৬ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১:৫১

বিদেশী শিক্ষার্থীদের আস্থা হারাচ্ছে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ

বাংলাদেশের মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনায় ক্রমেই আগ্রহ কমছে বিদেশী শিক্ষার্থীদের। চলতি বছরেও দেখা গেছে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত কোটা বহাল থাকলেও এখনো অর্ধেক আসনই ফাঁকা রয়েছে। যদিও আগামী ৯ জুলাই পর্যন্ত বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর। কিন্তু এরপরও বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন পূরণ না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি।

অন্যদিকে দেশের মেডিক্যাল কলেজের পাঠ্যসূচি বা স্বাস্থ্য শিক্ষার সিলেবাস আধুনিক বা যুগোপযোগী নয় বলে মতামত জানিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। সংস্থাটির সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসানের অভিমত হচ্ছে দেশের মেডিক্যাল কলেজের পাঠসূচিতে পরিবর্তন বা উন্নতি না করে মেডিক্যাল শিক্ষার মানের উন্নতি নিশ্চিত করা যাবে না। পাঠ্যসূচি পরিবর্তনের পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নতি করার বিষয়েও তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়, দেশের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বিদেশী কোটায় ভর্তির জন্য এক হাজার ২৩৫ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। ফলে বিদেশী কোটায় অর্ধেকেরও বেশি আসন ফাঁকা থাকছে। সূত্রে আরো জানা গেছে, দেশের ৬৬টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে মোট আসন রয়েছে ৬ হাজার ২০৮টি। এই আসনগুলোর মধ্যে দেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন (দরিদ্র কোটাসহ) ৩ হাজার ৬৫৭টি। এ ছাড়াও বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন ২ হাজার ৫৫১টি। অধিদফতর জানিয়েছে, বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনগুলোতে ভর্তির জন্য এক হাজার ৬২ জন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তীতে আরো ১৭৩ জনকে নির্বাচিত করা হয়। সার্টিফিকেট সমতাকরণ শেষে এই ১৭৩ জনের তালিকা অধিদফতরের ওয়েবসাইটে ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। সূত্র মতে, এ বছর বিদেশী কোটায় আড়াই হাজারের বেশি আসন থাকলেও ভর্তির জন্য সব মিলিয়ে এক হাজার ২৩৫ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এর ফলে এবার বিদেশী কোটায় অর্ধেকেরও বেশি আসন ফাঁকাই থেকে যাবে। এই আসনগুলোতে পরবর্তীতে নীতিমালা অনুযায়ী দেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে।

বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির আসন খালি থাকার বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা: মুজতাহিদ মোহাম্মদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, গত ৩ জুলাই থেকে বেসরকারি মেডিক্যালে শিক্ষার্থী ভর্তিকার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু মেডিক্যাল কলেজে বিদেশী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়েছেন। আগামী ৯ জুলাই পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তিকার্যক্রম চলবে। কাজেই বিদেশী কোটায় কতগুলো আসন ফাঁকা থাকছে সেটি ভর্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না।

গত কয়েক বছরে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ক্রমেই কমছে এই সংখ্যা। চলতি বছরেও এই চিত্র আরো হতাশাজনক। চলতি বছরে বেসরকারি মেডিক্যালে ভর্তির জন্য সার্টিফিকেট সমতাকরণ শেষে ১৭৩ জন শিক্ষার্থীর তালিকা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এই তালিকায় ভারত, নেপাল, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভুটান, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার ১৭৩ জনকে ভর্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, ভারতের ৯৬ জন, পাকিস্তানের ৫, ভুটানের ৮, যুক্তরাষ্ট্রের ২, শ্রীলঙ্কার ১, রাশিয়ার ১ এবং নেপালের ৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন আয়োজিত ২২তম আন্তর্জাতিক কংগ্রেস ও বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান বলেন, দেশে মানসম্পন্ন মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত না হলে বিদেশী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করা যাবে না। তিনি আরো বলেন, মেডিক্যালের পাঠ্যক্রম আধুনিক ও যুগোপযোগী করা না হলে দেশের শিক্ষার্থীরাও চিকিংসা পেশায় পিছিয়ে পড়বে। একই সাথে মেডিক্যাল কলেজগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপরও জোর দেন তিনি। পাশাপাশি মানসম্পন্ন নয় এমন মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দিতে হবে। অধিবেশনে অংশ নিয়ে ২০১৬ সালের এক সমীক্ষার ফলাফল উদ্ধৃত করে অধ্যাপক মাহমুদ হাসান বলেন, সমীক্ষায় দেখা গেছে, বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের মান খারাপ। পাঠক্রমে পরিবর্তন এনে বা উন্নতি না করে মেডিক্যাল শিক্ষার মানের উন্নতি নিশ্চিত করা যাবে না। পাঠক্রম পরিবর্তনের পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নতি করতে হবে, পর্যাপ্ত জনবল দিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামণ রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিনের মতে বর্তমানে দেশে মেডিক্যাল শিক্ষা চলছে পুরনো ধাচের সিলেবাসে। তাই বিদেশীদের কাছে দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে মেডিক্যালের পাঠ্যসূচিকে আরো আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঢেলে সাজাতে হবে। অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে আমাদের এসব মেডিক্যাল কলেজ থেকে বহু কষ্টে পাস করার পরও আমাদের শিক্ষার্থীরাই চিকিৎসাক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বে পেশা চর্চা করতে পারবে না বা চর্চা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি কিংবা তাদের আকৃষ্ট করতে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ মালিকদের সংগঠন কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে এ বিষয়ে কথা বলতে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) সভাপতি এম এ মুবিন খানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় তিনি (এম এ মুবিন খান) বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/760043