৪ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:১৫

একদিনে ৪ জনের মৃত্যু

৬ মাসে ৯ হাজার ছাড়িয়েছে ডেঙ্গু রোগী

লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। ঢাকার বাইরে আক্রান্ত বেশি। ডেঙ্গু মৌসুম আসার আগেই এবছরে ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪৩৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এ নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩১ জনে। ৬ মাসে ৯ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তাদের হিসাব স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই।

আগামী মাসে রোগী আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে গতকাল বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৩৬ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৭৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ২৬২ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ৪৩৬ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩১ জনে।

ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ২২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫০৯ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৯ হাজার ১৯৩ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ হাজার ৬০৬ জন। অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাই মাসে শনাক্ত ১ হাজার ২১৫ জন এবং মারা গেছেন ৯ জন।
কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার এ ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, এ বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। গত পাঁচ বছরে ডেঙ্গু রোগীর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এ বছরের জুন পর্যন্ত মোট রোগী গত পাঁচ বছরের হিসাব টপকে বেশ বিপজ্জনক মাত্রায় অবস্থান করছে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকার রোগী প্রায় ৮৮ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরের ১২ শতাংশ। আমাদের গবেষণাগারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও এডিস মশার ঘনত্বের তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটারে মাল্টিভেরিয়েন্ট অ্যানালিসিস করে ফোরকাস্টিং মডেল তৈরি করে ডেঙ্গু পরিস্থিতির পূর্বাভাস দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এর আগে আমরা যেসব পূর্বাভাস দিয়েছি তার প্রতিটি মিলে গেছে।

আগামী মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। বর্তমান সময়ের মডেল বলছে, ঈদ-পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা হঠাৎ অনেক বেড়ে যাবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটবে। ঈদের ছুটির কারণে অফিস-আদালত সব বন্ধ, বাসা ছেড়ে নিজ নিজ জেলায় বেড়াতে যাওয়ার কারণে অনেক বাসাবাড়িও বন্ধ রয়েছে।

এ সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে অসংখ্য পরিত্যক্ত পাত্রে পানি জমা হয়েছে, যার মধ্যে এডিস মশা ডিম পাড়বে। এই ডিমগুলো ফুটে লার্ভা, পিউপা ও উড়ন্ত মশায় পরিণত হবে। ঈদের ছুটিতে ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে মশার নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম কম থাকায় মশার ঘনত্ব বেড়ে যাবে। এর ফলে ঈদ-পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে বলে আমরা মনে করছি।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় আমরা এর আগে এডিস মশার অস্তিত্ব পেয়েছি। বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন জেলায়ও ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন বাড়বে এবং ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে। এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঠেকাতে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আর এই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনসাধারণকেও সরাসরি সম্পৃক্ত হতে হবে।

হটস্পট এলাকায় জনসচেতনতা ও জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। এলাকায় মাইকিং, পোস্টারিং ও লিফলেট বিতরণ করে জনগণকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে হবে এবং তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। এই কাজে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি সেবামূলক সামাজিক সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

হটস্পট এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সঠিকভাবে করতে পারলে ডেঙ্গু সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব। অন্যথায় সংক্রমণ বাড়তেই থাকবে। বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনকে নিজ নিজ জেলার ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এই কাজে যন্ত্রপাতি, কীটনাশক ও জনবলের স্বল্পতা থাকলে তা পূরণ করে এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। ডেঙ্গুর সংক্রমণের সময়ে একে অন্যকে দোষারোপ না করে যার যার অবস্থান থেকে নিজের দায়িত্বটুকু সূচারুরূপে পালন করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখা সম্ভব।

https://mzamin.com/news.php?news=62917