৬ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১:৪১

নির্বাচন সামনে রেখে ঢেলে সাজানো হচ্ছে পুলিশ প্রশাসন

মাঠ থেকে শীর্ষ পর্যায় তৈরি হচ্ছে তালিকা

নাছির উদ্দিন শোয়েব: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উপযুক্ত তালিকা। বড় ধরনের রদবদল করা হচ্ছে শীর্ষ পর্যায়ে। মাঠ পর্যায়ে আরও রদবদল করার প্রস্তুতি চলছে। সম্প্রতি উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পর্যায়ে বড় রদবদল করা হয়েছে। এছাড়াও নির্বাচনী বছরে পুলিশের বাজেটও বিগত বছরের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগের বাজেটে যা ছিল সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। সন্ত্রাস দমন, কৌশলগত গোয়েন্দা কার্যক্রম, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে এ বরাদ্দ করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা আছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচন পর্যন্ত প্রশাসনে বদলি বা অন্যকোনো সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। এ হিসেবে পুলিশ ও প্রশাসন তিন মাস তাদের অধীনে থাকে। ফলে সরকার বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি তার আগেই করে ফেলতে চাইছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে নির্বাচনের আগে সরকার তাদের মতো করে প্রশাসনে রদবদল আনছে বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। আর এর মাধ্যমে তারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চায় বলে অভিযোগ করা হয়।

সর্বশেষ গত ১৩ জুন পুলিশের ২২ জন এসপি এবং সাতজন ডিআইজিকে বদলি করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন এই ২৯ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলির তালিকায় আছেন রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ও পুলিশ সুপাররা। জাতীয় নির্বাচনের আগে সর্বশেষ পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে বড় ধরনের রদবদল হলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপনে ১৩ জেলার এসপিকে বদলি করে নতুন কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়। আর এসব জেলার এসপির মধ্যে চারজনকে নতুন জেলায় এসপি করা হয়েছে। বাকিদের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে পদায়ন করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী-চট্টগ্রাম রেঞ্জে নতুন ডিআইজি এবং রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে নতুন কমিশনার দিয়েছে সরকার।

এর আগে গত ১২ মে ১১৪ জন যুগ্ম-সচিবকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হয়। এরই প্রতিক্রিয়ায় এখন পুলিশের ৭২০ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি চাচ্ছেন বলে জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের একটি পদোন্নতি সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করেছে। শূন্যপদ না থাকলেও তারা প্রশাসনের মতোই পদোন্নতি চান। যুগ্ম সচিব পদেও বড় সংখ্যায় পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। ৭ জুন তিনজন সচিব ও একজন অতিরিক্তি সচিবকে বদলি করা হয়। বদলি করা হয় ১৪ জন যুগ্ম-সচিবকে। একই দিনে পুলিশের ১৭ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকেও বদলি করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনের সময় রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটন কমিশনার, জেলার এসপি, মেট্রোপলিটন জোনের উপকমিশনার (ডিসি), থানার ওসি, ফাঁড়ি ও তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বড় ভূমিকা থাকে। দেশে বর্তমানে ৮ রেঞ্জ, ৮ মেট্রোপলিটন, ৬৪ জেলা, ২৩৯ সার্কেল, ৬৬৪ থানা, ৫৪৯ ফাঁড়ি ও ২১৫টি তদন্তকেন্দ্র রয়েছে। নির্বাচনের মৌসুমে এসব ইউনিট দায়িত্বশীলদের ভূমিকা অনেক গুরুত্ব বহন করে। তাই কারা এসব ইউনিটে দায়িত্ব পালন করবেন, আগে থেকে তার ফিটলিস্ট তৈরি করা হচ্ছে।

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জন্য ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর জন্য ২৫ হাজার ৬৯৬ কোটি ৭৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগের বাজেটে যা ছিল ২২ হাজার ৫৭৭ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ১ জুন জাতীয় সংসদে ডিজিটাল প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় জানান, জননিরাপত্তা বিভাগের মূল কাজ হচ্ছে-সন্ত্রাস দমন, কৌশলগত গোয়েন্দা কার্যক্রম, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আইনশৃঙ্খলা ও জননিরপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সীমান্ত রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধ। সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্মিলিত কার্যক্রম গ্রহণ করা। এছাড়া যুদ্ধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ভিকটিম ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধান, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করে বিচারিক তদন্ত সম্পাদন এবং আইনানুগ প্রসিকিউশন দাখিল ও আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করা। তিনি বলেন, নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২০২৪) এ বাজেট বরাদ্দ থেকে বেশ কিছু প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। সেগুলো হচ্ছে-হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো, ঢাকা মহানগর পুলিশের এলাকায় ৯টি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিভাগের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ করা হবে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ, পাঁচটি র‌্যাব কমপ্লেক্স এবং একটি র‌্যাব ট্রেনিং স্কুল নির্মাণ করা হবে। র‌্যাব ফোর্সের জন্য সদর দফতর নির্মাণ ও র‌্যাবের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এ বাজেটের আওতায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জন্য সীমান্ত এলাকায় ৭৩টি আধুনিক বা কম্পোজিট বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট বা বিওপি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ পুলিশ ও প্রশাসনে রদবদল করে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিতে চাচ্ছে। সব কিছু নিয়ন্ত্রণে নেয়া শুরু করে দিয়েছে।

https://dailysangram.info/post/529122