৬ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১:৪৯

আলুর রেকর্ড উৎপাদনেও দাম ঊর্ধ্বমুখী

দেশে প্রধানতম সবজি গোলআলু। বেশ কিছু দিন হলো তা ঊর্ধ্বমুখী। ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। টিসিবির তথ্য মতে, গত বছর একই সময়ে আলুর কেজি ছিল ২৮-৩০ টাকা কেজি। গত বছর (২০২১-২২ অর্থবছর) আলু উৎপাদন হয়েছিল প্রায় এক কোটি ১ লাখ ৪৪ হাজার টন। এবার (২০২২-২৩) উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ টন। রেকর্ড উৎপাদন হওয়ার পর কেন বাড়ছে আলুর দাম? এ প্রশ্নের জবাব নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।

কৃষিপণ্য উৎপাদনের দায়িত্ব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের। দাম নির্ধারণ, বিপণন ব্যবস্থাপনা ও মার্কেট লিংকেজের দায়িত্ব কৃষি বিপণন অধিদফতরের। আলুর মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিপণন অধিদফতরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো: মুজিবুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশে পর্যাপ্ত আলু উৎপাদন হয়েছে। কোনো সঙ্কট নেই।ঈদকেন্দ্রিক ছুটিতে রয়েছেন ট্রাক ড্রাইভাররা। এ কারণে বাজারে আলুর সরবরাহ কম। ড্রাইভাররা তো বোঝেনই, বাড়িতে গেলে আর আসতে চায় না। আশা করি আগামী সপ্তাহ থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বাজারদর কমে আসবে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। সাথে রোহিঙ্গা ও বিদেশীসহ এ সংখ্যা ১৭ কোটি ৩০ লাখের মতো। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) বলছে, একজন মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৬০ গ্রাম করে আলু খাওয়ার কথা (সবজি হিসেবে); কিন্তু খাচ্ছেন ৭০ গ্রাম করে। সেই হিসাবে একজন মানুষ বছরে ২২ কেজি থেকে ২৬ কেজি পর্যন্ত আলু খাচ্ছেন। ১৭ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যা হিসাব করলে, দেশে বছরে সবজি হিসেবে আলুর চাহিদা প্রায় ৩৮ লাখ মেট্রিক টন থেকে ৪৪ লাখ টন। প্রতিদিন সবজি হিসেবে ১২ হাজার ১০৯ টন আলুর চাহিদা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশে আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ টনের মতো। মোট উৎপাদনের ২৫ শতাংশ বীজ সংগ্রহ ও অপচয় বাদ দিলে থাকে প্রায় ৮৪ লাখ টন। তবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) মোস্তাফিজুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশে বছরে প্রায় ৭০-৮০ লাখ মেট্রিক টন আলু সবজি/খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাকি আলুর মধ্যে কিছু রফতানি হয়, ফাইভ স্টার হোটেলে খাবারের নানা আইটেম ও চিপসসহ শিল্পের নানাভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে আলু। তিনি জানান, গত বছর প্রায় ৭৮ হাজার টন রফতানি হয়েছিল, এবার ৬৫ হাজার মেট্রিক টনের মতো রফতানি হয়েছে। আর বীজ হিসেবে বছরে দরকার হয় প্রায় সাত লাখ টন। সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, আলু উৎপাদনের পাশাপাশি চাহিদা বা ভোগের তথ্যের গড়মিল রয়েছে। তবে আলুর হঠাৎ উচ্চমূল্যের কারণ হিসেবে ভিন্ন তথ্য জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, শীতকালে সবজির উৎপাদন বেশি থাকে, বাজারে সরবরাহ বেশি হয়। বাজারে এখন চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য সবজির সরবরাহ কম। গ্রীষ্মকালে সাধারণত অন্যান্য সবজির সরবরাজ কমই থাকে। শীতকালীন সবজি শেষ হলে আলুর উপর চাপ বাড়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দেশে এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয় সাত-আট টাকা। এর সাথে যুক্ত হয় হিমাগার খরচ। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, আলুর সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। তবে গতবারের চেয়ে আলুর উৎপাদন ২০ শতাংশ কম হয়েছে। প্রথম দিকে চাষিরা আলু কোল্ডস্টোরেজে না রেখে নিজেরাই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেছিল। ওই সময় কৃষকরা বেশি লাভবান হয়েছিল। এখন যারা কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে যারা আলুর ব্যবসায়ী আছেন তারা দাম বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি জানান, বগুড়ায় সাদা আলু ৩০ টাকা এবং লাল আলু ৩১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেখান থেকেই বিভিন্ন স্থানে আলু যাচ্ছে। আলু বিক্রি না করে ধরে রাখলেই দাম বাড়ানো যায়, যারা আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা এই কৌশলেই দাম বৃদ্ধি করছে বলে মনে করেন তিনি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/760080