৪ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:৩৬

সুনামগঞ্জে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

সুরমার পানি বিপৎসীমার ওপরে

সুনামগঞ্জে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত। নদীর কূল উপচে ছয় উপজেলার নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করছে পানি। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, শান্তিগঞ্জ ও মধ্যনগর উপজেলার কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা বলেছেন, পানি যতটা না এসেছে, তার চেয়ে বেশি আতঙ্কে ভুগছে মানুষ। পানি দেখে সবার চোখে গত বছরের বন্যার ভয়াবহতার চিত্র ভাসছে। এ জন্য অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন।

জানা গেছে, সুনামগঞ্জ শহরের সরকারি কলেজের আশ্রয়কেন্দ্রে ২৮টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। পাহাড়ি ঢলে দোয়ারাবাজারের সিলাই নদীর রাবার ড্যামের উজানের বামতীরের বাঁধ ভেঙে ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এই উপজেলার বড়বন্দ, মাইজখলা, শরীফপুর এলাকার ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সীমান্তের ওপারের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত এক দিনে তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় উদ্বেগজনক হারে পানি বাড়েনি। এই সময়ে সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিকেলে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার এবং ছাতকের সুরমা নদীর পানি ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, সুনামগঞ্জ শহরের সরকারি কলেজ এবং ছাতক ও বিশ্বম্ভরপুরের তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৭টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। পানি না বাড়লে বাড়ি ফিরে যাবেন তাঁরা। এদিকে টানা বর্ষণে জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের নজলুর নদীর বিকল্প সেতু পানিতে তলিয়ে গেছে। এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প বেইলি সেতুর সংযোগ সড়ক ডুবে গেছে। সেতুতেও পানি উঠেছে। সিলেটে নদী ও খাল-বিলের পানি বাড়ছেই। ডুবে যাচ্ছে গ্রামীণ সড়কও। সিলেটে ও গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গোয়াইনঘাটের হাওরাঞ্চলে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

পার্শ্ববর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বেশকিছু রাস্তা ডুবে গেছে। ইছাকলস ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি। অন্য উপজেলার রাস্তাগুলো রয়েছে ঝুঁকিতে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৩০৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতি মৌসুমে এক দিনে রেকর্ড বৃষ্টি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সিলেটের সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে বেড়েছে। কুশিয়ার নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। সব পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে সিলেট সদর উপজেলার আখালিয়া, ব্রাহ্মণশাসন, টিলারগাঁও, খাদিমনগর, আখালিয়া বড়গুল এলাকার টিলাসহ পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ঘর বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে কয়েকশ পরিবার। টানা বৃষ্টির কারণে টিলার পাদদেশে বসবাসকারীদের প্রাণহানির ঝুঁকি বেড়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, টিলার পাদদেশে থাকা লোকদের সরে যেতে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জে বৃষ্টিপাত কমলেও নদনদীর পানি বাড়ছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত কালনি-কুশিয়ারার পানি আজমিরীগঞ্জে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া খোয়াই, ধলেশ্বরীসহ জেলার সব নদীর পানি বাড়ছে। নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার উব্দাখালী নদীসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। উব্দাখালীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কলমাকান্দা উপজেলায় রোদের দেখা মেলে। এরপর থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মহাদেও, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশব্রী ও গণেশ্বরী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে সব গ্রামের খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ কুড়িগ্রামের প্রধান নদনদীর পানি ক্রমশ বাড়ছে। জেলা শহরের কয়েকটি নিম্নাঞ্চলে পানি উঠে ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষের মাঝে আবারও পানিবন্দির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসক সাইদুল আরিফ জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। টানা ভারী বর্ষণে পঞ্চগড়ে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভোগে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই শতাধিক পরিবার।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মণ্ডল জানান, ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে পানিবন্দি ও নদীভাঙনের শিকার পরিবারদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুর-এ আলম জানান, তিস্তায় পানি বাড়লেও সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ভাঙন অব্যাহত। কাপাসিয়া ইউনিয়নে কমপক্ষে ১০০ পরিবার পানিবন্দি এবং ৫০টি পরিবার ভাঙনের মুখে পড়ায় বসতঘর সরিয়ে নিয়েছে।

https://samakal.com/whole-country/article/2307181303