকট ও টাকার অব্যাহত অবমূল্যায়নে দেশের অর্থনীতি আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র মতে, আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিকারী সংস্থা আকুর মে ও জুন মাসের আমদানি বিল বাবদ ১.০৯ বিলিয়ন ডলার বুধবার পরিশোধ করা হয়। এ অর্থ রিজার্ভ থেকে নেয়া হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত রিজার্ভ ছিল ৩১.২০ বিলিয়ন ডলার। আকুর বিল পরিশোধ করার পর এবং রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির ফলে রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়নের ঘরে নেমে এসেছে। অর্থাৎ রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০.১১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।

ওদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে (বিপিএম-৬) রিজার্ভ হিসাবায়ন করা হলে, ৬.৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের হিসাব থেকে বাদ দিতে হবে। সেই হিসাবে প্রকৃত রিজার্ভ নেমে দাঁড়াবে ২৩.৬১ বিলিয়ন ডলারে। প্রতি মাসে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার হিসাবে এ রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে বাজারে সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করায় রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি করা হয় ৭৬২ কোটি ডলার। আর বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়েছে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার।

মূলত রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ থেকে যে ডলার পাওয়া যায় তা দিয়েই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত করা হয়। আবার আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি কর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটক বা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন খাতে যে ব্যয় হয়, তার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়। এভাবে আয় ও ব্যয়ের পর যে ডলার থেকে যায় সেটাই রিজার্ভে যোগ হয়। আর বেশি খরচ হলে রিজার্ভ কমে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিগত এক বছর ধরে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তবে এর আগে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে আবার কমেছে। করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ রেকর্ড গড়ে ২০২১ সালের ২৪শে আগস্ট। ওইদিন রিজার্ভ ৪৮.০৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ৮০৪ কোটি ডলারে উঠে যায়। এরপর ডলার সংকটে গত বছর থেকে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে।

https://mzamin.com/news.php?news=63262